একদা মুখ্যমন্ত্রী মোদিও সংঘাতে জড়িয়েছিলেন রাজ্যপালের সাথে
সংবিধানের ৩৬১(১) ধারায় রাজ্যপাল বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন হলেও যে মূহুর্তে তিনি মুখ্যমন্ত্রী বা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রীসভার সাথে আলোচনা না করে কোন সিদ্ধান্ত নেবেন সেই মূহুর্তে তাঁর ওপর থেকে সাংবিধানিক রক্ষা কবজ উঠে যাবে। নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকা কালীন তাঁকে আর তাঁর মন্ত্রীসভার সাথে আলোচনা না করায় মনমোহন সিং সরকাররের নিযুক্ত রাজ্যপাল কমলা বেনিওয়ালের ক্ষমতা সীমা নির্ধারণের জন্যে গুজরাটের তৎকালীন মন্ত্রীসভা সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়। সেই সময় নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন গুজরাট মন্ত্রীসভার সাথে কোনরকম আলোচনা না করেই গুজরাটের লোকাযুক্ত পদে নিজের ইচ্ছে মতো নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। এই ঘটনাকে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ সম্পূর্ণ বেআইনি বলে ঘোষণা করে।
সুপ্রিম কোর্টের রায় ছিল রাজ্যের সাথে সংঘাতে রাজ্যপালের অপসারণ সম্ভব। নিজের ইচ্ছে মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া বা রাজ্য সরকারের কর্ম কাণ্ডে হস্তক্ষেপ করার বিন্দু মাত্র অধিকার নেই রাজ্যপালের। বাংলায় রাজ্যপাল হওয়ার পর থেকে জগদীপ ধনখড় যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভাকে অন্ধকারে রেখে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাতে দেশজুড়ে রাজ্যপালের ক্ষমতা সীমা নিয়ে আবার নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজ্যপাল রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখে যদি কোন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তাঁকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে অপসারণের নিদান আছে সংবিধানে।
গুজরাট মন্ত্রীসভা বনাম রাজ্যপাল কেসে সুপ্রিমকোর্ট স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করে, রাজ্যপাল সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মন্ত্রীসভার পরামর্শ মেনে চলতে বাধ্য। যদি না রাজ্যপালকে সংবিধানসম্মত ভাবে এ নমিনি মর্যাদা দেওয়া থাকে। বাংলার রাজ্যপালকে এই ধরনের কোন ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
চলতি মাসের ৭ মে বাংলার রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভার সাথে কোন রকম আলোচনা না করেই সিবিআইকে বাংলার বিধায়কদের গ্রেপ্তার করার অনুমতি দেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। শুধুন তাই নয় রাজ্য সরকারের কোন পরামর্শ না মেনেই বিজেপি নেতাদের কথা মতো রাজ্যপাল কখনো সন্ত্রাস কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গেছেন বা কখনো জেলা শাসকদের সরাসরি ডেকে বৈঠক করা বা পুলিশ সুপারকে ডাকার মতো একের পর এক অসাংবিধানিক কাজ করে গেছেন।
এক্ষেত্রে সাংবিধানিকভাবে অবশ্যই অপসারণ করা যায় রাজ্যপালকে। অপসারণের জন্যে প্রথমে সাবস্টেনটিভ প্রস্তাব আনতে হবে। রাজ্যসভা বা লোকসভার যেকোন সাংসদ এই প্রস্তাব আনতে পারেন। প্রস্তাব গৃহীত হলে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে সংসদে আলোচনা হবে। এই প্রস্তাবের উল্লেখ রয়েছে রাজ্যসভা ও লোকসভার রুলবুকে।