একে করোনা, দোসর নির্বাচন – রায় দিবসে ভরসা সোশ্যাল মিডিয়ায়ই
রবিবার, ২ মে-র সকাল। বিশপ লেফ্রয় রোড। বাঙালির চিরকালীন আইকন সত্যজিৎ রায়ের বাস ভবন। এদিন ছিল তাঁর জন্মদিন। শতবর্ষ পার করলেন এই প্রবাদপ্রতিম পরিচালক। কিন্তু জন্মদিনে ‘সত্যজিৎ রায় ধরণী’র চিত্রটা অন্যান্য বারের তুলনায় এবারে ছিল একদম অন্যরকম। রাস্তা ফাঁকা। ইতিউতি পথ চলতি মানুষের আনাগোনা। বাড়ির প্রবেশ দ্বারে কোনও এক গুণমুগ্ধ মালা দিয়ে গিয়েছেন। ব্যস এতটুকুই! নেই সংবাদমাধ্যমের ভিড়। স্থানীয় খাবারের দোকানের অবাঙালি কর্তা বললেন, ‘আজকে তো ওঁর জন্মদিন। অন্যান্য বছর এতক্ষণে রাস্তায় ভিড় হয়ে যায়। এ বছর ছবিটা অন্য রকম।’ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে রাজ্যের পরিস্থিতি বেগতিক। ফলে এই বিশেষ দিনে কিংবদন্তি পরিচালকের জন্মদিন যেন কিছুটা অনাড়ম্বরেই পালিত হল।
তাছাড়া রবিবার ছিল বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের দিন। শত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও এদিন সকালেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় সত্যজিৎকে শ্রদ্ধা জানাতে ভোলেননি। তিনি ট্যুইটারে লিখেছেন, ‘মহারাজা তোমারে সেলাম…সত্যজিৎ রায়ের জন্ম শতবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য, কিংবদন্তি পরিচালক, লেখক, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার, চিত্রশিল্পী। তিনি শুধু বাংলার নন, পুরো ভারত তথা বিশ্বের গর্ব। বিশ্ববাসীর কাছে তিনি একজন অনুপ্রেরণা।’ বাংলার বিশিষ্টজনেরা এদিন পরিচালকে স্মরণ করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। নেট নাগরিকরাও পিছিয়ে ছিলেন না। দিনভর তাঁরা নিজের মতো করে প্রিয় পরিচালককে স্মরণ করেছেন। কারও আঁকা সত্যজিতের প্রতিকৃতি, কার্টুন, সিনেমার চরিত্রদের নিয়ে তৈরি পোস্টার বা কারও বাজানো সত্যজিৎ সৃষ্ট সুর ভাইরাল হতে বেশি সময় নেয়নি।
গত বছর মে মাসে লকডাউনের জন্য এই বিশেষ দিনটিকে সেইভাবে পালন করতে পারেননি অনেকেই। এ বছরও একইভাবে বাধ সাধল করোনা। পরিচালকের পুত্রবধূ ললিতা রায় বললেন, ‘গত বছর আমরা তিনজনেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। তবে, এবার আমাদের ভ্যাকসিন নেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তারপরেও চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে সতর্ক থাকতেই হচ্ছে। অত্যন্ত খারাপ লাগলেও আমরা নিরুপায়।’ এদিন শরীর ভালো ছিল না সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায়ের। তাঁর জ্বর হয়েছে। জানা গেল, ‘রে সোসাইটি’র তরফেও এই বিশেষ দিনটিকে পালন করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি যতদিন না অনুকূল হচ্ছে, ততদিন রায় পরিবার কোনওরকম পরিকল্পনা করবে না।
এদিকে, আর্টিস্ট ফোরামের তরফে শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘এই বিশেষ দিনে অনেক কিছুই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আমাদের অফিসে এখন ছ’জনের মধ্যে পাঁচজন করোনায় আক্রান্ত। তাই অফিস বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রির একাধিক শিল্পীর করোনা হয়েছে। পরিস্থিতি ঠিক না হলে কী হবে বুঝতে পারছি না।’ কথা হচ্ছিল বর্ষীয়ান অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকের সঙ্গে। ‘যেভাবে জাঁকজমকের সঙ্গে মানিকবাবুর জন্মশতবার্ষিকী পালনের কথা ছিল, সেটা তো করা গেল না। খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু করোনাকেও তো এখন অবজ্ঞা করা যাবে না। আমার বিশ্বাস, দেরি করে হলেও তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালন হবেই,’ বলছিলেন সত্যজিৎ পরিচালিত ‘শাখা প্রশাখা’ ছবির প্রতাপ।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন সর্বাগ্রে আগ্রাধিকার পাবে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আবার কোনও নির্দিষ্ট দিন উদ্যাপনের মধ্যে সত্যজিৎ রায়কে বেঁধে রাখতে চাইছেন না অনেকেই। কারণ তিনি তো চিরন্তন।