ভরা কোটালে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা
কোটালের জলে ভাসছে সুন্দরবন ও সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা। গোসাবা, সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, কুলতলি এবং বাসন্তীর বহু এলাকায় বাঁধ টপকে জল ঢুকেছে। তার জেরে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সব মিলিয়ে ২৯ লক্ষ মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমনই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। বুধবার রাত পর্যন্ত হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। তবে সম্পত্তি নষ্ট হওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে জেলা জুড়েই। প্রায় ৮০ হাজারের মতো বাড়িঘর সম্পূর্ণ এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিল, ঘূর্ণিঝড় যশ দক্ষিণ ২৪ পরগনায় (South 24 Parganas) আম্পানের মতো তীব্র প্রভাব ফেলবে না। যদিও জেলা প্রশাসনের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল কোটালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস। প্রশাসনিক কর্তাদের আশঙ্কাকে সত্যি করে বুধবার সকাল থেকে একাধিক অঞ্চল কার্যত ভেসে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় গোসাবা ব্লকে। এখানে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। লাহিড়ীপুর, রাঙাবেলিয়া এবং কুমিরমারী গ্রাম পঞ্চায়েত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। প্রাকৃতিক রোষানল থেকে বাদ যায়নি সাগর। সেখানে কপিল মুনির আশ্রম জলমগ্ন হয়ে পড়ে। আশেপাশের এলাকাও প্লাবিত হয়ে যায়। ঘোড়ামারা দ্বীপ একটা সময় কার্যত জলের তলায় ছিল। বাড়িঘর, স্কুল ইত্যাদি জায়গা জল থই থই করে। পরিস্থিতি জটিল হয় নামখানা ব্লকের মৌসুনি দ্বীপেও। প্রবল জলস্রোতে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ওই এলাকায় আটকে পড়া বহু মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ওই দ্বীপাঞ্চলের যে খাবার এবং জল মজুত করে রাখা হয়েছিল, প্লাবনে তাও নষ্ট হয়ে যায়। শেষমেষ নৌবাহিনী নৌকা চালিয়ে সেখানে শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।
কাকদ্বীপের বেশ কিছু গ্রামে জলে বহু মানুষ আটকে পড়েন। দেখা গিয়েছে কোথাও ছেলেমেয়েকে কাঁধে চাপিয়ে নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে যাচ্ছেন বাবা, কোথাও আবার উদ্ধারকারী দলের সাহায্যে সাইক্লোন শেল্টারের দিকে রওনা দিয়েছেন কেউ কেউ। কাকদ্বীপ থানাও একটা বড় সময় জলে অর্ধেক ডুবে ছিল। কাকদ্বীপের বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা এদিন তাঁর বিধানসভার ১৩টি ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। কীভাবে দুর্বল বাঁধ মেরামত করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা করবেন বলে জানান।
জলের তোড়ে একের পর এক বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও জল নেমে যেতেই সেসব মেরামতের কাজে নেমে পড়েন আধিকারিকরা। বিকেলের পর বেশ কিছু জায়গায় জল দাঁড়িয়ে থাকলেও বেশিরভাগ গ্রামেই জল নামতে শুরু করে। এদিকে, গোটা জেলার সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির নিয়ে হিসেব করতে গিয়ে দেখা যায়, ৩৬ কিলোমিটারের মতো নদী বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ২৭৬২ হেক্টর চাষযোগ্য জমি ক্ষতিগ্রস্ত। তার জেরে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ১৪ হাজারের বেশি কৃষক। ১০৮৩ হেক্টর জমিতে পানের বরজ নষ্ট হয়েছে। এই জেলার সব মিলিয়ে ১৬টি ব্লক এবং ১৪৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতে নানাভাবে ক্ষতি হয়েছে। জলস্রোতের জেরে ৩৮৯ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৩৫১ হেক্টর জমির মাছচাষ ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, এদিন বিকেলে বেশ কিছু ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান জেলাশাসক পি উলগানাথন সহ আধিকারিকরা। কাকদ্বীপ ও নামখানার সেইসব এলাকায় গ্রামবাসীদের ত্রিপল বিতরণ করা হয়। সব মিলিয়ে এদিন ৬৫ হাজার ত্রিপল বিভিন্ন ব্লকে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্গতদের তুলে দেওয়া হয়েছে।