ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত কলকাতা-হাওড়া-বিধাননগর কর্পোরেশন
গত বছর আম্পানে লণ্ডভণ্ড হয়েছিল কলকাতা সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গ। বছর ঘুরতেই দ্বিগুণ গতিবেগে আছড়ে পড়ছে চলেছে ঘূর্ণিঝড় যশ, আভাস দিচ্ছে হাওয়া অফিস। এদিকে, সম্ভাব্য বিপর্যয় রুখতে প্রশাসনও কোমর বেঁধে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় নিয়ে শনিবার বৈঠক করেন কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। প্রশাসক বোর্ডের অন্যান্য সদস্য ছাড়াও পুর কমিশনার বিনোদ কুমার ও অন্যান্য পদাধিকারিরা সেই ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন কেইআইআইপি এবং সিইএসসি’র অধিকারিকরাও। সূত্রের খবর, বিভিন্ন বরোর দায়িত্ব প্রশাসক বোর্ডের সদস্যদের ভাগ করে দিয়েছেন ফিরহাদ। সূত্রের খবর, ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, গত বছরের মতো অবস্থা যেন না হয়, সেই চেষ্টাই করতে হবে। আম্পানের কথা মাথায় রেখেই উপড়ে যাওয়া গাছ দ্রুত রাস্তা থেকে সরাতে হবে। আগামী ২৩ মে থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে কলকাতা পুরসভার কন্ট্রোল রুম। সিইএসসি জানিয়েছে, প্রতিটি ওয়ার্ডেই টিম রাখবে তারা। কোনও বাতিস্তম্ভ বা ফিডার বক্স থেকে যাতে তার বেরিয়ে না থাকে, তা নিশ্চিত করবে সিইএসসি। রাস্তার গর্তগুলি বুজিয়ে ফেলা হবে। গালিপিটগুলি পরিষ্কার রাখতে বলা হয়েছে। যাতে জল না জমে। ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিপজ্জনকভাবে ঝুলে থাকা গাছের ডাল বা কেবল তারের সঙ্গে লেগে থাকা ডালপালা ছেঁটে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। পুরসভার কন্ট্রোল রুমে সিইএসসি’র আধিকারিক থাকবেন। ফ্লাড শেল্টারগুলিকে পরিষ্কার করার কাজ চলছে। পর্যাপ্ত খাবার, ত্রিপল, ওষুধ— সব ব্যবস্থাই রাখা হবে।
আগাম সতর্কতা গ্রহণ করেছে বিধাননগর পুরসভাও। ২৪ ঘণ্টার জন্য খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম (৬২৯২২৩৪১২৬)। সূত্রের খবর, গোটা এলাকায় মোট ৯১টি পাম্প থাকছে। এছাড়াও পুরসভার নিজস্ব একটি ড্রেনেজ পাম্প ও ১৩টি নিকাশি পাম্প প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মুখ্য প্রশাসক কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, পূর্ত ও সেচদপ্তর, হিডকো কর্তৃপক্ষ এবং বিধাননগর পুরসভার সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও ১১০ জনের বিশেষ টিম থাকছে। বিদ্যুৎ পরিষেবা সচল রাখার জন্য রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরের সঙ্গে কথা বলেছে পুর কর্তৃপক্ষ। জলের সরবরাহ সচল রাখার জন্য মোট ৭২টি ট্যাঙ্ক রাখা হয়েছে। পুনর্বাসনের জন্য রাজারহাট এলাকার বিভিন্ন স্কুল ও প্রাথমিক বিদ্যালয় ফাঁকা করে রাখা হয়েছে।
হাওড়ার শরৎ সদনেও একটি বৈঠক হয়। সেখানে ঠিক হয়েছে, রেল, সিইএসসি, পুলিসের মধ্যে সমন্বয় রেখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে। রেলের সঙ্গে মূলত পুরসভার নিকাশি বিভাগের সমন্বয় বাড়ানো হচ্ছে। কারণ, বহু জায়গায় স্রেফ সমন্বয়ের অভাবেই গত বছর ভুগতে হয়েছে মানুষকে। বৈদ্যুতিক করাত ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি সহ প্রস্তুত রাখা হচ্ছে কর্মীদের। পদ্মপুকুরে হাওড়া পুরসভার পানীয় জল প্রকল্পে এবার বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। গতবার উম-পুনের সময় জলপ্রকল্পটি বৃষ্টির জলে ভরে গিয়েছিল। হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান অরূপ রায় বলেন, গতবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার আগে থেকে পরিকল্পনা করা হয়েছে। সব বিভাগকেই বাড়তি সতর্ক করা হয়েছে। উলুবেড়িয়া পুরসভা সূত্রে খবর, এদিনের বৈঠকে ঘূর্ণিঝড়ের সমস্ত দিক পর্যালোচনা করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।