ইস্তফা দিলে সাংসদ পদে জেতা অসম্ভব, বিধায়ক পদে শপথ নিলেন না নিশীথ-জগন্নাথ
“ছেড়ে দিলে সোনার গৌর, আর তো পাবো না…”৷
এই ইস্যুতে আপাতত এমন গানই এখন গাইছে বিজেপির (BJP) দিল্লির নেতারা৷ তার জেরেই আর বিধায়ক হিসাবে শপথ নেওয়া হলো না নবনির্বাচিত দুই গেরুয়া বিধায়কের৷
বিধানসভা ভোটে হুমড়ি খেয়ে পড়ার পরেও ফের দিল্লির চাপ বঙ্গ-বিজেপির ঘাড়ে৷ মূলত, মোদি-শাহের (Modi- Shah) চাপেই বিধায়ক হিসাবে শপথ নিতে পারলেন না নিশীথ প্রামাণিক এবং জগন্নাথ সরকার৷
দু’জনই সাংসদ৷ দু’জনই এবার বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন৷ বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিধানসভায় নবনির্বাচিত বিধায়কদের শপথগ্রহনের দিন ধার্য ছিলো৷ সবাই শপথ নিলেও শপথ নেননি গেরুয়া শিবিরের এই দুই বিধায়ক৷ এর ফলে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর চর্চা৷
সূত্রের খবর, দিল্লি নির্দেশ দিয়েছে, নিশীথ এবং জগন্নাথ সাংসদ পদে ইস্তফা দেবেন না৷ বরং তাঁরা বিধায়ক পদ ছাড়বেন৷ একুশের ভোটের ফল দেখে মোদি-শাহ ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হয়েছেন, কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক (Nisith Pramanik) ও রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার (Jagannath Sarkar) ইস্তফা দিলে ওই দুই আসনে উপনির্বাচন হবে৷ সেই পরিস্থিতিতে স্বয়ং মোদি এবং শাহ বাংলায় বাড়ি ভাড়া করে থেকে প্রচার চালালেও ওই দুই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীর জামানত রক্ষা কঠিন হবে৷ মাঝখান থেকে সংসদে বিজেপির দু’টি আসন কমবে৷ দেশজুড়ে পরের পর নির্বাচনে হারতে হারতে ক্লান্ত বিজেপি৷ তবে বিজেপির লজিক, রাজ্যে রাজ্যে বিজেপির পতাকা গুটিয়ে নিতে হলেও ক্ষতি নেই মোদির, কিন্তু সাংসদ ভোটে পরাজয় হলে মোদিজির তথাকথিত ‘দেশনায়ক’ ইমেজে ধাক্কা লাগবে৷ কিন্তু বাংলায় পাওয়া ৭৭ আসন থেকে দু’টি কমে ৭৫ হলেও দিল্লির গায়ে আঁচ লাগবে না৷ বরং বাংলা থেকে জেতা ১৮ আসন দুম করে ১৬ হয়ে গেলে, তা মোদির পরাজয় হিসাবে চিহ্নিত হবে৷ তাই নিজেদের ইমেজ বাঁচাতে নিশীথ-জগন্নাথকে বাংলার বিধায়ক হতে দিলেন না মোদি-শাহ৷
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর প্রশ্ন ওঠে তাহলে নিশীথ প্রামাণিক (Nisith Pramanik) ও জগন্নাথ সরকার (Jagannath Sarkar) সাংসদ পদ ছাড়বেন, না’কি বিধায়ক পদ? শুক্রবারও বিধানসভায় শপথ গ্রহণ করেননি বিজেপির জয়ী এই দুই প্রার্থীই। ফলে এটা পরিষ্কার হয়, বিজেপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এরা সাংসদই থাকুন, বিধায়ক পদে ইস্তফা দিন৷ সেখানে উপনির্বাচনে হারলে, হারবো, কিন্তু দিল্লির ‘মান’ তো থাকবে৷
একুশের ভোটে ৪ সাংসদকে বাংলায় প্রার্থী করেছিল বিজেপি। এই দু’জন ছাড়াও প্রার্থী ছিলেন বাবুল সুপ্রিয় এবং লকেট চট্টোপাধ্যায় ৷ এই দু’জনই পরাজিত হয়েছেন৷ ফলে তাঁদের সাংসদ থাকতে আইনি বাধা নেই৷ কিন্তু নিশীথ আর জগন্নাথ জয়ী হওয়ার দরুন প্রথা অনুসারে, আগামী ৬মাস তাঁরা নিজেদের বিধায়ক পদ ধরে রাখতে পারবেন৷ নির্দিষ্ট সময় পার হলেই সাংসদ বা বিধায়ক, যে কোনও একটি পদে ইস্তফা দিতে হবে৷ যে পদই ছাড়ুন, সেই পদে উপনির্বাচন হবে৷ এই মুহুর্তে বাংলার রাজনৈতিক চিত্র বলছে সেই উপনির্বাচনে বিজেপির ফিরে আসা মুশকিল ৷
আর সে কারনেই মোদি-শাহের ‘হাত শক্ত’ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপির শীর্ষ মহল৷ বঙ্গ বিজেপির দুটি বিধায়ক পদ কমলে ক্ষতি নেই৷ যাহা ৭৭, তাহাই ৭৫ ৷
গেরুয়া পরিষদীয় দল সূত্রের খবর, নিশীথ- জগন্নাথ যেহেতু সাংসদ, তাই এদের বিষয়ে দিল্লিই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে৷ দুই সাংসদ অবশ্য এদিন ইস্তফা-ইস্যুতে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে রাজি হননি।