করোনা রুখতে রাজ্যে পৌনে ৩ লক্ষ ‘কোয়াক ডাক্তার’কে প্রশিক্ষণ
রাজ্যের প্রতি জেলায় হাজার হাজার ‘কোয়াক ডাক্তার’ বছরের পর বছর ধরে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে আসছেন। বর্তমানে সরকারিভাবে তাঁরা ‘গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিবেশক’ নামেই পরিচিত। করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে রাজ্যজুড়ে প্রায় পৌনে তিন লক্ষ এই গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিবেশকদের নামানো হচ্ছে। তাঁরা প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করবেন। এর জন্য স্বাস্থ্যদপ্তর থেকে তাঁদের গাইডলাইন ও বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে রাজ্য স্বাস্থ্যভবন থেকে প্রতি জেলায় নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে।
তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পরই করোনা মোকাবিলায় গাইডলাইন দিয়ে রাজ্যের কোয়াক ডাক্তাদের কাজ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারের হিসেব অনুযায়ী, সারা রাজ্যে প্রায় পৌনে তিন লক্ষ কোয়াক ডাক্তার রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ১৩ মে স্বাস্থ্যভবন থেকে সমস্ত সিএমওএইচের কাছে একটি নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকায় কোভিড মোকাবিলার জন্য গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিবেশকদের (ইনফর্মাল হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার) ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের কথা বলা হয়েছে। তাঁরা ইতিমধ্যেই করোনা মোকাবিলায় কাজ করছেন। কিন্তু, তা বিক্ষিপ্তভাবে। এবার তাঁদের সবাইকে গাইডলাইন ও বিশেষ এক ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে মোকাবিলায় নামাতে চাইছে স্বাস্থ্যদপ্তর। তবে, এই প্রশিক্ষণকে সরকারি ভাষায় ‘ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম’ বলা হচ্ছে।
তাই আজ, ১৭ মে থেকে রাজ্যের প্রতি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা ব্লকের গ্রামীণ হাসপাতালে তাঁদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী দু’দিনের মধ্যেই তা শেষ করতে বলা হয়েছে। ১৯ মে প্রতি জেলা থেকে এই কর্মসূচির স্টেটাস রাজ্যের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। তার একটি ফরম্যাট করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে কোন ব্লকে কতজন ইনফর্মাল হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার রয়েছেন এবং তাঁদের মধ্যে কতজনকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তা উল্লেখ করতে হবে। স্বাস্থ্যভবনের ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী, এই প্রোগ্রামের পর কোয়াক ডাক্তাররা মূলত গ্রামীণ এলাকায় হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের গাইড এবং কাউন্সেলিং করবেন। সেই সঙ্গে তাঁরা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে নিজের এলাকার রিপোর্ট পাঠাবেন। সেই ব্যাপারে তাঁদের কাছে ফরম্যাট দেওয়া হবে। সেটা জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার উপরে লেখা থাকবে—‘দৈনিক চিহ্নিত করোনা লক্ষণযুক্তদের তালিকা’। তার নীচে থাকবে তারিখ। তারপর ছ’টি কলাম থাকবে। ক্রমিক সংখ্যা, নাম, বয়স, লিঙ্গ, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর। একেবারে নীচে থাকবে—‘আর পর্যন্ত মোট সংখ্যা’। প্রোগ্রেসিভ রুরাল ফিজিশিয়ান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি মনোজ চক্রবর্তী বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে এই কোয়াক ডাক্তাররা গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিবেশকের সম্মান পেয়েছেন। এবার করোনা মোকাবিলায় তাঁদের প্রশিক্ষণ ও গাইডলাইন দিয়ে কাজ করানো হবে। এটা আরও বড় সম্মান। তাই আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।