দেশ বিভাগে ফিরে যান

বিপদের সময় পাশে নেই মোদী, ক্ষুব্ধ বারাণসী

May 11, 2021 | 2 min read

নেই-রাজ্য! হাসপাতালে বেড নেই। অক্সিজেনের আকাল। মিলছে না অ্যাম্বুলেন্স। করোনা টেস্টের জন্য এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। গত ১০-১২ দিন ধরে ওষুধের দোকানগুলিতে ভিটামিন, জিঙ্ক ও প্যারাসিটামলের মতো প্রাথমিক ওষুধগুলি পর্যন্ত মিলছে না। এই অবস্থায় ক্ষুব্ধ বারাণসীর (Varanasi) প্রশ্ন, কোথায় আমাদের সংসদ? এই বিপদের দিনে, প্রয়োজনের মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) দেখা মিলছে না কেন?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, অক্সিজেন (Oxygen) চেয়ে ক্রমাগত ফোন আসছে। কিন্তু আমরা নিরুপায়। প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় ওষুধগুলির সাপ্লাই পর্যন্ত নেই। এই অবস্থায় অনেকেই মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খাচ্ছেন। তারা বলছেন, কিছু তো কাজ হবে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, বিপদের শুরু মার্চ থেকে। দিল্লি, মুম্বইয়ে আক্রান্ত বাড়তে থাকায় ট্রেন, বাস, ট্রাক বোঝাই করে পরিযায়ীরা ফিরতে শুরু করেন। অনেকে ফিরে আসেন হোলির ছুটিতে। তার মধ্যেই এপ্রিলে হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলিতে ঠাঁই মিলছে না। ঋষভ জৈন (২৫) নামে শহরের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমার কাকিমা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। প্রতিদিন ৩০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পাঁচ ঘণ্টা করে লাইনে দাঁড়িয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করাতে হয়েছে। হাসপাতালের বেড মেলেনি।

সরকারি রেকর্ড বলছে, বারাণসী জেলায় প্রতিদিন ১০-১২ জনের মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয়দের দাবি, সরকারি হিসেব থেকে আসল ছবির কিছুই বোঝা যাবে না। রোজ অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। হরিশ্চন্দ্র ও মণিকর্ণিকা ঘাট লাগোয়া বাসিন্দাদের বক্তব্যে ভয়াবহ চিত্রটা স্পষ্ট হচ্ছে। তারা জানাচ্ছেন, অ্যাম্বুলেন্সের শব্দে কান পাতা দায়। আগে এই দুই ঘাটে দিনে ৮০-৯০টি দেহ সৎকার হতো। কিন্তু গত একমাস দিনে ৩০০ থেকে ৪০০টি দেহ আসছে।

শুধু বারাণসী শহর নয়, এই জেলার গ্রামগুলিতেও পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। চিরাইগাও ব্লকের প্রধান সুধীর সিং পাপ্পু বলেন, বারাণসীতে ১১০টি গ্রাম রয়েছে। প্রতিটি গ্রামের ৫ থেকে ১০ জন করে মারা যাচ্ছেন। কয়েকটি গ্রামে সংখ্যাটা ১৫ থেকে ৩০। সরকারি হাসপাতালে না আছে বেড, না অক্সিজেন, না ওষুধ। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির আগে ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকা জমা করতে বলা হচ্ছে। আমাদের কোথাও যাওয়ার নেই। আইধে গ্রামের বাসিন্দা কমলাকান্ত পাণ্ডে বলেন, শহরের থেকে গ্রামের অবস্থা বেশি খারাপ। টেস্ট হলে অর্ধেকের বেশি মানুষের রিপোর্ট পজিটিভ আসবে। ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশি। স্বাদ ও গন্ধ পাচ্ছেন না মানুষ। সঙ্গে দুর্বলতা। টেস্ট হচ্ছে না বলে মৃত্যুর হিসেব সরকারি খাতায় উঠছে না। ভেবে দেখুন, এটা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী কেন্দ্র। তা সত্ত্বেও আমরা শ্বাস নিতে না পেরে মরছি। মোদি গা-ঢাকা দিয়েছেন। তিনি হামেশাই মা গঙ্গা, বারাণসী ও তার মানুষের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের কথা বলতেন। কিন্তু ভাইরাসের তাণ্ডবে বারাণসীর স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনী কেন্দ্রকেই ভুলে গিয়েছেন। ভোটের জন্য তিনি এতবার পশ্চিমবঙ্গে যেতে পারলেন। একবারও
বারাণসী আসতে পারলেন না। বারাণসী শহরের এক রেস্তরাঁ মালিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দু’জনেই নিখোঁজ। এমনকী স্থানীয় বিজেপি নেতারা ফোন বন্ধ করে রাখছেন। প্রয়োজনের মুহূর্তে যোগাযোগ করাই যাচ্ছে না। বারাণসীর মানুষকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে তাঁরা বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Narendra Modi, #covid19

আরো দেখুন