গঙ্গায় ভেসে আসা মৃতদেহ উদ্ধারে তৈরি মালদা জেলা প্রশাসন
বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে ভেসে আসা মৃতদেহের তল্লাসিতে গঙ্গাবক্ষে নৌকো নামাতে চলেছে মালদহ (Malda) জেলা প্রশাসন। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে ১০টি নৌকো গঙ্গায় নামানো হবে। এব্যাপারে মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) মৃদুল হালদার বলেন, গঙ্গার উচ্চ অববাহিকা থেকে করোনায় মৃতদের দেহ ভেসে আসছে বলে আমরা জানতে পারি। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য থেকেও আমাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। গঙ্গায় দেহ পচতে থাকলে ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়বে এই রাজ্য। ফলে রাজ্যের সীমানায় দেহ ঢোকামাত্র তা তুলে ফেলা হবে। তার জন্য মানিকচক ঘাট সংলগ্ন একটি জায়গায় আমরা ১০টি নৌকো গঙ্গায় নামাচ্ছি। ওই জায়গায় গঙ্গার প্রস্থ কিছুটা কম। ফলে নজরদারিতে সুবিধা হবে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সিভিল ডিফেন্স, পুলিস এবং মানিকচক ব্লক প্রশাসনের লোকজন নৌকোয় তল্লাসি চালাবে। দেহ তুলে সমাধিস্থ করার জন্য গঙ্গার একটি নির্জন চরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। করোনা (Covid19) সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশ মেনেই সেখানে দেহগুলি সমাধিস্থ করা হবে। বিষয়টি নিয়ে মানিকচক এবং ভূতনি থানার আধিকারিকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমরাও এদিন ঘটনাস্থলে যেতে পারি। মানিকচকের পরে গঙ্গার নিম্ন অববাহিকায় কালিয়াচক-২ ব্লক রয়েছে। ওই ব্লকের অন্তর্গত পঞ্চানন্দপুর ঘাট এলাকাতেও প্রয়োজনে নজরদারি চালানো হবে। একটি দেহও যাতে ভেসে ফারাক্কা পার হতে না পারে তারজন্য আমরা সবরকম ব্যবস্থা নেব।
উল্লেখ্য, উত্তর ভারতের কয়েকটি রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অতিমারীতে বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। করোনায় মৃতদের দেহ সৎকারের ব্যাপারে রাজ্য সরকারগুলি উদাসীন বলে অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতাল থেকে দেহ গঙ্গার তীরে নিয়ে গিয়ে কোথাও ডাঁই করে রাখা হচ্ছে। কোথাও আবার সামান্য অগ্নিসংযোগ করে দেহ গঙ্গার জলে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে দগ্ধ বা স্তুপাকার দেহ গঙ্গার জলে ভেসে নিম্ন অববাহিকার দিকে চলে যাচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং ঝাড়খণ্ড হয়ে গঙ্গা এরাজ্যে প্রবেশ করছে। মালদহ জেলায় ঢোকার পর বেশ কিছুটা প্রবাহিত হওয়ার পর ফারাক্কার গেটে গঙ্গা ধাক্কা খাচ্ছে। সেখান থেকে ভাগীরথীর ফিডার ক্যানেল গঙ্গা থেকে পৃথক হচ্ছে। ফারাক্কা থেকে নিম্ন অববাহিকায় কিছুদূর যাওয়ার পর পদ্মা নাম নিয়ে বিশালাকার ওই নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তার আগে অবশ্য মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের কাছে ভাগীরথী ভাগ হয়ে যাচ্ছে। ফলে করোনায় মৃতদের দেহ মালদহের পশ্চিম ও দক্ষিণ প্রান্তের ব্লক এলাকায় তুলতে না পারলে গোটা ফারাক্কা ব্যারাজের জল দূষিত হবে। তার প্রভাব ফিডার ক্যানালেও পড়বে। ফলে ভাগীরথী বা হুগলী নদীর জলেও দূষণ মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে পরিবেশবিদদের একাংশ আশঙ্কা করছেন। এই পরিস্থিতিতে মালদহ জেলা প্রশাসনের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পার্থসারথী রায় বলেন, অন্যান্য ঋতুর তুলনায় বর্ষায় যেকোনও প্রাণীদেহে দ্রুত পচন ধরে। মানবদেহও সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। দেহে পুরো মাত্রায় পচন ধরার আগেই জল থেকে তুলে ফেলতে হবে। তা না হলে দূষণ বাড়বে। পচা দেহ জল থেকে তুলতেও সমস্যা হবে। জলদূষণ রোধে দেহ দ্রুত গঙ্গা থেকে তুলে নেওয়া এবং সঠিক নিয়ম মেনে সেগুলির অন্ত্যেষ্টি করা উচিত।