তীব্র টিকা সঙ্কট, তিনদিনে রাজ্যে মাত্র ৭৫ হাজার ডোজ
ভ্যাকসিনের তীব্র সঙ্কটের মধ্যে বাংলাকে মাত্র ৭৫ হাজার ডোজের ‘ফ্রি’ কোটাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আগামী তিনদিনে পশ্চিমবঙ্গের জন্য এই বরাতটুকুই রেখেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। আর পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রত্যক্ষ কোভিড যোদ্ধার পাশাপাশি ৪৫ ঊর্ধ্বদেরই এই টিকা দেওয়া যাবে। মোদি সরকার পর্যাপ্ত ডোজ সরবরাহ না করায় কেবল পশ্চিমবঙ্গই নয়, বহু জায়গায় ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ কর্মসূচি সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে বলে খবর। যদিও টিকায় ঘাটতির তথ্য এখনও মানতে নারাজ কেন্দ্র।
স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গকে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন পাঠানো হয়েছে, তার মধ্যে ৯ লক্ষের কিছু বেশি বেঁচে রয়েছে। তা আগে শেষ হোক। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ ১ কোটি ২৫ লক্ষের কিছু বেশি ডোজ ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষ বর্ধন বলেছেন, ‘ভ্যাকসিনের চাহিদা বাড়ছে বলে উৎপাদন বৃদ্ধিতেও জোর দেওয়া হয়েছে। সেই মতো রাজ্যগুলিতেও বরাদ্দ যাচ্ছে। সকলের সহযোগিতায় শীঘ্রই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা জিতব।’ তবে মন্ত্রী মুখে যতই শীঘ্র জেতার আশ্বাস দিন, শহর পেরিয়ে যে হারে এবার সংক্রমণ গ্রামে ঢুকছে, তাতে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র। কারণ একটাই, শহরের তুলনায় গ্রামে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অপেক্ষাকৃত অনুন্নত। তারই জেরে এবার গ্রামের দিকে নজর বাড়াতে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিল কেন্দ্র।
রাজ্যকে পাঠানো নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রবল শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগা রোগী খুঁজে বের করতে হবে। একইসঙ্গে ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় কোনও রোগ থাকলে, তাও নজর করতে হবে। আশা কর্মীদের র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা প্রশিক্ষণও দেওয়ার নির্দেশিকা জারি হয়েছে। করোনার অল্প উপসর্গযুক্তদের ডাক্তারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রেখেই চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তের বেশিরভাগই অক্সিজেন সমস্যায় ভুগছেন। তাই গ্রামে পর্যাপ্ত মাত্রায় অক্সিমিটার এবং থার্মোমিটার রাখতে বলেছে কেন্দ্র। হোম আইসোলেশনে থাকা আক্রান্তের জন্য করোনা কিট বরাদ্দের নির্দেশ হয়েছে। যেখানে প্যারাসিটামল, কাশির সিরাপ, আইভারমেকটিনের পাশাপাশি ঘণ্টায় ঘণ্টায় শারীরিক অবস্থা লিখে রাখার একটি পুস্তিকাও থাকবে।
এরইমধ্যে সংক্রমণের সুনামি পরিস্থিতির মধ্যে আশার কথা শুনিয়েছে ভারত বায়োটেক। ভারতে পাওয়া ডাবল মিউট্যান্ট এবং দ্রুত সংক্রমণে সক্ষম ব্রিটেনের স্ট্রেইনকেও রুখে দিচ্ছে দেশীয় ‘কোভ্যাকসিন।’ ভারতীয় বিজ্ঞানীর মতকেই সম্মতি দিয়েছে অক্সফোর্ডের গবেষণাপত্র। তবে কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে ধন্দ অব্যাহতই। এবার জানানো হয়েছে, প্রথম ডোজের ৮৪ দিন পরেই মিলবে কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ। কারণ, সিরাম ইনস্টিটিউটের এই ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ ১২-১৬ সপ্তাহের মধ্যে নিলেই বেশি কার্যকরী বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। তবে যাঁরা ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছেন, তাঁরা নির্দিষ্ট দিনেই কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ পাবেন। যদিও সেই তারিখ পিছিয়ে তাঁরা ৮৪ দিন পরেও টিকা নিতে পারেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক।