ঘূর্ণিঝড় যশ – উপকূলে লাল সতর্কতা, দীঘায় নামল সেনা
সাইক্লোন ‘যশ’ (Cyclone Yaas) মোকাবিলায় সেনা নামানো হল দীঘায়। জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। যে কোনও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই মেদিনীপুর জেলার প্রায় সাত লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় শিবিরে সরানো হয়েছে। এর মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের ৪ লক্ষ ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার তিন লক্ষ বাসিন্দা রয়েছেন। ঝাড়গ্রামেও ২০ হাজার মানুষকে রেসকিউ সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। এদিন বিকেলেই ৫০জনের সেনাবাহিনীর একটি দল দীঘায় এসে পৌঁছয়। আগেই নৌসেনা এবং এনডিআরএফের চারটি টিম এসে গিয়েছে। সমুদ্র উপকূল থেকে এলাকার মানুষজনকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় এদিন দুপুরে দীঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন সংস্থার অফিসে জরুরি বৈঠক সারেন সেচ ও জলপথ দপ্তরের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি এবং ডিএসডিএ-র চেয়ারম্যান জ্যোতির্ময় কর। বৈঠক শেষে সমুদ্রবাঁধ পরিদর্শনে বের হন তাঁরা। দীঘা এবং শঙ্করপুরে কোনও হোটেলে পর্যটক রাখা যাবে না বলে বারবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোনও হোটেলে পর্যটক থাকলেই তার লাইসেন্স বাতিল করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসন এবং পুলিস কন্ট্রোল রুম চালু করেছে। প্রতিটি বিডিও অফিস এবং থানাতেও কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১২০০শিবিরে প্রায় তিন লক্ষ মানুষকে সরানো হয়েছে। এদিন জলসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী মানস ভুঁইঞা সবংয়ের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে যান। সবং বিধানসভা কেন্দ্রের ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য সবংয়ে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। সোমবার থেকেই মানসবাবু কন্ট্রোলরুম আগলাচ্ছেন। মন্ত্রী জানান, ৮১টি শিবিরে ১২হাজার মানুষকে সরানো হয়েছে। তাঁদের শুকনো এবং রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। ডেবরার বিধায়ক তথা মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর এদিন ওই বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় কাঁচাবাড়ি থেকে মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
সোমবার দুপুর থেকেই উপকূল এলাকার মানুষজনকে মাল্টি পারপাস সাইক্লোন শেল্টার, ফ্লাড শেল্টার, আইসিডিএস কেন্দ্রে, স্কুলে ও কলেজে সরানো শুরু হয়েছিল। পূর্ব মেদিনীপুরে সোমবার রাত পর্যন্ত এক লক্ষ মানুষকে সরানো হয়। মঙ্গলবার সারাদিন আরও তিনলক্ষ মানুষকে সরানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষজনকে রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হয়। এদিন সকাল থেকেই দীঘার সমুদ্র উত্তাল ছিল। প্রবল জলোচ্ছ্বাসের ফলে সমুদ্রের জল বারবার গার্ডওয়াল টপকে মেরিন ড্রাইভের রাস্তায় এসে পড়ছিল। শঙ্করপুরে সমুদ্রবাঁধ ভেঙে নোনাজল গ্রামে ঢুকে যায়। সকাল থেকেই দীঘায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ কালো মেঘে ঢেকেছিল।
গত ২২মে থেকেই দীঘা ও শঙ্করপুর এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শঙ্করপুর, পেটুয়াঘাট প্রভৃতি বন্দরে সারি সারি মাছ ধরার ট্রলার চেন দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে কাঁচাবাড়ি এবং খড়ের পালুই বাঁচাতে কাঁথি মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় খুঁটি পুঁতে মোটা দড়ি দিয়ে তা বেঁধে রাখা হয়। একের পর এক সাইক্লোন থেকে শিক্ষা নিয়েই বাসিন্দারা এমনটা করেছেন।
সমুদ্র উপকূল এলাকায় ৪৩টি মাল্টি পারপাস সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। এদিন সকাল থেকেই সেইসব আশ্রয় শিবিরে লোকজনকে আনা হয়। একই সঙ্গে গবাদি পশুকে সরিয়ে আনা হয়। এগরা-২ নম্বর ব্লকে বিবেকানন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে অটোয় মানুষজনকে তুলে স্থানীয় বিদুরপুর বিদ্যানিকেতন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়। খেজুরি-১ ও ২ব্লকের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজনকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়। হলদিয়া এবং নন্দীগ্রামেও সাইক্লোন মোকাবিলায় যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে প্রশাসন।