রাজ্যপালকে দিয়ে মোদির বাংলা দখলের ‘প্ল্যান’? চলছে জল্পনা
‘পুলিস নীরব দর্শক। বাংলা জ্বলছে। সংবিধানকে মান্য করা হচ্ছে না। রাজ্য সরকার ব্যর্থ।’ কখনও ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগে, কখনও স্রেফ নিজাম প্যালেসের সামনে তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভের প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যপালের লাগাতার হাই ভোল্টেজ প্রতিক্রিয়া একঝাঁক জল্পনা উস্কে দিয়েছে। মোদি সরকার কি বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে চায়? কেন্দ্রের ‘প্ল্যান’ নিয়েই চর্চা তুঙ্গে। আদৌ কতটা সম্ভব রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা? বিশেষ করে ভোটের ফলের পরিপ্রেক্ষিতে? জারি করা হলেও কতদিন চলবে? ৬ মাসের মধ্যেই সংসদে পাশ করাতে হবে। আইন অনুযায়ী একের পর এক এক্সটেনশনও সম্ভব। কিন্তু কত মাস? ইতিমধ্যেই সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বিজেপি নেতারা এই দাবিতে সরব হয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টে মামলাও হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় যখন রাজ্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তখনই শাসক দলের চারজনকে সিবিআই গ্রেপ্তার করায় অসন্তোষ ছড়িয়েছে। এরপরই রাজ্যপালের ট্যুইটে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ। গোটা ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে জল্পনা উঠছে সত্যিই কি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা আছে? তৃণমূল একা নয়, বিজেপি বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, নির্বাচনে পরাজয় হজম করতে পারছে না কেন্দ্রের শাসক। রাষ্ট্রপতি শাসনের সম্ভাবনা নিয়ে অবশ্য মোদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্যই করা হয়নি।
সাম্প্রতিক অতীতে একের পর এক রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেছে মোদি সরকার। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই পিছু হটতে হয়েছে। মুখ পুড়েছে। অরুণাচল প্রদেশে কংগ্রেসের বিদ্রোহী বিধায়কদের নিজেদের শিবিরে নিয়ে এসে বিজেপি চেষ্টা করে এনডিএ সরকার গড়তে। রাজ্যপাল ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ২০১৫ সালের নভেম্বরে বিধানসভার অধিবেশন ডাকেন। রাষ্ট্রপতি শাসনও জারি হয়। বহু চাপানউতোরের মধ্যেই বিদ্রোহী কংগ্রেস নেতার নেতৃত্বে শপথ নেয় নতুন সরকার। কিন্তু কংগ্রেসের আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট কয়েকমাসের মধ্যেই রাজ্যপালের বিধানসভার অধিবেশন এগিয়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তকে খারিজ করে দেয়। ফলে অপসারিত কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীই ফিরে আসেন পদে। উত্তরাখণ্ডে বিদ্রোহী ৯ কংগ্রেস বিধায়কের সাহায্যে ২০১৬ সালে হরিশ রাওয়াত সরকারকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে বিজেপি। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়। কিন্তু হাইকোর্ট ওই সিদ্ধান্তকে খারিজ করে। কংগ্রেস সরকার সে যাত্রায় বেঁচে যায়। সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি যায়। সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায়কে স্থগিত রেখে নির্দেশ দেয় আস্থাভোট করাতে। আস্থাভোটে কংগ্রেস জয়ী হয়।
২০১৯ সালে বিধানসভা ভোটের পর মহারাষ্ট্রে দেখা যায় কোনও দল একক গরিষ্ঠতা পায়নি। শিবসেনা রাজি নয় বিজেপির সঙ্গে সরকার গড়তে। প্রত্যেক দলকে সরকার গড়ার জন্য ডাকার পরও রাজ্যপাল দেখতে পান কারও কাছেই গরিষ্ঠতা নেই। বিরোধীপক্ষ সময় চাইলেও কেন্দ্রীয় সরকারের সুপারিশে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়। এরপর নাটকীয়ভাবে বিজেপি শারদ পাওয়ারের ভাইপো নিজেদের শিবিরে টেনে ভোররাতে রাজভবনে গিয়ে সরকার গড়ার চিঠি দেয় রাজ্যপালকে। রাজ্যপাল তৎক্ষণাৎ রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহারের সুপারিশ করেন। বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ কাকভোরে শপথ নেন। কিন্তু পরদিনই বিরোধীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে। সেই বেঞ্চ ২৪ ঘন্টার মধ্যে গরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে বলে বিজেপি সরকারকে। কিন্তু বিজেপিকে হাস্যকর অবস্থায় ফেলে দিয়ে শারদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার আবার সদলবলে ফিরে যান দাদার দলে। ফলে ফাড়নবিশ বুঝে যান গরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারবেন না। তিনি ইস্তফা দেন। আদৌ বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের কথা মোদি সরকার ভাবছে কি না সেটা স্পষ্ট নয়। তবে ভোটের ফলাফলে যে মোদি বনাম মমতার নার্ভের লড়াই থেমে যাচ্ছে না, সেটা স্পষ্ট।