রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

ভোটের দফা বৃদ্ধিই কি বিজেপির পরাজয়ের কারণ?

May 6, 2021 | 2 min read

বঙ্গে আট দফায় ভোট করে ফায়দা তোলার আশায় ছিল বিজেপি (BJP)। কিন্তু সেই দফা বাড়ানোর জন্যই বিজেপির ‘দফারফা’ হয়ে গেল। করোনার (COVID19) তাণ্ডবে বিজেপির ‘সোনার ভারত’ এর কঙ্কালসার চেহারাটা সামনে আসতেই চুপসে যায় নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) স্বপ্নের ফানুস। উত্তরপ্রদেশ, গুজরাতে শ্মশানে লাশের মিছিল আর গণচিতা দেখে বাংলার মানুষ বুঝেছেন,‘ডবল ইঞ্জিনে’র সরকারের উন্নয়নের স্লোগান আসলে ধাপ্পা। তাই শেষ দু’দফার ভোটে ৬৯টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছে মাত্র ১৪টি। তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) দখলে গিয়েছে ৫৫টি আসন। সপ্তম ও অষ্টম দফার ভোট বিজেপির ‘ঘোড়া’ কিনে ক্ষমতা দখলের স্বপ্নের কফিনেও শেষ পেরেক পুঁতে দিয়েছে। 


এরাজ্যে বিজেপিকে ২০০ আসন দখলের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন অমিত শাহ। প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রচারে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছিল, যেন মোদি-শাহ জুটি অসীম ক্ষমতার অধিকারী। 


সিবিআই, ইডি, ইনকাম ট্যাক্স তাঁদের কথায় ওঠবস করে। তাঁরা যা চান তাই করে দেখান। তাঁদের বারবার এরাজ্যে আসার বিষয়টিও বিজেপি নেতারা কৌশলে কাজে লাগিয়ে প্রচার করেছিলেন, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা রিপোর্টে এরাজ্যের ক্ষমতা পরিবর্তন নিশ্চিত। তাই তাঁরা বাংলায় ঝাঁপিয়েছেন। 


তবে দিল্লির নেতৃত্ব ২০০ আসনের গল্প দিলেও বঙ্গ বিজেপির অনেকেই জানতেন, দলের যা অবস্থা তাতে থুতু দিয়ে কোনওভাবেই ছাতু গোলা যাবে না। তাই কার্যকর্তাদের অক্সিজেন দিতে তাঁরা দলের অন্দরে ১২০টি আসন পেলেই রাজ্যের ক্ষমতা কব্জার কথা বলতেন। তা বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য কয়েকজন দলবদলু নেতার নাম নিয়ে বলতেন, তৃণমূলের এমন ৩০/৪০জন টিকিট পেয়েছেন যাঁরা দলবদলু নেতাদের ঘনিষ্ঠ। ভোটের ফল বেরলেই তাঁরা বিজেপিতে যোগ দেবেন। বিভিন্ন জেলার বিজেপির নেতা-কর্মীদের অনেকেই সেকথা বিশ্বাসও করেছিলেন। 


কারণ তাঁদের সামনে মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটকে দল ভাঙিয়ে সরকার গড়ার উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছিল। আর ‘ঘোড়া’ কেনাবেচায় তাদের কয়েকজন নেতার খ্যাতি তো জগৎজোড়া। তাই তাঁরা ভেবেছিলেন, বিজেপির ক্ষমতায় আসাটা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।কিন্তু, করোনা বিজেপির ক্ষীণতম স্বপ্নও ভেঙে চুরমার করে দিল। বঙ্গ দখলের জন্য বিজেপি অনেক আটঘাট বেঁধেই ময়দানে নেমেছিল। তাতে যোগ্য সঙ্গত করে গিয়েছে নির্বাচন কমিশনের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত। বিজেপি নেতৃত্ব ভেবেছিল, বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও জনসমর্থন নেই। যেটুকু ছিল সেটুকু তারা টেনে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করালে আর কয়েকজন অফিসারকে বদলে দিলেই বাংলা হাতের মুঠোয় চলে যাবে। তাই করোনার চরম সঙ্কটকালেও নির্বাচনের দফা কমাতে রাজি হয়নি। বিজেপি মানুষের জীবনের চেয়েও নির্বাচনে দফাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। আর তাতে বিজেপির ‘দফারফা’ হয়েছে।


শেষ দু’দফায় রাজ্যের ছ’টি জেলায় মোট ৬৯টি আসনে নির্বাচন হয়েছে। এরমধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলার ২০টির মধ্যে ১৭টি, মালদহ জেলায় ১২টির মধ্যে ৮টি, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় ৬টির মধ্যে ৩টি, বীরভূম জেলায় ১১টির মধ্যে ১০টি এবং কলকাতায় ১১টিতেই তৃণমূল জয়ী হয়েছে। শতাংশের বিচারে সাফল্যের হার প্রায় ৮০ভাগ। অভাবনীয়, অকল্পনীয় এবং অপ্রত্যাশিত। 


তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০ আসনে জেতানোর আবেদন জানিয়েছিলেন। কারণও তিনি স্পষ্ট করেছিলেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছাকাছি আসন পেলে তৃণমূলের বিধায়ক ভাঙিয়ে বিজেপি সরকার গড়ার চেষ্টা দেখাবে। বাংলার মানুষের এই রায়ের পর বিজেপি তৃণমূল ভাঙানোর সাহস দেখাবে না। কারণ বাংলার মানুষ ভেঙে দিয়েছেন বিজেপির কোমর।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#bjp, #West Bengal Elections 2021, #bengal verdict

আরো দেখুন