রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

বিভাজন রুখে সবুজ ঝড়ে মাতল হুগলি

May 3, 2021 | 2 min read

 ১৮টির মধ্যে ১৪টি আসন জিতে হুগলিতে আধিপত্য বজায় রাখল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে শুধু ১৪টি আসনে জয় দিয়ে এই জেলায় তৃণমূলের আধিপত্যকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। রাজনৈতিক মহলের দাবি, এই জয়ের সঙ্গে ধরতে হবে সিঙ্গুরের সম্মান রক্ষার লড়াইয়ের সাফল্য। একইসঙ্গে বাম ও কংগ্রেসের কাছ থেকে দু’টি আসন ছিনিয়ে নেওয়া এবং অতি অবশ্যই বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক ও ভাষাভিত্তিক রাজনীতিকে প্রতিরোধ করার সাফল্যকেও যোগ করতে হবে। ফলে দলের দখলে থাকা চারটি আসন প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হাতছাড়া হলেও সার্বিক রাজনীতির বিচারে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে তৃণমূলের। এমনটাই দাবি ওয়াকিবহাল মহলের।


তাৎপর্যপূর্ণভাবে, বিজেপি’র বাংলা রাজনীতির অন্যতম মুখ সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে হারের মুখ দেখতে হয়েছে। দুই দলবদলু প্রবীর ঘোষাল ও রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যও বিপুল ভোটে হেরেছেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা প্রবীণ আব্দুল মান্নান পরাজিত হয়েছেন। অন্যদিকে, তৃণমূলের চার প্রাক্তন মন্ত্রী জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। ইন্দ্রনীল সেন, তপন দাশগুপ্ত, অসীমা পাত্র ও বেচারাম মান্না বিজেপি’র যাবতীয় ছক উলটে দিয়ে দাপুটে জয় ছিনিয়ে এনেছেন।


এদিন সপ্তম রাউন্ডের গণনার পর থেকেই হুগলির সদর মহকুমা, শ্রীরামপুর ও চন্দননগর মহকুমার গেরুয়া নেতারা ‘গা ঢাকা’ দিতে শুরু করেন। সকালের উত্তেজনা, গেরুয়া উত্তরীয়ের বাড়বাড়ন্ত আচমকাই গায়েব হতে শুরু করে। ১৮-তে ১৮ পাব বলে যাঁরা দাবি করেছিলেন, বিজেপি’র সেই নেতাদের দুপুরের পর আর দেখাই যায়নি। উল্টে দুপুরের পর সবুজ ঝড় বইতে শুরু করে গোটা জেলায়। যার ধাক্কায় উত্তরপাড়া থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত বিজেপি’র যাবতীয় আশা নিরাশায় পরিণত হয়। দিনের শেষে খাবি খেতে থাকা বিজেপিকে আরামবাগের চারটি আসন সামান্য অক্সিজেন দিয়েছে।

বিজেপি’র প্রাক্তন রাজ্যনেতা স্বপন পাল বলেন, আমাদের সমীক্ষা মেলেনি। মানুষের মন বুঝতে ভুল হয়েছে, এটাই বাস্তব। জেলা থেকে বাম, কংগ্রেসের মুছে যাওয়া প্রসঙ্গে সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ ও কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ফলাফল বিশ্লেষণ করা হবে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, মানুষের রায় শুধু আমাদের পক্ষে গিয়েছে বলেই নয়, মানুষের ভাবনার জন্য তাঁদের আলাদা করে সম্মান প্রাপ্য। তৃণমূলের আরেক নেতা সুবীর মুখোপাধ্যায় দলনেত্রীর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে পেরে খুশি। তিনি বলেন, দলনেত্রী চণ্ডীতলা, জাঙ্গিপাড়া ও তারকেশ্বর বিধানসভা আসনের জন্য আমাকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছিলেন। লড়াই কঠিন ছিল, কিন্তু ‘দিদি’র ভাবমূর্তির জোরে তিনটি আসনেই জয় এসেছে। উল্লেখ্য, চণ্ডীতলায় সিপিএমের ওজনদার প্রার্থী মহম্মদ সেলিম ও বিজেপি’র তারকা প্রার্থী যশ দাশগুপ্ত ধরাশায়ী হয়েছেন তৃণমূলের স্বাতী খন্দকারের কাছে।
নানা কারণে হুগলির নির্বাচন এবার রাজ্য-রাজনীতির চর্চায় ছিল। শেষ পর্যন্ত কৃষি ও শিল্প উভয় বলয়ই ঘাসফুলের ঝুলি ভরে দিয়েছে। তৃণমূলের কাছে সিঙ্গুরের ভোট ছিল সম্মানের লড়াই। সদ্য প্রাক্তন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য দলের টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে গিয়ে জল আরও ঘোলা করে তুলেছিলেন।

তৃণমূল নেত্রীর বিশ্বস্ত সৈনিক কৃষকনেতা বেচারাম মান্না বিপুল ভোটে তাঁকে হারিয়েছেন। একইভাবে দলবদলু প্রবীর ঘোষালকে সপাট জবাব দিয়েছে উত্তরপাড়া। আনকোরা প্রার্থী অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক তাঁকে পর্যুদস্ত করেছেন। প্রথমবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চাঁপদানি আসন আব্দুল মান্নানের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন তৃণমূলের অরিন্দম গুঁইন। প্রবীণ নেত্রী রত্না দে নাগ পাণ্ডুয়া ছিনিয়ে নিয়েছেন সিপিএমের হাত থেকে। লকেট চট্টোপাধ্যায়কে চুঁচুড়ায় হারিয়েছেন অসিত মজুমদার। অন্যদিকে, বলাগড়ে তৃণমূলকে সাফল্য এনে দিয়েছেন সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। প্রাক্তন সাংসদ ও সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্তকে তারকেশ্বরে হারিয়েছেন রামেন্দু সিংহ রায়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#tmc, #hooghly, #Trinamool Congress, #West Bengal Elections 2021

আরো দেখুন