বিদেশের দুয়ারে টিকা ভিক্ষা কেন্দ্রের
শুধু টেলি-বৈঠক কিংবা ভিডিও কনফারেন্স যথেষ্ট নয়। দেশের ভ্যাকসিন সঙ্কট (Vaccine Crisis) সামাল দিতে স্বয়ং বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর (S Jaishankar) এবার চললেন আমেরিকা (USA)। এর কারণ একটাই—বিদেশি সংস্থাগুলির উপর মোদি সরকারের অত্যধিক নির্ভরশীলতা। এই মানসিকতা এমন জায়গায় গিয়েছে যে, বিদেশ গিয়ে ঝুলি পাততেও পিছপা হচ্ছে না সরকার। এজেন্ডা হিসেবে অবশ্য দেখানো হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা। নেপথ্যে, আমেরিকার সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ভারতে ভ্যাকসিন আনার ব্যবস্থা করা। একইসঙ্গে আমেরিকা থেকে কাঁচামাল না পাওয়ায় ভারতের ভ্যাকসিন নির্মাতারা যে সমস্যায় পড়ছেন, সে বিষয়েও মার্কিন সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন বিদেশমন্ত্রী।
২৪ থেকে ২৮ মে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মার্কিন সফর করবেন। তাঁর মন্ত্রক জানিয়েছে, বিদেশমন্ত্রী রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেইরেসের সঙ্গে বৈঠক করার পাশাপাশি আলোচনায় বসবেন মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গেও। যাতে আমেরিকার ডিফেন্স আইনের গেরোয় আটকে থাকা ভ্যাকসিন উৎপাদনের কাঁচামাল ভারতে দ্রুত সরবরাহ করা যায়, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে সেই আর্জিই বাইডেন প্রশাসনকে জানাবেন জয়শঙ্কর। এই প্রশাসনিক স্তরের বৈঠকগুলির পাশাপাশি কোভিড সংক্রান্ত সহযোগিতা, প্রধানত ভ্যাকসিনের চাহিদা নিয়েই বিদেশমন্ত্রী মার্কিন সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনা করবেন। লক্ষ্য, যত দ্রুত সম্ভব নির্দিষ্ট কোনও চুক্তিতে আসা। ফাইজার, জনসন অ্যান্ড জনসন এবং মডার্না, এই তিনটি আমেরিকান ভ্যাকসিন দেশ-বিদেশে সবথেকে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। মোদি সরকার গত বছর থেকেই আত্মনির্ভর ভারতের স্লোগানে অতিরিক্ত নির্ভর। তাই প্রথম থেকে বিদেশি ভ্যাকসিন নির্মাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রয়োজনতাই বোধ হয়নি। বরং ভারতীয় ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক বেশি সক্রিয় ছিল কেন্দ্র।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সিরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেকের উপর নির্ভর করে ১৩৫ কোটির দেশে গণটিকাকরণে বহু সময় লাগবে। বিরোধীরা একাধিকবার মোদি সরকারের কাছে দাবি করেছে, অবিলম্বে বিদেশি ভ্যাকসিন আনার ব্যবস্থা করা হোক। বিজেপি তথা মোদি সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী বিরোধীদের কটাক্ষ করে বিদেশি ভ্যাকসিন সংস্থার এজেন্টের তকমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্রমেই স্পষ্ট হয়েছে দেশজুড়ে ভ্যাকসিনের হাহাকার। এখন রাশিয়ার স্পুটনিক এসেছে। কিন্তু সেটাও যথেষ্ট নয়। এবার তাই আমেরিকার ভ্যাকসিনের উপর নির্ভর করতেই হবে। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়েছে কাঁচামাল নিয়ে। আমেরিকা থেকে সাপ্লাই বন্ধ। সেই সমস্যা মেটানোটাই এই মুহূর্তে প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ। না হলে চাহিদার ধারেকাছেও কোভিশিল্ডের উৎপাদন পৌঁছতে পারবে না। পাশাপাশি যাতে আমেরিকার ভ্যাকসিনগুলিও ভারতে পাঠানোর জন্য মার্কিন সরকারের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এজেন্সির অনুমোদন পায়, সেটা নিয়েও কথা বলবেন বিদেশমন্ত্রী। ভারতের লক্ষ্য, আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে দেশে অন্তত ২১৬ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ নিশ্চিত করা। আর তাহলেই সম্ভব হবে চলতি বছরের মধ্যে গোটা দেশকে ভ্যাকসিন প্রদান। এজন্য আপাতত প্রয়োজন? ৭৫ হাজার কোটি টাকা।এই মুহূর্তে