এবার পুরসভা মারফৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের হোম ডেলিভারির উদ্যোগ রাজ্যের
এক ফোনেই মুশকিল আসান। শুধু প্রয়োজনটুকু বলার অপেক্ষা। মুদির দোকানের সামগ্রী চাই, না ওষুধ, নাকি স্টেশনারি সামগ্রী? যা প্রয়োজন, সেটাই বাড়িতে পৌঁছে যাবে। না, কোনও ই-কমার্স সংস্থা বা হোম ডেলিভারি নয়। এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার (Govt Of West Bengal)। লকডাউনে বাংলার আম জনতাকে স্বস্তি দিতে রাজ্যের পুরসভাগুলির (KMC) মাধ্যমে এই পরিষেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুধু পরিকল্পনা স্তরেই যা থেমে নেই, পুরদপ্তরের তরফে প্রত্যেক জেলাশাসক ও পুরসভার কর্তাদের কাছে নির্দেশ পাঠানোর কাজও শেষ। ফলে দ্রুত পুরসভাগুলি হয়ে উঠবে আরব্য রজনীর সেই জিন, আর তার প্রদীপ থাকবে পুরবাসীর ঘরে ঘরে।
রাজ্য প্রশাসনের উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার—লকডাউনে ঘরের বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমানো। আরও স্পষ্টভাবে বললে, প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহের চেষ্টায় সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা কমানো। অভূতপূর্ব এই পরিকল্পনা ঘিরে ইতিমধ্যেই স্থানীয় প্রশাসন মহলে সাড়া পড়ে গিয়েছে। সরকারি ভাবনাকে স্বাগত জানাচ্ছে বিদগ্ধ মহলও। রাজ্য দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারই পারে মানুষের জন্য এমন উপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন তথা বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এ এক বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত। সাধুবাদ জানাতেই হবে।
কার্যত লকডাউনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে আমজনতাকে প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এতেও ভিড় এড়ানো যাচ্ছে না। তাই আম জনতার বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন আরও কমাতে নিত্যপণ্যের ‘হোম ডেলিভারি’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে রাজ্যের সমস্ত পুরসভাকে। ১৮ মে পুরদপ্তরের প্রধান সচিব এবিষয়ে নির্দেশিকা জারি করে রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসক ও পুরকর্তাদের পাঠিয়ে দিয়েছেন।
ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পুরসভাগুলিকে মুদিখানা সামগ্রী, ওষুধ বা স্টেশনারি সামগ্রী সহ প্রয়োজনীয় জিনিস বাসিন্দাদের চাহিদা মতো পৌঁছে দিতে হবে। এবিষয়ে অবিলম্বে সোশ্যাল মিডিয়ায়, লিফলেট বিলি বা মাইকিং করে প্রচার করতে হবে। পুরসভাগুলি প্রয়োজন মতো কোনও ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর একাজের জন্য চালু করবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে এই উদ্যোগে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়, নিঃসঙ্গ প্রৌঢ়-প্রৌঢ়াদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা, সত্তরের বেশি বয়সি মানুষের জন্য বিশেষ নজরদারি ও টেলিমেডিসিনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। আবার অভাবী মানুষদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করার নির্দেশও জারি হয়েছে। এভাবেই এবারের লকডাউনে আম জনতার যে কোনও প্রয়োজনে হাজির থাকবেন একঝাঁক পুরকর্মী।