বাংলায় কোভিড বেড বেড়ে হচ্ছে আড়াই গুণ
হাতে আর বেশি সময় নেই। বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা সত্যি হলে বাংলায় এ মাসের শেষে বা জুনে করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে পারে অনেকটা। সেই পূর্বাভাস সামনে রেখেই যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। নবান্নের সুপারিশ মেনে রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতালে ন্যূনতম ৪০-৫০ শতাংশ বেড করোনা রোগীদের জন্য সংরক্ষিত করতে বলা হয়েছে। গ্রামের মানুষকে করোনার হাত থেকে বাঁচাতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নের উপরে জোর দিতে বলা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলতে বলা হয়েছে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের সুপার ও মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষদেরও এই মর্মে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য দপ্তরের খবর, গত সোমবার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের সুপার এবং মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স বৈঠক করেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। সেই বৈঠকে তিনি জানান, মে মাসের শেষ দিকে রাজ্যে করোনার গ্রাফ অনেকটা ঊর্ধ্বে উঠতে পারে। সে কথা মাথায় রেখেই সরকারি হাসপাতালে মোট যত বেড রয়েছে, তার অন্তত ৪০-৫০ শতাংশ করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ করতে হবে। গ্রামের দিকে যেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই, সেখানে জরুরি ভিত্তিতে নতুন স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তোলার উপরে জোর দিতে বলা হয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার-সহ যেখানে যা প্রয়োজন, তা অবিলম্বে পূরণ করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। এর জন্য এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব।
করোনা মোকাবিলার কাজ সন্তোষজনক না-হওয়ায় দার্জিলিংয়ের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে সতর্ক করে দেন তিনি। দার্জিলিং জেলায় করোনা ইতিমধ্যেই ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়েছে। পাহাড়ের করোনা রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। বেশিরভাগ রোগীকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার কারণ, পাহাড়ে সরকারি হাসপাতালে যা বেড রয়েছে, তার মাত্র ১০ শতাংশ করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দ। তাই রোগীদের অন্যত্র রেফার করতে হচ্ছে।
করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে ঢেলে সাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বাড়ানো, অক্সিজেন এবং অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব মেটানো এবং চিকিৎসক ও নার্সের অপ্রতুলতা কী ভাবে দূর করা যায়, তার জন্য সচেষ্ট হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন সূত্রের খবর, মে মাসের শেষে করোনা আরও ভয়ঙ্কর আকার নিতে পারে, এটা ধরে নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর কথামতো সরকারি হাসপাতালে বেডের সংখ্যা প্রায় আড়াইগুণ বাড়ানো হচ্ছে।
স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, এই মুহূর্তে রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে প্রায় ৮০ হাজারের মতো বেড রয়েছে। তার মধ্যে করোনা বেড আছে ১৩,২১০টি। তা বাড়িয়ে ৩৫-৪০ হাজারে নিয়ে যেতে চাইছে সরকার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, রাজস্থান, ছত্তিসগড়, বিহার, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, তেলঙ্গানা এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। কিন্তু কর্নাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব, অসম, ওডিশা, হিমাচল প্রদেশ, মেঘালয় এবং ত্রিপুরার মতো কিছু রাজ্যে সংক্রমণ এখনও উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে। তার মোকাবিলা করতেই এখন কোমর বেঁধে নেমেছে রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর।
স্বাস্থ্য সচিব ফোন না-ধরলেও ওই দপ্তরের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, ‘করোনার ভয়ে সাধারণ রোগীরা এখন খুব জরুরি প্রয়োজন না-হলে হাসপাতালে আসছেন না। ফলে অনেক বেড ফাঁকা পড়ে থাকছে। তাই হাসপাতালের করোনা বেডের সংখ্যা বাড়লেও সাধারণ রোগীদের খুব একটা অসুবিধে হবে না।’ বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, ‘এখন অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি পারছেন না। অক্সিজেনের অভাবে অনেক রোগী মারা যাচ্ছে। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে আসতে পারলে অবাঞ্ছিত মৃত্যু আটকানো যাবে। করোনা রোগীদের জন্য ব্রিটেনের অনেক হাসপাতালের প্ল্যান্ট ওটিকে আইসিইউতে পরিবর্তিত করা হয়েছিল। এটা খুব ভালো পদক্ষেপ। তবে বেড বাড়ানোর সঙ্গে অক্সিজেন, নার্স, ডাক্তারেরও ব্যবস্থা করতে হবে।’