বড় বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেল সুন্দরবন
ভরা কোটালের প্রবল জলোচ্ছ্বাসে একাধিক নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হল বসিরহাট মহকুমার সুন্দরবন (Sundarban) এলাকা। নদী বাঁধ ভাঙার থেকেও বাঁধ উপচে আসা জলে প্লাবিত হয়েছে বেশির ভাগ গ্রাম। খোদ বসিরহাট শহরেও ইছামতি নদীর বাঁধ উপচে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। সিংহভাগ জায়গায় গ্রামবাসীরা দিনভর বস্তায় মাটি ভরে বাঁধ আগলে রাখেন। তবে সারাদিন ধরে বৃষ্টি ও বাতাস না থাকায় সিংহভাগ নদী বাঁধ রক্ষা পেয়েছে। প্রবল জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে ঝড়ো বাতাস যোগ হলে আয়লার থেকেও ভয়ঙ্কর বিপর্যয় হতো বলে মনে করছেন এলাকাবাসী ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা। তবে রাতের জোয়ার নিয়ে ফের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন যশের দাপট সেই অর্থে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় দেখা যায়নি। প্রবল বৃষ্টি কিংবা ঝড়ো হাওয়া সেইভাবেই হয়নি। কিন্তু সকাল থেকেই সমস্ত নদীতে জলোচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকেই প্রতিটি নদী কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জোয়ার বাড়ায় পাল্লা দিয়ে জলোচ্ছ্বাস তীব্র হয়েছে। গ্রামের পুরুষদের মতো মহিলা ও বাচ্চারাও বস্তায় মাটি ভরে নদীর পাড় উঁচু করার কাজে হাত লাগান। হাজার হাজার মানুষ একজোট হয়ে বাঁধে মাটির বস্তা দেওয়ায় সিংহভাগ জায়গায় দুর্বল নদী বাঁধ রক্ষা করা সম্ভব হয়। তারমধ্যেও ২০০-র বেশি জায়গায় নদী বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদী বাঁধ ভেঙেছে প্রায় ৩০টি জায়গায়। সন্দেশখালি‑১ ব্লকের সেহারা রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম ভোলাখালি এলাকায় ডাঁসা নদী ও ঘটিহারা নদী বাঁধ দুই জায়গায় ভেঙে গিয়েছে। এই ব্লকের ন্যাজাট ও বাউনিয়া এলাকায় বেতনি নদী বাঁধ, কালীনগরের ছোট কলাগাছিয়া নদী বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বেড়মজুর‑২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ধুলিয়া ঝুপখালি এলাকার স্লুইস গেট ভেঙে কয়েকশো বিঘার চাষ জমি নোনা জলে ভরে গিয়েছে। সন্দেশখালি‑২ ব্লকের মণিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালের ঘাট এলাকায় বড় কলাগাছি নদীর বাঁধ ভেঙেছে। এছাড়া জেলিয়াখালি ও তুষখালি এলাকায় বিদ্যাধরী নদী বাঁধ ভেঙেছে। এই ব্লকের ধামাখালি এলাকায় ছোট কলাগাছি নদীর বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের সাহেবখালি, হলদা বাঁশতলা, লেবুখালি, সাঁতরা, চাড়ালখালি, উত্তর মাহুতপুরে একাধিক নদীর বাঁধ ভেঙেছে। ভাণ্ডারখালিতে রায়মঙ্গল নদীর বাঁধ ভেঙে বড় এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। এছাড়া হাটগাছি ও সাহেবখালিতেও নদী বাঁধ ভেঙেছে। হাসনাবাদের পাটলি খানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ট্যাংরামারি এলাকায় কালিন্দী নদী বাঁধ ভেঙেছে।
মিনাখাঁর সোনাপুকুর শঙ্করপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নোয়াপাড়া ও ব্রাক্ষ্মণচক মুরগিমারার ট্যাক এলাকায় বিদ্যাধরী নদী বাঁধ ভেঙেছে। এছাড়া সিংহভাগ এলাকায় নদী বাঁধ উপচে মাছের ভেড়ি ও গ্রাম ভাসিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, ইছামতি নদী বাঁধ উপচে বসিরহাট শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বসিরহাট হাসপাতাল চত্বর, ১৫নম্বর ওয়ার্ডের তপারচর, বদরতলা, হরিশপুর, বসিরহাট আদালত চত্বর ও জেলা পুলিস সুপারের অফিস জলমগ্ন হয়ে পড়ে। একইভাবে টাকি পুরসভার বিস্তীর্ণ এলাকায় ইছামতি নদীর বাঁধ টপকে জল ঢুকেছে। দেগঙ্গা ব্লকে বিদ্যাধরী নদীর বাঁধ ভেঙে চাঁপাতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের গাংধুলাট ও পারুলিয়া, দেগঙ্গার ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তেলিয়া ও ঘোষালের আবাদ এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। তবে সিংহভাগ জায়গায় জোয়ারের জল নামার সঙ্গে সঙ্গে জল নেমে গিয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেচদপ্তর ও স্থানীয় বাসিন্দারা বাঁধ বাঁধার কাজ শুরু করেছেন। গ্রামবাসীদের নিয়ে বাঁধ বাঁধার কাজ করে হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, এমন জলোচ্ছ্বাস সুন্দরবনের মানুষ কোনওদিন দেখেনি। বাতাস ও বৃষ্টি না থাকায় এবারের মতো সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা রক্ষা পেয়েছে। বাতাস থাকলে আয়লার থেকেও বড় বিপর্যয় হতো। তবে রাতের জোয়ারে বিপর্যয় এড়াতে বিভিন্ন জায়গায় রাত পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।