স্টেরয়েডের যথেচ্ছ ব্যবহারেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের বাড়াবাড়ি?
সর্বোচ্চ মাত্রার কখনও তিনগুণ, কখনও বা চারগুণ! একটি ক্ষেত্রে দিনে সর্বোচ্চ ৪০ মিগ্রার বদলে ১২০-২৪০ মিগ্রা, অপর ক্ষেত্রে ৮ মিগ্রার বদলে ১৬-২৪ মিগ্রা স্টেরয়েড (steroids) দেওয়া হচ্ছে! পাঁচ থেকে সাতদিন খাওয়ার পরিবর্তে ১৪ দিন থেকে একমাস, এমনকী কখনও কখনও তারও বেশি সময় খেতে বলা হচ্ছে। এভাবে স্টেরয়েড ব্যবহারের নামে যথেচ্ছাচার চলছে রাজ্যে রাজ্যে। আর এই বেলাগাম ব্যবহারের জন্য সারা দেশে মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের দাপাদাপি শুরু হয়েছে। বাংলাতেও বহু চিকিৎসকই নিয়ম না মেনে দীর্ঘদিন ধরে অধিক মাত্রায় স্টেরয়েড প্রয়োগ করছেন। এমন অভিযোগ আসতে শুরু করেছে স্বাস্থ্যভবনে। গোটা বিষয়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। রোগাক্রান্তদের শারীরিক অবস্থার ছবি দেখে তিনি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত। অবিলম্বে চিকিৎসকদের গাইডলাইন মেনে স্টেরয়েড ব্যবহারের কথা স্মরণ করাতে নির্দেশ দিলেন কর্তাদের। স্বাস্থ্যদপ্তর আয়োজিত এক ওয়েবিনারে স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ অজয় চক্রবর্তী উপস্থিত চিকিৎসকদের বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে শেষমেশ চিকিৎসকদের রাজ্যব্যাপী নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিল বা দেশব্যাপী সংস্থা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের হস্তক্ষেপ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন করোনা হাসপাতাল এবং প্রাইভেট হাসপাতালে সারপ্রাইজ ভিজিট করে করোনা রোগীদের ইনডোর প্রেসক্রিপশন সংগ্রহ করে তদন্ত করার দাবিও উঠেছে।
জাতীয় কোভিড টাস্ক ফোর্সের সদস্য বিশিষ্ট গ্যাসট্রো এনটেরোলজিস্ট সত্যপ্রিয় দে সরকার বলেন, করোনার মধ্যে অতিরিক্ত স্টেরয়েড ব্যবহারে সুগারের রোগীর ডায়াবেটিস হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। ৪০০-৫০০ হয়ে যাচ্ছে। এমনই সময় হানা দিচ্ছে মিউকরমাইকোসিস। এখনই সতর্ক হোক সরকার। রাজ্য সরকারের করোনা টাস্ক ফোর্সের সদস্য ডাঃ জ্যোতির্ময় পাল বলেন, স্টেরয়েড নিয়ে যা ইচ্ছা তাই চলছে। আইএমএ’র সঙ্গে কথা হয়েছে। তারাও এবার চিকিৎসকদের সচেতন করবে। চিকিৎসক সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের অন্যতম শীর্ষকর্তা ডাঃ রাজীব পাণ্ডে অবশ্য বলেন, শুধু ডাক্তারদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, কেন্দ্রে এক, রাজ্যে আর এক গাইডলাইন চলছে। চিকিৎসকরা কোন পথে যাবেন?
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, ডেক্সামিথাজোন, ডেকাড্রন বা প্রেগমিসোলোন—বিভিন্ন ধরনের স্টেরয়েড মুখে খাবার বা ইঞ্জেকশন হিসেবে করোনায় গ্রহণ করার সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে। তাতে বলা আছে, অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫-এর নীচে নামলে, করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর প্রথম সাতদিনে জ্বর না কমলে, অস্বস্তিকর কাশি বাড়তেই থাকলে এবং জ্বর কমে গিয়ে ফের ফিরে এলে তখন একেবারেই অল্প ডোজে স্টেরয়েড ব্যবহারের কথা ভাবা যেতে পারে। কিন্তু কোনওভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নয়। নিজে থেকে ওষুধের দোকানে গিয়ে স্টেরয়েড কিনে শুরু করার পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। কিন্তু এগুলি স্রেফ কথার কথাই থেকে যাচ্ছে। তার বদলে ১. করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ার প্রথম দিন থেকেই স্টেরয়েড দিতে শুরু করছেন বহু চিকিৎসক। ২.সাতদিনের বদলে ২৪ দিন একমাস স্টেরয়েড খেতে বলা হচ্ছে। ৩. শুধু স্টেরয়েড নয়, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, হেপারিন এবং মেরোপেনাম ইত্যাদি ইঞ্জেকশনেরও অপব্যবহার ও অতিব্যবহার চলছে জোরকদমে।