রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

হারের পর বাংলায় ৪০ কোটি টাকার পার্টি অফিস এখন বিজেপির বোঝা

May 22, 2021 | 2 min read

আশা ছিল বাংলা জয় করে গোটা দেশে জোরালো বার্তা দেওয়ার। সেই লক্ষ্যেই বছর চারেক আগে থেকে প্রতিটি সাংগঠনিক জেলায় একটি করে কেন্দ্রীয় পার্টি অফিস (Party Office) গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিজেপি (BJP)। আধুনিক ও বিলাসবহুল সেই সব অট্টালিকা নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেনি পদ্মশিবির। তার আগেই বাংলায় ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন কার্যত মাঠে মারা গিয়েছে। কিন্তু জেলায় জেলায় অট্টালিকা গড়তে ইতিমধ্যে প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে দিল্লি পার্টির কোষাগার থেকে। সবথেকে মজার কথা, দূরবর্তী জেলাগুলিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল পার্টি অফিস তৈরি হলেও বিজেপির রাজ্য দপ্তর চলে ভাড়াবাড়িতে। সেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আমল থেকেই সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের অদূরে ৬, মুরলীধর সেন লেনের দপ্তরটি ভাড়া নেওয়া। একইভাবে ভাড়ায় চলে হেস্টিংসের নির্বাচনী অফিসও। ভোটে বিপুল বিপর্যয়ের পর পার্টি অফিসগুলি বোঝা বাড়াচ্ছে কেন্দ্রের শাসকদলের। দলের অন্দরে মাথাচাড়া দিচ্ছে বিতর্কও। 

বিজেপি সূত্রে খবর, বেশিরভাগ জেলায় এক থেকে তিন বিঘা জমি মোটা টাকায় কিনেছে দল। সেখানে চার থেকে পাঁচতলা পেল্লায় বাড়িও তৈরি হয়েছে। থাকা-খাওয়া, একসঙ্গে ৫০০ জনের বেশি মানুষের মিটিং করার জায়গা সহ যাবতীয় আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। অনেক ক্ষেত্রে অবশ্য জমি কিনেও স্থানীয় পুরসভার আপত্তিতে নির্মাণ কাজ আটকে। ইতিমধ্যেই যেখানে পার্টি অফিস তৈরি কিংবা জমি কেনা হয়েছে সেগুলি হল—কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, শিলিগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বিষ্ণুপুর, আসানসোল, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, শ্রীরামপুর, ঝাড়গ্রাম, তমলুক, উলুবেড়িয়া ইত্যাদি। জলপাইগুড়িতে কয়েক কোটি টাকা ঢাললেও পরবর্তী সময় জানা যায় যে জমিতে দপ্তর তৈরি হবে, সেটি ওয়াকফ সম্পত্তি। ফলে শুরু হয়েছে তীব্র জটিলতা। অন্যদিকে, উত্তর মুর্শিদাবাদ, বারাসত, কাটোয়া, কলকাতা উত্তর, কলকাতা দক্ষিণ, প্রদেশ অফিস, মথুরাপুর, ডায়মন্ডহারবার, হাওড়া সদর, কাঁথি, ঘাটাল ইত্যাদি জায়গায় পার্টি অফিসের কাজ এতটুকুও এগয়নি।

এ প্রসঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের দুই জেলা সভাপতি বলেন, খাতায়-কলমে ৪০ কোটি টাকা বলা হলেও বাস্তবে আরও বেশি খরচ হয়েছে। তাদের বক্তব্য, দিলীপ ঘোষ এবং সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই জেলায় জেলায় পার্টি অফিস তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু দলের অন্দরেই একাংশ এই কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দুই জেলা সভাপতি সরাসরি রাজ্য বিজেপির কোষাধ্যক্ষ সাওয়ার ধানানিয়ার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছেন। তাঁদের বক্তব্য, বহু জেলায় জমি কেনা কিংবা বাড়ি তৈরির কাজে সময় মতো টাকা দেননি ধানানিয়া। তাই পাঁচ বছর বাদেও পার্টি অফিসগুলির কাজ অর্ধসমাপ্ত। শুক্রবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য বলেন, ‘এই ধরনের অভিযোগ কেউ করতেই পারেন। আমি এই নিয়ে কোন মন্তব্য করব না। তবে পার্টি অফিস তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে যায়নি।’

এদিকে, জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে, ৪০ কোটি টাকায় জেলায় জেলায় দপ্তর তৈরি হলেও ভোটে এই শোচনীয় হারের পর পার্টি অফিসে লোক আসছে না। তবে কি এই বিপুল অর্থ কার্যত জলে গিয়েছে? দলের অপর একটা অংশের বক্তব্য, ভোট-পরবর্তী হিংসায় এই অফিসগুলি সহায়ক হয়েছে। একাধিক জেলায় অত্যাচারিত সাধারণ বিজেপি কর্মীরা সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন অসমাপ্ত সেই পার্টি অফিস তৈরির কাজ আদৌ শেষ হয় কি না, সেটাই দেখার! 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Party Office, #bjp

আরো দেখুন