শিয়রে পাঁচ রাজ্যে ভোট, তাই ২১৬ কোটি টিকার প্রতিশ্রুতি কেন্দ্রের
ভোট বড় দায়! আর আট-ন’মাস পরেই পাঁচটি রাজ্যে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। ফলে আসছে আবারও নির্বাচনে পালা। সদ্য সমাপ্ত পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ সহ তিন রাজ্যে ভরাডুবি হয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির (BJP)। সেই দায় অনেকটাই বর্তেছে করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতার উপর। তাই এবার তড়িঘড়ি আসরে নেমেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষ বর্ধন। জোর গলায় ঘোষণা করেছেন, চলতি বছরের শেষেই দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ককে করোনা টিকা (COVID-19 Vaccines) দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। সেই লক্ষ্যে আগামী সাত মাসের মধ্যে ভ্যাকসিনের ২১৬ কোটি ডোজ হাতে আনার তোড়জোড় করছে কেন্দ্র। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা কতটা বাস্তবসম্মত? রাজ্যে রাজ্যে যেখানে ভ্যাকসিনের অভাবের অভিযোগ উঠছে, পর্যাপ্ত ডোজ না থাকায় ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের টিকাকরণ হোঁচট খাচ্ছে, সেখানে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই টিকাকরণের টার্গেট রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তৈরি করেছে। তবে কি আসন্ন ওই পাঁচ রাজ্যের ভোটই ঘুরছে নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) মাথায়? উঠছে প্রশ্ন।
পশ্চিমবঙ্গ সহ পাঁচ রাজ্যের ভোট প্রচার করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য অনেকাংশেই দায়ী। বিশেষজ্ঞদের এই অভিযোগের পরেই নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, মণিপুর, গোয়া এবং গুজরাত, এই সাত রাজ্যে ২০২২ সালে ভোট হওয়ার কথা। হিমাচল ও গুজরাতের বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ ডিসেম্বরে। বাকি পাঁচ রাজ্যের মধ্যে কোনওটিতে ফেব্রুয়ারি, কোনওটির আবার মার্চে ভোট। সেই হিসেবে হাতে সময় আর এক বছরও নেই। তাই সেই নির্বাচনের আগেই, চলতি বছরের মধ্যে করোনাকে কাবু করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্র।
সরকারিভাবে অবশ্য ভোটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়নি। তবে বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সূত্রে খবর, চলতি বছরের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক তথা ভোটারদের টিকাকরণ সম্পূর্ণ করে আদতে এক ঢিলে দুই পাখি মারার পরিকল্পনা করেছে মোদি সরকার। সেটি হল, টিকা দিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সংক্রমণের হার কমানো। আর তারপর ভোট প্রচারে বিষয়টিকে করোনা মোকাবিলার সাফল্য হিসেবে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ঢাক পেটানোর সুযোগ করে দেওয়া।
কিন্তু সেটা আদৌ কী করে হবে? তা নিয়েই উঠছে সওয়াল। ট্যুইট করে মৃত্যু মিছিলের জন্য সরাসরি স্রেফ মোদি সরকারকেই দায়ী করেছেন রাহুল গান্ধী। বলেছেন, ‘যাঁরা পরিজনদের শবদেহ গঙ্গার পাড়ে ছেড়ে যাচ্ছেন, তাঁদের বেদনাও বুঝতে হবে। নিরুপায় হয়েই তাঁরা এই কাজ করছেন। অথচ এর জন্য তাঁরা দায়ী নন, দায়ী স্রেফ কেন্দ্র।’ তিনি এখানেই থামেননি, তির্যকভাবে বলেছেন, ‘একে তো মহামারী, তার উপর প্রধানমন্ত্রী অহঙ্কারী!’
তবে কেন্দ্র মুখে না মানলেও বিদেশি দানছত্রে যেভাবে রাজ্যগুলির চাহিদা মেটাতে হচ্ছে, তাতে স্পষ্ট… করোনা মোকাবিলায় মোদি সরকার নাজেহাল। এ পর্যন্ত বিদেশি অনুদানে পাওয়া ১৬ হাজার ৬৩০টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, ১৫ হাজার ৯৬১টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ১১ হাজার ৫১৬টি ভেন্টিলেটর, ৬ লক্ষ ৯০ হাজার রেমডিসিভির ভায়াল রাজ্যগুলিকে দেওয়া হয়েছে বলেই জানিয়েছে কেন্দ্র। আসছে আরও।
অন্যদিকে, করোনার সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের সামনে বিপদ। গবেষকদের কাছ থেকে এই সতর্কবার্তা পেয়েই নড়েচড়ে বসেছে ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটস (এনসিপিসিআর)। সংস্থার চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্ক কানুনগো সব রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে শিশু-কিশোরদের করোনার চিকিৎসা পরিকাঠামো সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ‘পপুলেশন প্রোজেকশনস ফর ইন্ডিয়া অ্যান্ড স্টেটাস’ শীর্ষক রিপোর্ট মোতাবেক ২০২১-এ দেশে ১-১৯ বছর বয়সির আনুমানিক সংখ্যা ৪৭ কোটি ১৪ লক্ষ। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে এই ব্যাপক সংখ্যক শিশু-কিশোরদের সুস্থ রাখতে তৈরি তো? ফর্ম পাঠিয়ে রাজ্যের কাছে তা স্পষ্ট জানতে চেয়েছে কমিশন।