কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

কালো ছত্রাকের ছোবলে প্রথম মৃত্যু কলকাতায়

May 22, 2021 | 2 min read

কালো ছত্রাকের ছোবলে প্রথম মৃত্যুর সাক্ষী হল কলকাতা (Kolkata)। শুক্রবার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে মারা যান হরিদেবপুরের শম্পা চক্রবর্তী (৩২)। তিনি করোনার পাশাপাশি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের (মিউকরমাইকোসিস) শিকার ছিলেন। তাঁকে নিয়ে রাজ্যে মোট পাঁচ জন দুরারোগ্য এই সংক্রমণে আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হয়েছেন।

ফলে করোনাকালে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের মোকাবিলাতেও এ বার তৈরি হচ্ছে রাজ্য সরকার। আরও কেউ এ অসুখে আক্রান্ত কি না, তা নিয়ে সব জেলাকে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যভবন থেকে। বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারও এ নিয়ে দফায় দফায় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বাস্থ্যকর্তারা। মিউকরমাইকোসিস নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। এর পাশাপাশি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস (Black Fungus) চিকিৎসার প্রোটোকল ও একটি নির্দেশিকাও তৈরি করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর।

রাজস্থান ও তেলঙ্গানা সরকার ইতিমধ্যেই মিউকরমাইকোসিসকে (mucormycosis) মহামারী ঘোষণা করেছে। মহারাষ্ট্র ও গুজরাটেও ক্রমাগত থাবা চওড়া করে চলেছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। অবস্থা দেখে সব রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বৃহস্পতিবার নির্দেশ দেয়, মিউকরমাইকোসিসকে মহামারী আইনের আওতায় এনে ‘নোটিফায়েবল ডিজিজ’ বলে ঘোষণা করা হোক। এর মধ্যে গত ১৩ মে রাজ্যে চার জন ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল। তবে তাঁরা ভিন রাজ্যের (বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিসগড়) বাসিন্দা ছিলেন, বাংলায় চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন।

সেই অর্থে হরিদেবপুরের শম্পাই ছিলেন রাজ্যের প্রথম ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত। কোভিড-আক্রান্ত শম্পার ডায়াবিটিসও ছিল। তাঁকে প্রায় ১২ লিটার/মিনিট হারে অক্সিজেন দেওয়ার পাশাপাশি মিউকরমাইকোসিসের ওষুধ অ্যাম্ফোটেরিসিন-বি দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। শুক্রবার ভোরের দিকে মারা যান তিনি। তাঁর সাইনাস, চোয়াল, চোখ ও মস্তিষ্ক ভয়াবহ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কালো ছত্রাকে।

এদিন স্বাস্থ্যভবনের বৈঠকে মিউকরমাইকোসিসের চিকিৎসার পাশাপাশি প্রতিরোধেও জোর দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের পাশাপাশি বৈঠকে ছিলেন জনস্বাস্থ্য শাখার আধিকারিকরা। বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বিভূতি সাহা, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জ্যোতির্ময় পাল, ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজি বিশেষজ্ঞ শান্তনু মুন্সি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুই এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি (পশ্চিমবঙ্গ) প্রীতম রায়।

বৈঠকে ঠিক হয়, আপাত-অপরিচিত এই রোগের একেবারে প্রাথমিক লক্ষণ-উপসর্গ, তার চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ নিয়ে অবিলম্বে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে চিকিৎসকদের। তার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হয়। তৈরি করা হয় মিউকরমাইকোসিসের ম্যানেজমেন্ট প্রোটোকল ও নির্দেশিকা। তবে বৈঠকে বার বারই উঠে আসে করোনা রোগীদের উপর স্টেরয়েডের প্রয়োগের প্রসঙ্গ। পাশাপাশি, ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণের কথাও বলা হয়। ঠিক হয় যে চিকিৎসকদের সতর্ক করা হবে এই বলে যে, করোনা রোগীদের সাইনাসাইটিস, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, চোয়ালে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গগুলোকে যেন লঘু করে দেখা না-হয়।

কোভিড রোগীদের ঝুঁকি কোথায়?

কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় যে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হচ্ছে, তা ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু স্টেরয়েড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়, রক্তচাপও বাড়িয়ে দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াই সম্ভবত মিউকরমাইকোসিস সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে

কখন সতর্ক হবেন:

১. সাইনাসাইটিস, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা নাকে সর্দি জমা, নাক দিয়ে সর্দি বের হওয়া (কালচে/রক্তসহ), চোয়ালের হাড়ে ব্যথা

২. মুখের এক দিকে ব্যথা, অসাড় হয়ে আসা বা জ্বালা করা।

৩. নাকের আগায় বা চার পাশে কালচে হয়ে গিয়ে ত্বকের রং বদলে যাওয়া।

৪. দাঁতে ব্যথা, দাঁত আলগা হয়ে আসা, চোয়াল আটকে যাওয়া।

৫. চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া বা দুটো করে দেখা ও চোখে ব্যথা, জ্বর, ত্বকে জ্বালা

৬. বুকে ব্যথা, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা বাড়তে থাকা।

কী ভাবে ঠেকানো যায়?

১. রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নিয়মিত পরীক্ষা করা

২. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড নয়

৩. শরীরে ফাঙ্গাসের উপস্থিতি বুঝতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে দেরি না-করা

৪. সংক্রমণের উপসর্গকে অবহেলা না-করা

৫. ধুলোবালি থেকে নিরাপদে থাকতে মাস্ক পরতে হবে

৬. বাগান পরিচর্যার সময়ে গ্লাভস পরা জরুরি

৭. অক্সিজেন থেরাপির সময়ে হিউমিডিফায়ারে ভরার জল ফুটিয়ে নেওয়া

৮. চিকিৎসা শুরু করতে একটুও সময় নষ্ট না-করা


TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Black Fungus

আরো দেখুন