বারাসত, বসিরহাটে সবুজ ঝড়
বারাসত ও বসিরহাট মহকুমায় তৃণমূলের ঝড়ে উড়ে গেল বিরোধীরা। সর্বত্র জোড়া ফুলের জয়জয়কার। প্রতিটি কেন্দ্রেই বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। আইএসএফকে সামনে রেখে বিরোধীদের ভোট কাটার অঙ্ক মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রতিটি এলাকায়। এদিন ফলাফলের ট্রেন্ড প্রকাশ্যে আসার পর দুপুর থেকে বিজয় উল্লাসে ভেসে যান তৃণমূল কর্মীরা। পাড়ায় পাড়ায় বক্স বাজিয়ে অকাল হোলির আনন্দে মেতে ওঠেন আট থেকে আশি। তবে এই সবুজ ঝড়ের মধ্যেও বনগাঁ মহকুমার ফলাফল শাসক দলের গলার কাঁটা হয়ে রইল। এখানকার চারটি আসনে বিজেপি প্রার্থীরা ভালোভাবেই এগিয়ে রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা ইস্যুতে জমায়েত নিয়ে কমিশনের কড়া নির্দেশিকার জেরে এদিন বারাসত, বসিরহাট ও বনগাঁর বিভিন্ন গণনা কেন্দ্রের বাইরে ভিড় আগের নির্বাচনের মতো ছিল না। কোনও দলের ক্যাম্প অফিস সেইভাবে নজরে আসেনি। বারাসত গণনাকেন্দ্রের বাইরে সকাল ১১টা পর্যন্ত শতাধিক মানুষকেও দেখা যায়নি। কিন্তু এরপর বেলা যত গড়াতে থাকে, ততই সবুজ আবিরে মাখামাখি হয়ে তৃণমূল কর্মীরা ভিড় বাড়াতে থাকেন। যদিও এদিন সকাল ৬টা থেকে বারাসত গণনা কেন্দ্র লাগোয়া হলে সপার্ষদ হাজির ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বেলা যত গড়িয়েছে জ্যোতিপ্রিয়বাবুর মুখের হাসি ততই চওড়া হয়েছে।
হাবড়া কেন্দ্রে লোকসভা ভোটে বিপুল ভোটে পিছিয়ে ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। কিন্তু এদিন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ৩ হাজার ৭১১ ভোটে জয়লাভ করেন তিনি। অন্যদিকে, আমডাঙায় রফিকুর রহমান ২৫ হাজার ৩৮২ ভোটে, অশোকনগরের নারায়ণ গোস্বামী ২৩ হাজার ৫৮৫ ভোটে, মধ্যমগ্রামে রথীন ঘোষ ৪৬ হাজার ৫৯৯, দেগঙ্গায় রহিমা মণ্ডল ৩২ হাজার ২৩২, বারাসতে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী ২৩ হাজার ৪৮৮ ভোটে জয়ী হয়েছেন।
বসিরহাট মহকুমার সবকটি আসনে তৃণমূল প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। গণনা শেষে দেখা গিয়েছে বসিরহাট উত্তরে রফিকুল ইসলাম মণ্ডল ৮৮ হাজার ৮৭৮ ভোটে, হাড়োয়ায় মহম্মদ নুরুল ইসলাম ৮০ হাজার ৪১৭, মিনাখাঁয় ঊষারানি মণ্ডল ৫৫ হাজার ৬৩২, বাদুড়িয়ায় আব্দুল রহিম কাজী ৫৬ হাজার ৯৩০ ভোটে, হিঙ্গলগঞ্জে দেবেশ মণ্ডল ২৪ হাজার ৭০৪ ভোটে, সন্দেশখালিতে সুকুমার মাহাত ৩৯ হাজার ৫৫৪ ভোটে, বসিরহাট দক্ষিণে সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় ২৪ হাজার ৭৩২ ভোটে, স্বরূপনগরে বীণা মণ্ডল ৫৪ হাজার ৭৭২ ভোটে জয়লাভ করেছেন।
কিন্তু বনগাঁ মহকুমার চারটি আসনেই বিজেপি প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। বনগাঁ উত্তরে অশোক কীর্তনিয়া ১০ হাজার ২৭৩, বনগাঁ দক্ষিণে স্বপন মজুমদার ১ হাজার ৮৭৯, গাইঘাটায় সুব্রত ঠাকুর ৯ হাজার ৬০৩ ও বাগদায় বিশ্বজিৎ দাস ৯ হাজার ৯০৭ ভোটে জয়লাভ করেছেন। লোকসভা ভোটেও এই চার কেন্দ্রে বিপুল ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। তুলনায় ব্যবধান এবার অনেকটাই কমেছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, বিজেপিকে রুখতে মানুষ তৃণমূলকে বিকল্প ভেবেছে। তীব্র মেরুকরণ ও সংখ্যালঘু মানুষের নিরাপত্তার ইস্যুতে ভোট হয়েছে। বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা বারাসতের প্রার্থী শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, এই ফলাফল আমাদের কাছে আশ্চর্যের। মানুষ তৃণমূলের উপর আস্থা রেখেছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা হাবড়ার জয়ী প্রার্থী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, বাংলা ঘরের মেয়েকেই জিতিয়েছেন। একজন মহিলাকে এভাবে চরম অপমান বাংলার মানুষ মেনে নেননি। নোংরা ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইকে মানুষ সমর্থন করেছে। এই জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলার মানুষের জয়।