মুখ পুড়ল দেশের, মোদীর আমলে ‘বিনিয়োগের অযোগ্য দেশ’ ভারত!
দেশের সামনে এখন ১৯৯১ মুহূর্ত! না, অর্থনৈতিক সংস্কারের বিচারে নয়। ‘বিনিয়োগের অযোগ্য দেশ’-এর তকমা পাওয়ার বিচারে।
ব্রাজিল, আর্জেন্তিনার মতো কোভিড-ক্লিষ্ট (Covid 19) ভারতও যে ‘বিনিয়োগযোগ্য দেশ’-এর তকমা হারাতে চলেছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই অনেক বিশেষজ্ঞেরই। তাঁদের মতে, আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থাগুলি কখন ভারতের সার্বভৌম রেটিং কমিয়ে ভারতকে ‘বিনিয়োগের অযোগ্য দেশ’ হিসাবে ঘোষণা করে সেটা এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
যদিও ভারতের পক্ষে ওই তকমা পাওয়া এ বারই প্রথম নয়। ১৯৯১ সালে স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস (S&P ) ভারতের সার্বভৌম রেটিং ‘জাঙ্ক স্টেটাস’-এ নামিয়ে দিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, ভারতের বিনিয়োগযোগ্যতা এখন একটি সুতোয় ঝুলছে। করোনা সঙ্কট ভারতীয় অর্থনীতির সেই কঙ্কালসার চেহারাটাকে সামনে বের করে এনেছে।
অদূর বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক সুপার পাওয়ার হিসাবে ভারতের উঠে আসার ঢাক পেটানোকে ফাঁকা আওয়াজে পরিণত করেছে সরকারের দীর্ঘদিন ধরে জমে ওঠা ঋণের বোঝা আর উপযুক্ত অর্থনৈতিক সংস্কারের পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি মনোভাব। আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থাগুলি এখন ভাবছে, ভারতকে আর ‘বিনিয়োগযোগ্য দেশ’-এর তালিকায় রাখা ঠিক হবে কিনা।
করোনা-লকডাউনের জেরে গত বছর অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সঙ্কোচনের পর রেটিং সংস্থাগুলি ভারতের সার্বভৌম রেটিং বিনিয়োগ জোগ্যতার শেষ ধাপে নামিয়ে এনেছিল। ওই রেটিং আর এক ধাপ কমালেই ভারত ‘বিনিয়োগ অযোগ্য’ দেশগুলির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের অপরিণামদর্শীতায় কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ (Corona Second Wave) দেশে আরও মারাত্মক আকারে দেখা দিয়েছে এবং তার প্রেক্ষিতে S&P , মুডিজ এবং ফিচের মতো আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থাগুলি ভারতের রেটিং পুনর্বিবেচনার উপক্রম শুরু করেছে। উল্লেখ্য, ওই তিন সংস্থাই ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নিয়ে তাদের পূর্বানুমান সম্প্রতি বেশ খানিকটা কমিয়ে দিয়েছে। সংস্থাগুলি এই আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে যে, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে ভারত সরকারের ঋণের পরিমাণ দেশের মোট GDPর ৯০ শতাংশে পৌঁছবে।
উল্লেখ্য, ফিচ এবং মুডিজের ‘BBB’ রেটিং প্রাপ্ত দেশগুলির মধ্যে (ভারতের রেটিং BBB-) যে দেশগুলির সরকারি ঋণের পরিমাণ (সেই দেশের GDPর শতাংশ হিসাবে) সবচেয়ে বেশি, তাদের ওই হার ৫৫%। এমনকী, ‘জাঙ্ক’ তালিকাভুক্ত দেশগুলির মধ্যে ডেট-টু-GDP-র সর্বোচ্চ হার ৭০%! ওই তালিকায় ভারতই একমাত্র ব্যতিক্রম।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ রোখার জন্য দেশ জোড়া লকডাউন (Lock Down) ঘোষণার দাবি যত জোরালো হচ্ছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ততই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন। জেপি মর্গ্যানের মতে, ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’ প্রবচনেই ভরসা রেখে রেটিং সংস্থাগুলি আপাতত ভারতের রেটিং অপরিবর্তিত রেখেছে। সুইৎজারল্যান্ডের বহুজাতিক আর্থিক বিশেষজ্ঞ সংস্থা ইউবিএস-এর ইমার্জিং মার্কেটস স্ট্র্যাটেজি হেড, মানিক নারাইন বলেন, ‘ভারতের রেটিং কমানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশ্নটা এখন আর ‘যদি’ নয়, ‘কখন’?’
ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকার পর আর এক ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশের সার্বভৌম রেটিং ‘জাঙ্ক’ বা বিনিয়োগ অযোগ্য স্তরে নেমে গেলে বিশ্বজুড়ে তার প্রতিক্রিয়া ঘটবেই। প্রথমেই আঘাত আসবে ঋণপত্র এবং শেয়ারের মতো বিনিয়োগের বাজারে। রয়টার্সের হিসাব অনুযায়ী, ভারতের প্রায় ৪০০০ কোটি – ৪৫০০ কোটি ডলার মূল্যের কর্পোরেট ঋণপত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা লগ্নি করে রেখেছেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজকোষ ঘাটতি এবং তার ওপর বিপুল ঋণের দায় প্রসঙ্গে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব সুভাসচন্দ্র গর্গ অবশ্য মনে করেন, ‘সরকারের ঋণের বোঝা যদি GDP-র ৯০% হয় তবে, অবশ্যই সেটা গভীর উদ্বেগের বিষয়। এটা চলতে পারে না। কিন্তু, ভারতকে সকলের সঙ্গে এক পংক্তিতে বসানো ঠিক হবে না, ভারতের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী। বৃদ্ধির হার দ্রুততর হলেই ঋণের দায়ও কমে আসবে।’
তবে, শুধু কোভিড-জনিত আর্থিক ত্রাণ প্যাকেজের ওপর নির্ভর করেই দেশের বৃদ্ধির হার দুই অঙ্কে ফিরবে এমনটা আশা করাও মুর্খামি বৈকি। কেননা, আর্থিক ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা মানেই সরকারের ঋণ বৃদ্ধি পাওয়া।