কোভিড আইসোলেশন সেন্টার হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁ ‘গ্লেনারিজ’
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের (Second wave) ধাক্কায় বেসামাল গোটা দেশ। ব্যতিক্রম নয় পশ্চিমবঙ্গও। দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গে, এমনকি দার্জিলিংয়েও গত কয়েকদিনে সংক্রমণের সংখ্যা এক ধাক্কায় বেড়েছে অনেকটাই। এই পরিস্থিতিতে পাহাড়ের মানুষকে রক্ষা করতে ব্রিটিশ আমলের শতবর্ষ পুরোনো ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁ ‘গ্লেনারিজ’-কে (Glenary’s) আইসোলেশন সেন্টার করার সিদ্ধান্ত নিল স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য দফতরের এই সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছেন গ্লেনারিজের কর্ণধারও। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বুধবার থেকেই চালু হয়ে যাবে গ্লেনারিজ আইসোলেশন সেন্টার।
ব্রিটিশ আমল থেকে চলা বেকারি সহ রেস্তোরাঁ ‘গ্লেনারিজ’ সকলের কাছেই জনপ্রিয়। দেশ-বিদেশের পর্যটকেরাও এখানে খেতে আসেন। কিন্তু পাহাড়ের মানুষের স্বার্থে ‘গ্লেনারিজ’-কে আইসোলেশন সেন্টার বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। এবিষয়ে সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের তরফে গ্লেনারিজ কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। গ্লেনারিজ কর্তৃপক্ষও বিষয়টিতে সম্মতি দেন। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এই চরম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন ‘গ্লেনারিজ’ কর্ণধার অজয় এডওয়ার্ডস। তাঁর কথায়, ‘পাহাড়ের মানুষ বিপাকে পড়েছে। তাই আমার মনে হয়, এখন খাওয়া-দাওয়ার আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে। আর তাই সরকার আমাকে অনুরোধ করতেই আমি রাজি হয়ে যাই।’
গ্লেনারিজ কর্ণধার জানান, আপাতত রেস্তোরাঁ সকলের জন্য বন্ধ থাকবে। তবে বেকারি খোলা রাখা হবে। কিন্তু যদি দেখা যায়, কেউ আসতে চাইছে না তাহলে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এদিকে, ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা ‘গ্লেনারিজ’ পরিদর্শন করে গিয়েছেন। রেস্তোরাঁ থেকে গ্লেনারিজ-কে আইসোলেশন সেন্টারে (Isolation Centre) পরিণত করার জন্য তাঁরা ইতিমধ্যে কয়েকটি জিনিস পরিবর্তন করতে বলেছেন। সেই কাজ মঙ্গলবারের মধ্যেই হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন এডওয়ার্ডস। ফলে বুধবার থেকেই পুরোদমে করোনা রোগীদের জন্য আইসোলেশন সেন্টার হিসাবে ‘গ্লেনারিজ’ ব্যবহার করা যাবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরাও। গ্লেনারিজ কর্তৃপক্ষের এই সহযোগিতা পেয়ে খুশি স্বাস্থ্য দফতরও। পাহাড়বাসীর স্বার্থেই তিনি এই পদক্ষেপ করলেন জানিয়ে গ্লেনারিজ কর্ণধার অজয় এডওয়ার্ডস বলেন, ‘আসলে পাহাড়ে নার্সিংহোমগুলিতে জায়গা নেই। শিলিগুড়িতেও কোথাও জায়গা নেই। তাই আমরা আমাদের বেকারিতেই এই ব্যবস্থা করলাম। এখানে আপাতত ২০ বেডের আইসোলেশন সেন্টার খোলা হবে। পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে ৪০ থেকে ৪৫ বেড করা হবে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবরকম সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। এখানে দুবেলা চিকিৎসক আসবেন। এছাড়া নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী থাকবেন। এখানে অক্সিজেনেরও ব্যবস্থা করা যাবে। তবে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করা যাবে না।’
পাহাড়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য যে পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে, ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা নেই, তা নিয়ে আক্ষেপও করেন গ্লেনারিজ কর্ণধার। একইসঙ্গে পাহাড়ের মানুষের করোনা চিকিৎসার সাহায্যের জন্য সকলের কাছে আবেদনও জানিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের এখানে এখন শুধু সরকারি হাসপাতালেই ভেন্টিলেশন আছে। তাই কেউ যদি নার্সিংহোমে ভেন্টিলেশন দান করেন তাহলে পাহাড়ের মানুষ উপকৃত হবে। কারণ যেভাবে করোনা বাড়ছে তাতে মানুষের পাশে না দাঁড়ালে বিপদ আরও বাড়বে।’
উল্লেখ্য, সারা রাজ্যের পাশাপাশি দার্জিলিং জেলাতেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। বৃহস্পতিবার এই জেলায় রেকর্ড সংক্রমণ হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছেন ৬৯৩ জন।