প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে রাজ্যপালও নারদে সাক্ষী? প্রশ্ন বাড়ছে নিরপেক্ষতা নিয়ে
নারদ-তদন্তে (Narada) চার নেতা-মন্ত্রী এবং এক আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই, তাতে বেনজির ভাবে সাক্ষী তালিকায় নাম রয়েছে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের (Jagdeep Dhankhar)। আদালত সূত্রে জানা যাচ্ছে, মোট ৬১ জন সাক্ষীর তালিকায় ৫২ তম সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে বাংলার রাজ্যপালকে। এই ঘটনাকে নজিরবিহীন বলছেন বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরা। তাঁদের অনেকের যুক্তি, গ্রেপ্তারিতে অনুমোদন দেওয়ায় তাঁকে হয়তো সাক্ষীর তালিকায় রাখা হয়েছে। তবে, এর আগে রাজ্যে কোনও মামলায় রাজ্যপালকে সাক্ষী হিসেবে দেখা যায়নি। যদিও সাক্ষ্যগ্রহণের সময় প্রয়োজনে আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়বেন কি না রাজ্যপাল, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
২০১৭ সালে নারদ স্টিং অপারেশন মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। সেই মামলাতেই গত সোমবার রাজ্যের চার নেতা-মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেন গোয়েন্দারা। ওই দিনই বিশেষ সিবিআই আদালতে চার্জশিট পেশ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেখানে সাক্ষীর তালিকায় রাজ্যপালের নাম থাকায় চাঞ্চল্য আইন মহলে। আদৌ কি নিম্ন আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসতে পারেন রাজ্যপাল? তাঁকে কী ভাবেই বা সাক্ষী তালিকায় রাখা যায়? তাঁকে কি জবাবদিহি করতে হতে পারে আদালতের কাছে? নিম্ন আদালতের বিচারক না সাংবিধানিক পদে থাকা রাজ্যপাল, কার ক্ষমতা ও এক্তিয়ার বেশি? অনেকে অবশ্য মনে করছেন, রাজ্যপালকে সাক্ষী তালিকায় রেখে মামলার গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে হাইকোর্টের আইনজীবী তথা মিজোরামের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব বলেন, ‘বেনজির ঘটনা। সংবিধানের সঙ্গে মশকরা করা হচ্ছে। রাজ্যপাল হলেন রাজ্যের সাংবিধানিক রক্ষাকর্তা। তিনি গ্রেপ্তারিতে অনুমোদন দিয়েছেন বলে হয়তো তাঁকে সাক্ষী তালিকায় রাখা হয়েছে। তবে স্বাধীনতার পরে কোনও রাজ্যে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে পড়ছে না।’ বর্ষীয়ান আইনজীবী তথা রাজ্য বার কাউন্সিলের সদস্য নাসিরুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলায় এর নজির নেই। তবে আদালত চাইলে তাঁকে আদালতে উপস্থিত হতে হবে। রাজ্যপালের সাক্ষ্যগ্রহণে কোনও আইনি বাধা নেই।’ আদালত চাইলে রাজ্যপালের কাছে বিষয়টি বিশদে জানতে চাইতে পারে বলে জানাচ্ছেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী শীর্ষণ্য বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘আমাদের রাজ্যে সাম্প্রতিক অতীতে এমন ঘটনার নজির নেই। তবে রাজ্যপালকে সাক্ষী হিসেবে রাখতে আইনি কোনও বাধা নেই। তাঁর সাক্ষ্যগ্রহণে আদালত কমিশন গঠন করতে পারে। তবে রাজ্যপালের সাক্ষ্যগ্রহণের প্রয়োজন আছে কি না, সে সিদ্ধান্ত আদালত নেবে।’
এমনিতেই চার নেতা-মন্ত্রীর গ্রেপ্তারি এবং চার্জশিট জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যপাল কী ভাবে অনুমতি দিলেন সিবিআইকে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিধানসভার অধ্যক্ষকে এড়িয়ে এ ভাবে রাজ্যপাল চার্জশিটে অনুমতি দিতে পারেন না বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। অনেক আইনজ্ঞও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এরই মধ্যে সিবিআইয়ের সাক্ষী তালিকায় রাজ্যপালের নাম থাকা নিয়ে নতুন করে চাপানউতোর শুরু হয়েছে।
এনিয়ে ধৃত বিধায়ক মদন মিত্রের আইনজীবী নীলাদ্রি ভট্টাচার্য বলেন, ‘কোনও মামলায় রাজ্যপাল সাক্ষ্য দেবেন, এটা এই প্রথম শুনছি।’ রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের আইনজীবী অনিন্দ্য রাউত বলেন, ‘উনি যে গ্রেপ্তারিতে অনুমোদন দিয়েছেন সেটা সাক্ষী হিসেবে তাঁকে নিশ্চিত করতে হবে। তবে রাজ্যপালের নাম সাক্ষীর তালিকায় থাকা রাজ্যে এই প্রথম। এর আগে এমন ঘটনা শুনিনি।’