অবিভক্ত মেদিনীপুরে প্রায় নিশ্চিহ্ন গেরুয়া শিবির
দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে সবুজ ঝড়ের দাপটে উড়ে গেল বিজেপি। তিন জেলায় ৩৫টির মধ্যে সিংহভাগ আসনে জয়ী হলেন জোড়াফুলের প্রার্থীরা। প্রধানমন্ত্রী থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ বিজেপির একঝাঁক নেতা বারেবারে এসে প্রচার চালিয়েছেন। কিন্তু, দুই মেদিনীপুর ও জঙ্গলমহলবাসী তাঁদের সেই ডাকে সাড়া দেননি। রবিবার সকাল থেকেই তৃণমূল প্রার্থীরা লিড নিতে থাকেন। তারপর সময় যত গড়িয়েছে, তৃণমূলের জয়ের ভিত তত মজবুত হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ১৬টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ১১টিতে জয়ী হয়েছে। গতবার হাতছাড়া হওয়া তমলুক, পাঁশকুড়া পূর্ব আসনেও জয় হাসিল করেছে তৃণমূল। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১৫টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে জয়ী হয়েছে শাসক দল। ঘাটাল ও খড়্গপুর সদর বাদে সবক’টি আসনেই জয় পেয়েছে জোড়াফুল শিবির। সবচেয়ে চমকপ্রদ রেজাল্ট হয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলায়। গত লোকসভা ভোটে বিজেপি ঝাড়গ্রামে বিপুল জয় পেলেও তিন বছরের মাথায় ম্লান হয়ে গেল গেরুয়া শিবির। জঙ্গলমহলে চারটি আসনেই জয় হাসিল করেছে তৃণমূল।
দুই মেদিনীপুরে বেশ কয়েকটি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। কখনও তৃণমূল আবার কখনও বিজেপি এগিয়েছে। তবে, বেশিরভাগ আসনে তৃণমূল প্রার্থীরাই শেষ হাসি হেসেছেন। তমলুক বিধানসভায় রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর সৌমেন মহাপাত্র ৮১৭ভোটে জয়ী হয়েছেন। গোড়া থেকেই লিড নেওয়া চণ্ডীপুর বিধানসভার তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সোহম প্রায় ১৩ হাজার ৬৩৫ভোটে জয়ী হয়েছেন। নন্দকুমারের প্রার্থী সুকুমার দে প্রথম রাউন্ড থেকে লিড নিয়ে ৫২১৬ ভোটে জয়ী হয়েছেন। পাঁশকুড়া পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী ফিরোজা বিবি ৮৯০৩ ভোটে জয়ী হয়েছেন। পাঁশকুড়া পূর্ব আসনে তৃণমূল প্রার্থী বিপ্লব রায়চৌধুরী ১১ হাজার ৭০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। খেজুরি বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী শান্তনু প্রামাণিক ১৭ হাজার ৮৩৯ ভোটে জয়ী হয়েছেন।
কাঁথি উত্তর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী সুমিতা সিনহা ৯৫৬১ ভোটে জয়ী হয়েছেন। কাঁথি দক্ষিণ কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী অনুপকুমার দাস ১০ হাজার ১৪৮ ভোটে জয়ী হয়েছেন। এগরা বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থী তরুণকুমার মাইতি ১৮ হাজার ৪৫১ ভোটে জয়ী হয়েছেন। পটাশপুর বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিক ১৫ হাজার ৯০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। ভগবানপুর বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ মাইতি ২৭ হাজার ৫৪৯ ভোট জয়ী হয়েছেন। মহিষাদল কেন্দ্রে তৃণমূল (Trinamool) প্রার্থী তিলক চক্রবর্তী ২১৩৩ ভোটে জয়ী হয়েছেন। হলদিয়া বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী তাপসী মণ্ডল ১৪ হাজার ৮২৬ ভোটে জিতেছেন। নন্দীগ্রাম বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী ১৭৩৬ ভোটে জয়ী। গণনা চলাকালীন নন্দীগ্রামে দফায় দফায় সার্ভার বিভ্রাট হওয়ার ঘটনা ঘটে।
মেদিনীপুর কেন্দ্রে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন তৃণমূলের সেলিব্রিটি প্রার্থী জুন মালিয়া। ঘাটালে বিজেপির শীতল কপাট ও খড়্গপুর সদর কেন্দ্রে বিজেপির (BJP) সেলিব্রিটি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায় জয়ী হয়েছেন। ডেবরায় প্রাক্তন আইপিএস তৃণমূল প্রার্থী হুমায়ুন কবীর, কেশিয়াড়িতে তৃণমূলের পরেশচন্দ্র মুর্মু, গড়বেতায় তৃণমূলের উত্তরা সিং জয়ী হয়েছেন। দলবদলু দুই প্রার্থী সবংয়ের অমূল্য মাইতি ও নারায়ণগড়ের রমাপ্রসাদ গিরি পরাজিত হয়েছেন। সবংয়ে মানস ভুঁইয়া, নারায়ণগড়ে সূর্যকান্ত অট্ট, পিংলায় অজিত মাইতি জয়ী হয়েছেন। দাসপুর ও চন্দ্রকোণাতেও জিতেছে তৃণমূল। ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে তৃণমূলের বীরবাহা হাঁসদা ৩৭ হাজার ৯৯৬ ভোটে জয়ী হয়েছেন। বিনপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের দেবনাথ হাঁসদা ৩৯ হাজার ৪৯৪ ভোট, গোপীবল্লভপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের খগেন্দ্রনাথ মাহাত ২৩ হাজার ৭৬৮ ভোটে এবং নয়াগ্রামে তৃণমূলের দুলাল মুর্মু ২২ হাজার ৬১৯ ভোটে জয়ী হয়েছেন।