টিকা নিয়ে কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে সরব মমতা সহ বিরোধীরা
দেশে আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এখন মারণ ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত রুখতে টিকাকরণের দিকেই তাকিয়ে গোটা দেশ। যত বেশি টিকা, তত বেশি করোনার বিরুদ্ধে বর্ম। আর এভাবেই তৈরি হবে হার্ড ইমিউনিটি। করোনা মোকাবিলায় এই হার্ড ইমিউনিটির গুরুত্ব অপরিসীম। এই পরিস্থিতিতে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন মিলিয়ে রাজ্য সরকার ২ কোটি ডোজ প্রতিষেধকের বরাত দিয়েছে উৎপাদক সংস্থাগুলির কাছে। কিন্তু মে মাসে বাংলায় খুব বেশি হলে ১৪ লক্ষ ২৪ হাজারের মতো ডোজই সরবরাহ করা হবে। তার মধ্যে অর্ধেক, অর্থাৎ ৭ লক্ষের কিছু বেশি ডোজ রাজ্য সরকার হাতে পাবে। ঘোষণা অনুযায়ী, রাজ্য সরকার ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের বিনামূল্যে এই প্রতিষেধক দেবে। কিন্তু বাকি প্রতিষেধক যাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে। সেখানে নিজের গাঁটের কড়ি খরচ করেই টিকা নিতে হবে। কারণ মোদী সরকার নিজেই সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, প্রতিটি রাজ্যে ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের জন্য যে টিকা যাবে, তার অর্ধেক যাবে রাজ্য সরকারের কাছে। বাকি অর্ধেক যাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলির কাছে।
প্রশ্ন উঠেছে, সিরাম ইনস্টিটিউট রাজ্যকে ৩০০ টাকা দরে টিকা বেচবে, ভারত বায়োটেক বেচবে ৪০০ টাকা দরে। কিন্তু এরাই বেসরকারি হাসপাতালকে ৬০০ ও ১২০০ টাকা দরে টিকা বেচবে। বেসরকারি হাসপাতালে যখন বেশি দর মিলছে, তখন সিরাম-ভারত বায়োটেক সেখানেই টিকা জোগানে প্রাধান্য দেবে না তো? রাজ্য সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি, ১ মে-র পরে ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের জন্য সরকারের হাতে টিকা আসার আগেই কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতাল ২৫ হাজার ডোজ় জোগাড় করে ফেলেছে। এই প্রবণতা চলতে থাকলে, সাধারণ গরিব মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দিতে চাইলেও রাজ্যের হাতে যথেষ্ট টিকা থাকবে না। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে বড়লোকেরা টিকা নিতে পারবেন। গরিব মানুষ টিকা থেকে বঞ্চিতই থেকে যাবে।’ এ জন্য মোদী সরকারের নীতিকেই দায়ী করছে বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলি। বিরোধীদের অভিযোগ, সিরাম ও ভারত বায়োটেক যাতে বেসরকারি হাসপাতালকে বেশি দামে টিকা বেচতে পারে, সেটা কেন্দ্রই নিজের নীতির মাধ্যমে নিশ্চিত করে দিচ্ছে। কেন্দ্রের এই নীতির ফলে, রাজ্য ২ কোটি ডোজের বরাত দিলেও তা হাতে পেতে দু’বছরের বেশি সময় লেগে যাবে।
মোদী সরকার আগেই ঘোষণা করেছে, ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের কোভিডের প্রতিষেধক দেওয়ার কোনও দায় কেন্দ্র নেবে না। রাজ্য সরকার বা কোনও বেসরকারি হাসপাতাল টিকা দিতে চাইলে তা সরাসরি সিরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেকের থেকে কিনে নিতে হবে। তবে সব রাজ্যে যাতে জনসংখ্যার অনুপাতে সমান ভাবে টিকা পৌঁছয়, তার জন্য টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলে কোন রাজ্য কত ডোজ পাবে, তা ঠিক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। এই সূত্র অনুযায়ী, বাংলায় মে মাসে মোট ১৪,২৪,৪০০ ডোজ টিকা সরবরাহ করা হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব বিকাশ শীল রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, এর মধ্যে সিরাম ১০,৫৭,৬১০ ডোজ কোভিশিল্ড জোগাবে। বাকি ৩,৬৬,৭৯০ ডোজ কোভ্যাক্সিন জোগাবে ভারত বায়োটেক। আপাত ভাবে মনে হয়েছিল, এর পুরোটাই রাজ্য সরকার পাবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামায় জানিয়েছে, এর অর্ধেক পাবে রাজ্য সরকার। বাকি অর্ধেক, বা ৭,১২,২০০ ডোজ পাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলি।