দিনাজপুরে মমতা ঝড়ে উড়ে গেল বাম-কং-বিজেপি
মমতা-ঝড়ে বিধ্বস্ত উত্তর দিনাজপুর (Uttar Dinajpur) জেলার বাম-কংগ্রেস ঘাঁটি। জেলার ন’টি আসনের মধ্যে সাতটিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress)। গত লোকসভায় সেখানে বিজেপি মাথাচাড়া দিলেও এবার তারাও কুপোকাত। মাত্র দু’টি আসনে জয়ী হয়েছে গেরুয়া শিবির। বাম-কংগ্রেস তাদের দখলে থাকা কেন্দ্রগুলি ধরে রাখতে পারেনি। কংগ্রেসের গড় রায়গঞ্জ কেন্দ্রে বিদায়ী বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত পরাজিত হয়েছেন। তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছেন তিনি। ওই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন বিজেপি (BJP) প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী। দীর্ঘদিন ফরওয়ার্ড ব্লকের দখলে থাকা চাকুলিয়া কেন্দ্রটিও এবার তৃণমূল দখল করেছে। এই কেন্দ্রের ফব প্রার্থী এবং বিদায়ী বিধায়ক আলি ইমরান রমজ ওরফে ভিক্টর এবার পরাজিত হয়েছেন। হেমতাবাদে ২০১৬ সালের নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। যদিও পরে ওই সিপিএম বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেন। হেমতাবাদ কেন্দ্রটি এই প্রথমবার তৃণমূল দখল করল। অন্যদিকে, কালিয়াগঞ্জ কেন্দ্রটি গত উপনির্বাচনে তৃণমূল দখল করেছিল। কিন্তু এবার সেখানে বিজেপি জয়ী হয়েছে। চোপড়া, ইসলামপুর, গোয়ালপোখর, করণদিঘি ও ইটাহার আসন ধরে রেখেছে তৃণমূল।
ফলাফলের নিরিখে জেলায় তৃণমূল ভালো ফল করেছে। দলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল রায়গঞ্জ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন। তিনি বলেন, জেলার সাতটি আসনে আমাদের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জ আসন দু’টিতে সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে হার হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি বাসুদের সরকার বলেন, আমরা জেলায় এবার দু’টি আসনে জয়ী হয়েছি। মানুষ যা রায় দিয়েছে, তা শিরোধার্য। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই ফলাফলের সঙ্গেই উত্তর দিনাজপুর জেলা থেকে বাম-কংগ্রেস নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। চোপড়ায় তৃণমূল প্রার্থী প্রায় ৬৪ হাজার, ইসলামপুরে ৩৭ হাজার, গোয়ালপোখরে ৭৩ হাজার, চাকুলিয়ায় ৩৪ হাজার, করণদিথিতে ৩৭ হাজার, হেমতাবাদে ২৭ হাজার ও ইটাহারে ৪৩ হাজারের ব্যবধানে তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে, বিজেপিকে পিছনে ফেলে দক্ষিণ দিনাজপুরে জয়জয়কার তৃণমূলের। প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে বিজেপির তাবড় নেতৃত্ব প্রচার করেও দমাতে পারল না তৃণমূলকে। জেলার ছ’টি আসনের মধ্যে হরিরামপুর, কুশমন্ডি এবং কুমারগঞ্জে জয়লাভ করেছে তৃণমূল। এবার হরিরামপুরে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন দলের জেলা চেয়ারম্যান বিপ্লব মিত্র। তাঁকে হারানোর জন্য মরিয়া চেষ্টা চালায় বিজেপি। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একেবারে শেষ দফায় সেখানে প্রচারে এসে বিজেপির ফানুস ফাটিয়ে দেন। তবে তপন কেন্দ্রে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে তা হাতছাড়া হওয়ায় কিছুটা হতাশ দলীয় নেতৃত্ব।
হরিরামপুর আসনে বিপ্লব মিত্র প্রায় ২০ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হন। কুশমন্ডিতে ১২৫৮৪ এবং কুমারগঞ্জে ২৯০৩৯ ভোটে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থীরা।
জেলার সদর বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর ও তপন কেন্দ্রটি গিয়েছে বিজেপির দখলে। যদিও গত লোকসভার নিরিখে দক্ষিণ দিনাজপুরে বিজেপির প্রাধান্য ছিল। এবার গেরুয়া শিবির সেই আধিপত্য ধরে রাখতে পারল না। অন্যদিকে, শক্তিক্ষয় হয়ছে বাম-কংগ্রেস জোটের। কুমারগঞ্জে তৃণমূল ২৯০৩৯, হরিরামপুরে তৃণমূল ২২৬৭১ ও কুশমন্ডিতে তৃণমূল ১২৫৮৪ ভোটে জয়ী হয়।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল শাসকদল। সাফল্যের মূল কারণ সেটাই। আর পেট্রল, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি অনেকটাই ব্যাকফুটে নিয়ে যায় গেরুয়া শিবিরকে। সবমিলিয়ে দুই দিনাজপুরের মাটিতে ফের চাঙ্গা হয়ে উঠল তৃণমূল।