নিশীথ বিধায়ক পদ ছাড়তেই বিজেপি থেকে তৃণমূলে নাম লেখানোর হিড়িক
ভোটে জেতার পরেও বিধায়ক পদ থেকে নিশীথ প্রামাণিক (Nisith Pramanik) ইস্তফা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ দিনহাটার (Dinhata) গেরুয়া শিবিরের নিচুতলার কর্মীরা। বিধায়ক থাকবেন না জেনেও কেন তিনি বিধায়ক পদে দাঁড়ালেন এবং কেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে প্রার্থী করল তা নিয়ে বিজেপি নেতাদের একাংশও প্রশ্ন তুলেছেন। এদিকে নিশীথ এমএলএ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ায় বিজেপির (BJP) অনেক কর্মী তৃণমূল কংগ্রেসে (TMC) যোগ দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে বিজেপির একাধিক মণ্ডল সভাপতি সহ কয়েকজন শহর ও ব্লক স্তরের নেতা দল ছাড়বেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।
ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা বলেন, অনেক প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে রাতদিন এককরে আমরা তৃণমূলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়ে নিশীথ প্রামাণিককে জিতিয়েছি। অল্প ভোটের ব্যবধান হলেও আমাদের প্রার্থী জিতেছেন। আমরা আশা করেছিলাম বিধায়ক আমাদের পাশে থাকবেন। কিন্তু, তিনি নির্বাচিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই এমএলএ পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিলেন। আমাদের লড়াইকে সম্মান জানালেন না। এবার উপ নির্বাচনে হবে। তৃণমূলের প্রার্থীর জয়ের রাস্তা উনি নিজেই খুলে দিলেন। যাঁরা গ্রামেগঞ্জে তৃণমূলের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে লড়াই করেছিলেন তাঁদের কথা দলের শীর্ষ নেতারা ভাবল না। এরপর বিজেপি কর্মীরাই বিজেপি প্রার্থীকে হয়তো আর ভোট দেবেন না।
এদিকে নিশীথ প্রামাণিকের ইস্তফা দেওয়ার পর রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র দিনহাটার বাসিন্দা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, দিনহাটার মানুষের সঙ্গে যিনি খেলা করবেন তাঁকে কেউ মাফ করবে না। যদিও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর নিশীথ প্রামাণিক বলেছেন, একসঙ্গে এমপি এবং এমএলএ পদে থাকা যায় না। সেইজন্য দলের নির্দেশে আমি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।
অন্যদিকে তৃণমূলের দাবি, রাজ্যে বিজেপির ভরাডুবির পর দলের কর্মীদের পাশে থাকার চেয়ে নিজের স্বার্থের কথাই বেশি ভেবেছেন বিজেপি বিধায়ক। সেইজন্য তিনি ভোটে জেতার পরেও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে এমপি থেকে গেলেন। যাঁরা বিজেপির হয়ে প্রচার করলেন, ভোট দিয়ে জেতালেন তাঁরা এখন বুঝুক। শুক্রবার নিশীথ প্রামাণিককে একাধিকবার টেলিফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে বিজেপির কোচবিহার জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা রায় বলেন, নিশীথবাবু এমএলএ পদ ছাড়ায় কর্মীদের একাংশ সাময়িকভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। এ থেকে তাঁদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। তবে তা মিটে গিয়েছে। আমরা বিজেপি কর্মীরা লড়াই সংগ্রাম করে আজ এ জায়গায় পৌঁছেছি। তবে কেউ আমাদের দল ছেড়ে যাননি, আগামিদিনেও কেউ যাবেন না।
দিনহাটার তৃণমূল নেতা বিশু ধর বলেন, দলের কর্মীদের ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন বিধায়ক। ক্ষুব্ধ ও হতাশ বিজেপি কর্মী সমর্থকরা বিভিন্ন এলাকায় দলে দলে আমাদের দলে আসছেন। অনেকেই আসার জন্য আবেদন করছেন। অনেক মণ্ডল সভাপতিও এই তালিকায় আছেন। আমরা তাঁদের সেই আবেদনপত্র খতিয়ে দেখছি।
প্রসঙ্গত, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহার জেলার মধ্যে নজরকাড়া আসন ছিল দিনহাটা। এই আসনে মুখোমুখি লড়াইয়ে নামেন দুই দলের দুই যুযুধান প্রার্থী। তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কমল গুহের ছেলে এলাকার দু’বারের বিধায়ক উদয়ন গুহকে। অন্যদিকে, তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন বিজেপি প্রার্থী এমপি নিশীথ প্রামাণিক। ফল প্রকাশের পর দেখা যায় মাত্র ৫৭ ভোটে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী।