অস্ট্রেলিয়ার সেরা শেফ হওয়ার দৌড়ে প্রবাসী বাঙালি কিশোয়ার
নামকরা শেফ (Chef) হতে চেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাকরি ছেড়েছিলেন দেবদত্ত। সেই কবে ছোটবেলায় আনাড়ি হাতে রেঁধে ফেলেছিলেন মাছের ঝোল। সেটাই স্বাদে অমৃত সমান লেগেছিল অসুস্থ মায়ের। তারপর গোটাটাই দেবদত্তের জীবনে রূপকথা। বঙ্গ-বাঙালির ঐতিহ্যবাহী ‘মাছের ঝোল’ খাইয়ে প্যারিসে চার-পাঁচটি রেস্তরাঁর মালিক বনে গিয়েছিলেন তিনি। বিদেশেও ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’র কদর যে কিছু কম নয়, বুঝেছিলেন ‘মাছের ঝোল’-এর নায়ক! রূপোলি পর্দার এই রূপকথার কাহিনিকে বাস্তবের জমিতে জরিপ করলেন কিশোয়ার চৌধুরী (Kishwar Chowdhury)। বিচারকদের স্রেফ মাছের ঝোল খাইয়ে ‘মাস্টারশেফ’ (MasterChef)-এর সেরার দৌড়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি গৃহবধূ। মাছের ঝোলের কাছে ম্লান হয়ে গেল দেশ-বিদেশের তাবড় মেনু। আর তাঁর এই সাফল্য বুঝিয়ে দিল খাঁটি বাঙালিয়ানার মাহাত্ম্য সমাদৃত সর্বত্র।
মাছের ঝোল আদ্যোপান্ত বাঙালি মেনু। সামান্য ডাল-ভাত। তার সঙ্গে গরম এক পিস মাছ ভাজা—খেতে দারুণ মজা। আলু কিংবা ফুলকপি দিয়ে রুই-কাতলা, কইয়ের ঝোল। যেমন-তেমন করে রাঁধলেই হল! তার ঘ্রাণেই নাকি বাঙালির খিদে বেড়ে ওঠে। বাদই বা কেন থাকে বেগুন, কালো জিরে সহযোগে ইলিশের পাতলা ঝোল। এরকম হাল্কা মশলাযুক্ত মাছের হরেক রেসিপি বলে শেষ করা যাবে না। আবার মাছের রিচ-রেসিপি তৈরিতেও বাঙালির পারদর্শিতার ধারে-কাছে কেউ নেই। একনাগাড়ে বলে যাওয়া যায়—দই কাতলা, রুই কালিয়া, কাতলা কালিয়া, সর্ষে পাবদা, সর্ষে ইলিশ, তেল কই, চিংড়ির মালাইকারি সহ আরও কতকিছু।
কিশোয়ারের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। স্বভাবতই মাছের হরেক পদ তৈরিতে তিনি মুন্সিয়ানা দেখাবেন, তাতে বাঙালিদের কাছে আশ্চর্যেরই বা কী! তবে ‘মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া-২০২১’-এর প্রতিযোগিতায় তাঁর মাছের ঝোলের রন্ধনশৈলী মোহিত করেছে বিচারকমণ্ডলীকে। ছোটবেলায় একবার মাছের ঝোল রান্না করে পরিবারের সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন কিশোয়ার। সেই থেকে মাছের রেসিপির প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসাই তাঁকে সেরার মুকুটের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে।
প্রতিযোগিতার বেশ কয়েকটি পর্যায় পেরতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী দুই সন্তানের মা কিশোয়ারকে। বিভিন্ন পর্বে রেঁধেছেন মাছের একাধিক পদ। কিন্তু বিচারকমণ্ডলীর স্বাদ আস্বাদনে ভূয়সী প্রশংসিত মাছের ঝোলই। অস্ট্রেলিয়ার বারামুন্ডি মাছ ছিল তাঁর ঝোলের প্রধান উপকরণ। নিছকই টম্যাটো দিয়ে হাল্কা রান্না। এই মশলা বর্জিত ঝোলই স্বাস্থ্যসম্মত বলে মনে ধরেছে বিচারকদের। কিশোয়ার নিজেও বলেছেন, ‘সাধারণ খাবার-দাবারই আমার বেশি পছন্দ। মাছের ঝোল রান্না করে আমাকে প্রথম পরীক্ষা দিতে হয়েছে আমার ছেলেমেয়ের কাছে।’ বাঙালি রান্না নিয়ে বই লিখতে চান কিশোয়ার।
সেই পরীক্ষায় পাশ করে ‘মাস্টারশেফ’ প্রতিযোগিতায় হাজির হয়েছিলেন কিশোয়ার। তাঁর রেসিপির তারিফ করে এক বিচারক বলেন—‘এমন সিম্পল মাছের ঝোলের স্বাদ এত অপূর্ব হতে পারে, তা আমার কাছে এতদিন অজানাই ছিল। আপনিও চেখে দেখতে পারেন। হলফ করে বলতে পারি, বিশ্বের কোথাও ঢুঁ মারলে মাছের ঝোলের এই স্বাদ পাবেন না।’ এভাবেই বেঁচে থাক বাঙালিয়ানার অহঙ্কার।