যশ মোকাবিলায় কোমর বাঁধছে উত্তরবঙ্গও
ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’র (Cyclone Yaas) প্রভাবে দার্জিলিং জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এমনই আশঙ্কা করেছে আবহাওয়া দপ্তর। তারা জানিয়েছে, আগামিকাল, বুধবার জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এমন বার্তা পেয়েই জোর প্রস্তুতি নিয়েছে শিলিগুড়ি পুরসভাও (Siliguri Municipality)। সোমবার তারা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তরের বৈঠক করে দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশেষ টিম গঠন করে। দার্জিলিং জেলা প্রশাসনও এ ব্যাপারে নড়েচড়ে বসেছে। তারাও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তর সহ জেলার প্রতিটি ব্লক প্রশাসনকে সতর্ক করেছে। ইতিমধ্যে ব্লকে ব্লকে কন্ট্রোল রুম খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে ঝড়বৃষ্টি হলে প্রখর তাপপ্রবাহ থেকে কিছুটা স্বস্তি মেলার আশায় শিলিগুড়িবাসী।
রাজ্যে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’। যার দাপট পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশার উপকূলে পারাদ্বীপ ও সাগরদ্বীপের মাঝামাঝি জায়গায় বেশি থাকবে। যার প্রভাবে দার্জিলিং জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সিকিম কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ওই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দর্জিলিং জেলায় ২৬ ও ২৭ মে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হবে। এর বাইরে অধিকাংশ এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের কাছ থেকে এমন বার্তা পেয়েই নড়েচড়ে বসে শিলিগুড়ি পুরসভা। এদিন পুরভবনে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। তাতে পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান গৌতম দেব ছাড়াও পুলিস ও মহকুমা প্রশাসনের আধিকারিক, দমকল, বিদ্যুৎ, পিএইচই সহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পুরসভা সূত্রের খবর, বৈঠকে পুরসভা ও মহকুমা প্রশাসনের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিকাঠামো, নিকাশি নালার অবস্থা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়। উল্লেখ্য, শিলিগুড়ি শহরের নিকাশি ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে বেহাল বলে অভিযোগ। সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের নিচু এলাকাগুলিতে জল দাঁড়িয়ে যায়। কাজেই ভারী বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, বিপর্যয়ের পরবর্তীতে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করতে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। তাতে পুরসভার পূর্ত, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, স্বাস্থ্য প্রভৃতি বিভাগের কর্মীদের নিয়ে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। ঝড়ের পরবর্তী পরিস্থিতিতে দ্রুত রাস্তা থেকে ভেঙে পড়া গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে দেবে ওই টিম। তারা বিদ্যুৎ ও পানীয় জল পরিষেবাও দ্রুত স্বাভাবিক করবে। তাছাড়া শহরের কোথাও বৃষ্টি জল জমে গেলে তাও সরানো হবে। এ জন্য কয়েকটি পাম্প সেট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
শিলিগুড়ি পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন, ঘূর্ণিঝড় যশের জেরে এখানে কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা বোঝা যাচ্ছে না। তা হলেও ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী পরিস্থিতির মোকাবিলায় পুরসভা প্রস্তুত রয়েছে। শহরের বিদ্যুৎ, পানীয় জল পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে আমরা তৎপর রয়েছি। নালা সাফাই করা হয়েছে। একটি কন্ট্রোল রুমও চালু করা হয়েছে। একলক্ষ জলের পাউচ ও জলের ট্যাঙ্ক প্রস্তত রাখা হচ্ছে।
শহরের পাশাপাশি শিলিগুড়ি মহকুমার মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়ার উপরও নজর রাখছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে মহকুমা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তর তাদের ভলান্টিয়ারদের প্রস্তুত রেখেছে। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, এখানে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তরের অধীনে আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত ভ্যান আছে। জেলার সমতলভাগের শিলিগুড়ি শহর ছাড়াও পাহাড়ের অংশও দুর্যোগপ্রবণ বলেই চিহ্নিত। দার্জিলিং পাহাড়ে বেশকিছু এলাকা ধসপ্রবণ। ভারী বৃষ্টি হলে ওসব জায়গায় ধস নামে।