বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

আসছে নারাচের অনুবাদ, আপ্লুত লেখক দেবারতি

May 20, 2021 | 3 min read

ইংরেজি বহু বই বাংলায় অনুদিত হয়েছে। বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুদিত সাহিত্যের সংখ্যা নেই এমন নয় তবে সংখ্যাটা কম। বেশিরভাগই ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়। ঠিক উলটোটা হচ্ছে, বাংলার সাহিত্য যাচ্ছে বিশ্বের দরবারে। বিশ্ববিখ্যাত হারপার কলিন্স অধিগ্রহণ করেছে দেবারতির ‘নারাচ’ উপন্যাস। সারা বিশ্বে বাঙালি সাহিত্যিক দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের এই সৃষ্টিকে তারা ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে।

সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা হারপার কলিন্স বিপুল অঙ্কের বিনিময়ে সাহিত্যিক দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের ‘নারাচ’ (narach) উপন্যাসকে অধিগ্রহণ করেছেন ইংরেজিতে প্রকাশের জন্য। লেখিকার দাবী, বাংলা সাহিত্যে অনূর্ধ্ব পঁয়ত্রিশ কোনও সাহিত্যিকের উপন্যাস আজ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে এইভাবে অধিগৃহীত হয়নি। হারপার কলিন্সের তরফে জানানো হয়েছে, গত দুই দশকে এত বিপুল অঙ্কের বাণিজ্যিক চুক্তিও বাংলা সাহিত্য জগতে হয়নি।

উনবিংশ শতকের প্রেক্ষাপটে লেখা দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের বহুস্তরীয় উপন্যাস নারাচ পত্রভারতী থেকে প্রকাশিত হয় ২০২০ সালের আগস্ট মাসে। কোভিড মহামারীতেও প্রকাশের মাত্র আটমাসের মধ্যেই নিঃশেষিত হয়েছে এর দশটি মুদ্রণ। পাঠকমহলে বহুলপ্রশংসিত এই উপন্যাস সমালোচক ও বাণিজ্যিক দুই মহলেই অত্যন্ত আলোচিত। হারপার কলিন্স বিবৃতিতে দিয়ে জানিয়েছে, ‘সাহিত্যিক দেবারতি মুখোপাধ্যায় নিজে পেশায় উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক। বয়সে তরুণ হলেও বর্তমান বাংলা সাহিত্যে স্বল্প কয়েকবছরেই তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাঁর প্রতিটি উপন্যাসই মৌলিক ও পরিশ্রমলব্ধ প্লটের ওপর লেখা। তাঁর বই বিক্রির হারও ঈর্ষণীয়। নারাচ তাঁর একটি মাইলস্টোন উপন্যাস। সেই উপন্যাস বিশ্বদরবারে পৌঁছনোর সুযোগ পেয়ে আমরাও আনন্দিত ও গর্বিত।’

এই বিষয়ে উপন্যাসটির বাংলা প্রকাশক পত্রভারতীর কর্ণধার ও পাবলিশার এন্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের বলেন, ‘এই খবর আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত এবং অত্যন্ত আনন্দের। হারপার কলিন্স বিশ্বের প্রথম চার বড় প্রকাশকদের মধ্যে একটি। দেবারতি বয়সে অত্যন্ত নবীন এবং এর মধ্যেই বিপুল জনপ্রিয়। ওর প্রথম ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস ‘নারাচ’ যে এইভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমাদৃত হবে, এত বড় মাপের প্রকাশক সেটিকে অধিগ্রহণ করবেন, তা আমাদের আশাতীত। আমরা গর্বিত। শুধু তাই নয়, এই সংবাদ বাংলার সমস্ত তরুণ লেখকদের অনুপ্রেরণা জোগাবে। আঞ্চলিক ভাষাতে লিখেও যে বিশ্বদরবারে এত অল্পসময়ে পৌঁছনো যায়, তা আশার আলো দেখাবে বাংলা সাহিত্যপ্রেমীদের।’

পত্রভারতীর তরফে এষা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘হারপার কলিন্সের তরফে বইটি অনুবাদ করছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনুবাদক অরুণাভ সিনহা। বইটি বিশ্বমহলে প্রকাশিত হবে আগামী বছরের মাঝামাঝি।’

সাহিত্যিক দেবারতি মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘নারাচ উপন্যাসে কাল্পনিক চরিত্রের মাধ্যমে আমি বেদ, বেদোত্তর স্মার্ত সাহিত্য ও উনবিংশ শতকের প্রান্তিক এবং বিস্মৃত মানুষ ও মেয়েদের প্রকৃত অবস্থা অন্বেষণের চেষ্টা করেছি। নবজাগরণ, সমাজ সংস্কার এইসব বহু-আলোচিত দিক ছাড়াও উনিশ শতকে অবধারিত ভাবেই ছিল কিছু প্রান্তিক মানুষ, যাদের কথা ইতিহাস ভুলে গিয়েছে। সেই প্রান্তজনদের অব্যক্ত সংগ্রাম বিস্তৃত পরিসরে তুলে ধরা হয়েছে। গোটা বিশ্বজুড়ে দাস ব্যবস্থা নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও শ্রমিক যোগান দেওয়ার তাগিদে সেইসময়ে হাজার হাজার মানুষকে চালান করা হয় ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে, আখচাষের মজুর হিসাবে। পাঁচবছরের ইন্ডেঞ্চারের চুক্তি থাকলেও সেই পাঁচবছর তাঁদের পরাধীন করে রাখে আমৃত্যু। ‘নারাচ’ এ তুলে ধরা হয়েছে তাঁদের অমানুষিক জীবন আলেখ্য। অন্যদিকে লখনউয়ে নির্বাসিত নবাব ওয়াজেদ আলী শাহ কলকাতায় এসে মেটিয়াবুরুজে গড়ে তুলেছেন একটুকরো লক্ষনউ। কিন্তু তাঁর সেই আনন্দনগরী যেন কলকাতা শহরে বড় ব্রাত্য। সমান্তরালে রমরমিয়ে চলছে অষ্টমবর্ষে গৌরীদানের সেই নিয়ম। হিন্দু ধর্ম হাঁসফাঁস করছে কুসংস্কার ও জরাজীর্ণ অপভ্রংশজাত শৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে। মেয়েরা অসম্ভব বঞ্চিত, ব্রাত্য, অবহেলিত। প্রতিবছর নীরবে অকালকুসুমের মত ঝরে যাচ্ছে অপরিণত নাবালিকারা, স্বামীর ধর্ষণে। রক্ষণশীল সমাজ তা নিয়ে নিরুত্তর। পরকালের দোহাই দেখিয়ে সহবাস সম্মতি আইন তাঁরা কিছুতেই পাশ হতে দেবেন না। হিন্দু শাস্ত্রে বিবাহ বা সহবাসে মেয়েদের কোন সম্মতির অধিকারই নাকি নেই।কিন্তু প্রকৃত শাস্ত্র কী? চতুর্বেদ নাকি বেদোত্তর যুগের সংহিতাগুলি? প্রাচীন বৈদিক যুগে নারীর যে সহজাত অধিকার ছিল, তা পরবর্তীকালে খর্ব হল কেন? এই কাহিনীর মাধ্যমে আমি সেই উত্তর অন্বেষণের চেষ্টা করেছি।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘এতে রয়েছে ১৮৮৭ সালের সেন্ট লরেন্স জাহাজডুবিও, যাতে মারা যান আটশোরও বেশি ভারতীয়, বিশ্বখ্যাত টাইটানিক জাহাজের ভরাডুবির প্রায় পঁচিশবছর আগে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক জাহাজডুবিকে কীভাবে চাপা দিয়েছিল ব্রিটিশরা, নেটিভদের তুচ্ছ প্রাণ হারিয়ে গিয়েছিল ইতিহাসের গর্ভে, রয়েছে তারই বিষাদ আখ্যান। রয়েছেন প্রথম বাঙালি মহিলা চিকিৎসক ডঃ কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ও। হারপার কলিন্স এই উপন্যাসকে ইংরেজিতে প্রকাশ করতে চলেছেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এতে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে আমার এই উপন্যাস পৌঁছবে। সমগ্র বিশ্বের কাছে পৌঁছবে ভারতের কিছু হারিয়ে যাওয়া অধ্যায় যা দুঃখের, একইসঙ্গে বিস্ময়ের।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Debarati Mukhopadhyay, #narach

আরো দেখুন