রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

আজ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে নিম্নচাপ, শুরু হল বৃষ্টি

May 24, 2021 | 2 min read

শক্তি বাড়িয়ে ধীরে ধীরে ঘনীভূত হচ্ছে নিম্নচাপ। আজ, সোমবারই সেটি ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’-এ (Cyclone Yaas) পরিণত হবে। বেশি তীব্র মাত্রার এই ঘূর্ণিঝড় বুধবার সন্ধ্যায় আছড়ে পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা উপকূলে পারাদীপ ও সাগরদ্বীপের মাঝামাঝি জায়গায়। রবিবার রাত পর্যন্ত দীঘা থেকে ৬৫০ কিমি দূরে ফুঁসছে এই ঘূর্ণিঝড়। পারাদ্বীপ থেকে এর দূরত্ব ৫৭০ কিমি। তবে তার আগে থেকেই ‘যশ’-এর প্রভাব পড়তে শুরু করবে রাজ্যে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আজ, সোমবার সন্ধ্যা থেকে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা উপকূলে ঘণ্টায় ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ কিমি গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করবে। আগামী কাল, মঙ্গলবার ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটারে পৌঁছতে পারে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, উপকূল অতিক্রম করার সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিমির মধ্যে থাকতে পারে। তবে যশ মোকাবিলা নিয়ে এদিন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উচ্চ পর্যায়ের যে বৈঠকটি করেছেন, সেখানে অন্য দাবি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের পক্ষ থেকে ওই আলোচনায় জানানো হয়েছে, উপকূল অতিক্রম করার সময় দমকা হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিমি পর্যন্ত উঠতে পারে।

এই আশঙ্কার মধ্যে মঙ্গলবারই রাজ্যের উপকূল সংলগ্ন দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি জেলায় হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হবে। কোনও কোনও জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বুধবার ঝড় ও বৃষ্টির ব্যপ্তি আরও বাড়বে। উপকূল এলাকায় সেদিন সকাল থেকে ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারে পৌঁছবে। যা দুপুরের মধ্যে ঘণ্টায় ১১০ কিমি স্পর্শ করতে পারে। তবে উপকূলের ঠিক কোন জায়গায় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রস্থলটি আছড়ে পড়বে, তা রবিবারও জানায়নি আবহাওয়া দপ্তর। আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টির মাত্রাও বুধবার অনেকটা বেড়ে যাবে। প্রায় দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে চলবে তার তাণ্ডব। দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া ও হুগলি জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে নদীয়া, বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলায়। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাও। বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গের হিমালয় সংলগ্ন জেলাগুলি, রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল, মুর্শিদাবাদ এবং সিকিমের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়া দপ্তরের তৈরি নকশায় ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ঝাড়খণ্ডের একাংশকে ঘূর্ণিঝড় প্রভাবিত সম্ভাব্য এলাকা হিসেবে দেখানো হয়েছে। যদিও, আজ পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপটি শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর এটি সুস্পষ্টভাবে বলা যাবে বলে জানিয়েছেন সঞ্জীববাবু। আবহাওয়া দপ্তর ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য অগ্রগতির যে নকশাটি দিয়েছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাকে এব্যাপারে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল না দক্ষিণ-উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবন এলাকা—‘যশ’-এর প্রভাব কোথায় তুলনামূলকভাবে বেশি পড়বে, সেব্যাপারে আবহাওয়াবিদরা এদিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। স্থলভূমিতে ঢুকে পড়ার পর ঘূর্ণিঝড় শক্তি হারাতে শুরু করলেও বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া আরও কিছু সময় থাকে। ফলে উপকূল এলাকা থেকে দূরে থাকা জায়গায় এর প্রভাব অনেকটা পড়বে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। ঠিক যেমন উম-পুনের প্রভাবে লণ্ডভণ্ড হয়েছিল কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকা।

দিল্লিতে এদিনের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলি সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠক নিয়ে ট্যুইটও করেন তিনি। তাতে মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেদিকে নজর রাখার কথা বলেছেন মোদি। এদিকে, যশ মোকাবিলা নিয়ে এদিন লালবাজারে পুলিস কমিশনার সৌমেন মিত্র বিশেষ বৈঠক করেন। কেএমডিএ, কলকাতা পুরসভা, সেনাবাহিনী, পূর্তদপ্তর, সিইএসসি, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর শীর্ষ আধিকারিকরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন দপ্তর যাতে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রেখে বিপর্যয় মোকাবিলা করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #cyclone yaas

আরো দেখুন