করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এক মাসেই কাজ হারিয়েছেন ১১ লক্ষ
করোনা (Covid19) এবং লকডাউনের সবথেকে বড় সঙ্কট কর্মহীনতা। ২০২০ সালেই তার সাক্ষী গোটা দেশ। অভিশপ্ত সেই বছর শেষে দেখা গিয়েছিল আশার আলো—ভ্যাকসিন। ২০২১ সালে শুরুতেই টিকায় ছাড়পত্র মেলায় ভরসায় বুক বাঁধে তামাম ভারতবাসী। মনে করা হয়েছিল, কোভিড সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পেলেও পূর্ণাঙ্গ লকডাউনের পথে যেতে হবে না। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ (Corona Second Wave) অপ্রত্যাশিতভাবে এমন চরম আকার নেয় যে, রাজ্যে রাজ্যে লকডাউন (Lock Down) শুরু করতে বাধ্য হয় প্রশাসন। ফলে ফের ধাক্কা লেগেছে জীবিকায়। গত মার্চ থেকে এপ্রিল, শুধু এই এক মাসের মধ্যেই ১১ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়েছেন। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (এমপ্লয়মেন্ট)-এর সমীক্ষায় দাবি, কর্মহীনতা এপ্রিল মাসে পাহাড়প্রমাণ হওয়ার আভাস দিয়েছে। সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮ শতাংশে পৌঁছেছে বেকারত্বের হার। কর্মসংস্থানের হার গত মার্চ মাসে ৩৭.৬ শতাংশ ছিল। এপ্রিল মাসে সেটা কমে হয়েছে ৩৬.৮ শতাংশ। এই প্রবণতায় শীর্ষে ডবল ইঞ্জিনের সরকার হরিয়ানা (২৫ শতাংশ)। পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপ্রদেশে কর্মহীনতার হার ৬ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে রয়েছে।
দেশে বেকারত্ব (unemployment) বেড়েছে শহরাঞ্চলে। এই সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, কাজ খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না, এরকম কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা গত মার্চ মাসে ছিল ২ কোটি ৭০ লক্ষ। সেটাই এপ্রিল মাসে ৩ কোটি ৯০ লক্ষে পৌঁছেছে। হঠাৎ কর্মহীনতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ অবশ্য কৃষিক্ষেত্রে এপ্রিল মাসে কাজ কম থাকা। মে মাসের আগে খরিফ শস্যের প্রস্তুতি শুরু হয় না। তাই এপ্রিল মাসে গ্রামীণ এলাকায় কাজের আকাল পড়ে। আর এই সময় থেকেই পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে যায়।
একদিকে যখন কর্মসংস্থানে সঙ্কট আবার মাথাচাড়া দিয়েছে, অন্যদিকে আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে অর্থনীতির ক্ষেত্রেও। গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সমীক্ষা সংস্থাগুলি ২০২১-’২২ এবং ২০২২-’২৩ আর্থিক বছরের জিডিপি আশাব্যঞ্জক হওয়ার দাবি করেছে। কিন্তু মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ধরা পড়েছে উল্টো ছবি। লকডাউন এবং প্রধানত ভ্যাকসিনের অভাব অর্থনীতিতেও ছায়া ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্রিসিল মঙ্গলবারই বলেছে, সম্ভবত ভারতের চলতি আর্থিক বছরের জিডিপি হবে ৮.৫ শতাংশ। বুধবার রাষ্ট্রসঙ্ঘ তা আরও কমিয়ে দিয়েছে। বলা হয়েছে, জিডিপি সাড়ে ৭ শতাংশ হতে পারে। এতদিন যা অন্তত সাড়ে ৯ শতাংশ থেকে ১১ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু সেই আশা ক্ষীণ হওয়ার সম্ভাবনা।
এর মধ্যেই সরকারের করোনা ও ভ্যাকসিন সংক্রান্ত প্রধান গবেষণা ও পরামর্শদাতা সংস্থা আইসিএমআরের প্রধান বুধবার দাওয়াই দিয়েছেন ভারতের যে স্থানগুলিতে ১০ শতাংশের বেশি কোভিড পজিটিভ হার, সেখানে অন্তত ৮ সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউন রাখা দরকার। আইসিএমআর যখন এভাবে একটানা ৮ সপ্তাহের দাওয়াই দিয়েছে সেটা কি আদতে সরকারের সিদ্ধান্তগ্রহণেরই ইঙ্গিত? এই প্রশ্ন কিন্তু উঠছে।