কলকাতায় আক্রান্তদের ৬৫ শতাংশ আবাসনের বাসিন্দা
কলকাতায় গত সাত দিনে যাঁরা করোনায় (covid 19) আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের ৬৫ শতাংশই আবাসনের বাসিন্দা। বাকি ৩৫ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ বাড়িতে থাকেন এবং মাত্র ৫ শতাংশের ঠিকানা শহরের বিভিন্ন বস্তি বলে কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর।
গত বছর করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময়ে বেলগাছিয়া বস্তি ছিল পুর প্রশাসনের চিন্তার কারণ। মাস তিনেক পর থেকেই বস্তিতে আক্রান্তর সংখ্যা কমতে থাকে। তবে গোড়া থেকেই বিভিন্ন আবাসন ও গৃহস্থ বাড়িতে করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। পুরসভার এক কর্তার মতে, ‘বস্তির বাসিন্দারা ঠেকে শিখেছেন। কিন্তু সমাজের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের অনেকে এখনও নিয়ম ভেঙে চলেছেন, যার জেরেই সমস্যা।’
কলকাতার (Kolkata) বিভিন্ন ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর থেকে পুরকর্তাদের বক্তব্য, বস্তির কোনও বাসিন্দা করোনা আক্রান্ত হলেই তৎক্ষণাৎ সেফ হোমে যাওয়ার আর্জি জানাচ্ছেন। পুরসভাও সেই মতো ব্যবস্থা করছে। পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা বস্তিতে খোঁজ নিতে গেলে তাঁদের সাহায্য করার পাশাপাশি কেউ করোনা আক্রান্ত হলে প্রতিবেশীরা সেই বাড়ি বা গোটা তল্লাট জীবাণুমুক্ত করার জন্য পুরসভার দ্বারস্থ হচ্ছেন। বেলগাছিয়ার রসগোল্লা বস্তির বাসিন্দা অনন্ত দত্ত বলছিলেন,’মাঝখানে করোনার প্রকোপ কমতেই পুরসভার পক্ষ থেকে জীবাণুমুক্ত করার কাজ সে ভাবে হচ্ছিল না। সেই সময়ে আমরাই চাঁদা তুলে সপ্তাহে দু’দিন এলাকায় জীবাণুনাশক স্প্রে করেছি।’ বর্তমানে ওই এলাকা পুরোপুরি করোনামুক্ত বলে জানাচ্ছেন অনন্ত।
অথচ শহরের বিভিন্ন আবাসনে বা গৃহস্থ বাড়িতে কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তাঁদের একাংশ যেমন পুরসভার প্রতিনিধিদের কাছে তথ্য গোপন করছেন, তেমনই জীবাণুমুক্ত করার ক্ষেত্রে উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উল্টোডাঙা এলাকার ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর শান্তিরঞ্জন কুণ্ডুর কথায়, ‘আমার ওয়ার্ডের এমন বহু আবাসন আছে, যেখানে করোনা-আক্রান্তর খবর পাওয়ার পর জীবাণুমুক্ত করার কাজ করতে গেলে আবাসনের ভিতরে পুরকর্মীদের ঢুকতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।’ একই অভিযোগ তুলেছেন দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর এলাকার ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর অসীম বসু। তাঁর বক্তব্য,’বস্তির বাসিন্দারা যে ভাবে পুরসভার কর্মীদের দিকে সহযোহগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই আবাসন বা গৃহস্থ বাড়ির বাসিন্দাদের থেকে মিলছে না। ফলে, সমস্যা হচ্ছে।’
পুরসভার পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে কলকাতায় আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশ উপসর্গহীন। ফলে, সংক্রামিতদের চিহ্নিত করতে আবাসনেও বিনামূল্যে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করার কথা গত সপ্তাহেই পুরসভা ঘোষণা করেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাত্র দু’টি আবাসন থেকে সেই টেস্টের জন্য আবেদন জমা পড়েছে। এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে এক পুরকর্তা বলছেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তো যাবতীয় চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বাসিন্দাদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অরুণাভ মজুমদার বলছেন, ‘কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখেছি, বস্তির বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা অনেক বেশি। কিন্তু আবাসনের বাসিন্দাদের লিফ্ট ব্যবহারের সময়ে বার বার মাস্ক পরার কথা বললেও অনেকেই সে কথা কানে তুলছেন না। এই লিফ্টই সংক্রমণের অন্যতম প্রধান কারন।’ গৃহস্থ বাড়িতে সংক্রমণের কারণ প্রসঙ্গে চিকিৎসক অংশুমান মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘এক জন করোনা আক্রান্ত হলে তিনি অন্যদের থেকে নিজেকে দূরে রাখছেন না। ফলে, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।’