মুর্শিদাবাদে অধীরের দুর্গ ভেঙে চুরমার
মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের দুর্গ ভেঙে চুরমার। ‘অধীর মিথ’ কাজ করল না। একটি আসনও পায়নি। এমনকী, খোদ বহরমপুর কেন্দ্রেও কংগ্রেস তৃতীয়। জোটকে হেলায় হারিয়ে ১৮টি আসনে জিতে রেকর্ড গড়ল তৃণমূল। বহরমপুর, লালগোলা, সূতি, ফরাক্কা, কান্দির মতো আসনগুলিতে বাম জামানাতেও হাত শিবিরকে টলানো যায়নি। কিন্তু এবার সেগুলি তারা ধরে রাখতে পারেনি। নিজের জেলায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী হেলিকপ্টার চড়ে প্রচার করেছিলেন। কিন্তু তারপরও তিনি চূড়ান্ত ব্যর্থ।
কংগ্রেস কর্মীদের একাংশের দাবি, নেতাদের অতি আত্মবিশ্বাসের জন্যই ভরাডুবি হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। দলে স্তাবকদের গুরুত্ব বাড়ছিল। তারই খেসারত দলকে দিতে হয়েছে।
বহরমপুরের কংগ্রেস প্রার্থী মনোজ চক্রবর্তী বলেন, মানুষের রায় মেনে নিতে হবে। কেন এমন ফল হল, তা পরে পর্যালোচনা করা হবে। তৃণমূল প্রার্থী রবিউল আলম চৌধুরী বলেন, এই জেলার কংগ্রেসের শীর্ষনেতার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক রয়েছে। সেটা মানুষের কাছে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। মানুষ দিদির উন্নয়ন দেখেই আমাদের উপর ভরসা রেখেছেন।
কংগ্রেসের পাশাপাশি এই জেলায় সিপিএমের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে গিয়েছে। তারাও ডোমকল, জলঙ্গি ও ভগবানগোলা, নবগ্রামের মতো বিধানসভা কেন্দ্রে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। শুধুমাত্র বহরমপুর এবং মুর্শিদাবাদ বিধানসভা জিতে কোনওরকমে মুখ রক্ষা করেছে বিজেপি। তবে তারা কয়েকটি আসনে দ্বিতীয় হয়েছে। দলবদলু নেতারাও সফল হতে পারেননি। জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনিও বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছেন। কান্দির দলবদলু নেতা গৌতম রায়ও হেরেছেন।
ভগবানগোলার তৃণমূলের ইদ্রিশ আলি, রানিনগরের সৌমিক হোসেন, রেজিনগরের রবিউল আলম চৌধুরী, লালগোলার মহম্মদ আলি, নওদার সাহিনা মমতাজ খান, রঘুনাথগঞ্জের আখরুজ্জামান, সূতির ইমানি বিশ্বাস বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। রেজিনগরের তৃণমূল প্রার্থী ৬৮হাজার ৬৮৮ভোটে জয়ী হয়েছেন। ভগবানগোলায় তৃণমূল এক লক্ষ পাঁচ হাজার ১৮ভোটে জয়ী হয়েছে। নওদায় কংগ্রেসের ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীকে হারিয়ে তৃণমূল ৭৪হাজার ২২২ভোটে জয়ী হয়েছে। সাগরদিঘিতে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত সাহা ৫০হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন। জলঙ্গিতে তৃণমূল ৬৯হাজার ৬১৬ভোটে জয়ী হয়েছেন। রানিনগরে ৭৯হাজার ৪২৮ভোটে জয়ী হয়েছেন সৌমিক। কান্দিতে অপূর্ব সরকার ৩৭হাজার ৬৬৯ভোটে জয়ী হয়েছেন। ভরতপুরে হুমায়ুন কবীর ৪৩ হাজার ৮৩ হাজার ভোট ও সূতিতে ইমানি বিশ্বাস ৭০হাজার ৭০৪ ভোটে জয়ী হয়েছেন। রঘুনাথগঞ্জে তৃণমূলের আখরুজ্জামান ৯৮হাজার ৫২ ভোটে জয়ী হয়েছেন। বহরমপুর ও মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে বিজেপি জয়ী হয়েছে। জেলার বাসিন্দারা বলেন, বিগত লোকসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের তেমন সংগঠনই ছিল না। ২০১৬সালের নির্বাচনে তারা মাত্র চারটি আসনে জয়ী হয়েছিল। সেখান থেকে এক ধাক্কায় তারা এবার ২২টি আসনের মধ্যে ১৮টি পেয়েছে। জেলার প্রতিটি প্রান্তে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে রাস্তা তৈরি হয়েছে। সেখানেও পানীয় জল পৌঁছে গিয়েছে। এছাড়া কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্যসাথীর মতো প্রকল্পগুলি থেকে জেলার বহু মানুষ উপকৃত হয়েছেন। এনআরসির বিরোধিতা করে লাগাতার আন্দোলনের ফসল তৃণমূল ঘরে তুলেছে। সেই কারণেই ফরাক্কা, লালগোলা বা রানিনগরের মতো বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে তৃণমূল খুব সহজে জয়লাভ করেছে।