রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

যশের তাণ্ডবে বানভাসি ৪ লক্ষ মানুষ

May 27, 2021 | 2 min read

যশ ও ভরা কোটালের দাপটে দীঘা, হলদিয়া সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বানভাসি হল। বুধবার সাইক্লোন এবং পূর্ণিমার ভরা কোটালের জোড়া ধাক্কায় আচমকাই বন্যার কবলে পড়ে জেলা। এদিন সকাল ৭টা থেকেই সমুদ্র দানবের মতো দাঁত-নখ বের করে স্থলভাগের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভয়ঙ্কর জলোচ্ছ্বাসে দীঘায় হোটেল, দোকানপাট, রাস্তাঘাট জলমগ্ন হতে যায়। ১১৬বি জাতীয় সড়কের উপর কোমার সমান জল জমে যায়। উপকূল ছাপিয়ে সমুদ্র আর স্থলভাগ একাকার হয়ে যায়। পার্কিং করা গাড়ি দেশালাই বাক্সের মতো জলে ভাসতে থাকে। মান্দারমণি, শঙ্করপুর এবং তাজপুরও জলের তলায় চলে যায়। উপকূল এলাকার কয়েকশো গ্রাম প্লাবিত হয়। ভেসে যায় একের পর এক ভেড়ি। ভেড়িতে মাছ ধরতে গিয়ে কানাই গিরি(৫৬) নামে রামনগর-২ ব্লকের দক্ষিণ কালিন্দীর এক ব্যক্তি মারা গিয়েছেন। জেলায় চার লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত বলে রাজ্য রিপোর্ট পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। উপকূল এলাকার মাছ চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসে ভীষণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলায় চার লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। রামনগর-২ ব্লকে ভেড়িতে মাছ ধরতে গিয়ে জলে ডুবে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

সাইক্লোন মোকাবিলায় আগে থেকেই দীঘায় সেনা, নৌসেনা এবং এনডিআরএফ মোতায়েন করা ছিল। ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় তটস্থ ছিল গোটা জেলা। তবে, সমুদ্র উপকূল থেকে বহু দূরে যাঁরা থাকেন তাঁরা ভাবতেই পারেননি যে, এত বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতে পারে। ভরা কোটালের সঙ্গে সাইক্লোনের যুগলবন্দিতে সমুদ্র রুদ্ররূপ ধারণ করে। হলদিয়া থেকে দীঘা পর্যন্ত উপকূল বরাবর চার-পাঁচ কিলোমিটার এলাকা তছনছ হয়ে যায়। সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসে উপকূল এলাকায় এতটা ক্ষতি আগে কখনও হয়নি। সমুদ্রের ধার বরাবর হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কয়েকশো কোটি টাকার ফিশারির দফারফা হয়ে গিয়েছে। জলোচ্ছ্বাসের জেরে ১২-১৪ফুট পর্যন্ত উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়ার পর কোথাও কোথাও একতলা বাড়ি জলের তলায় চলে যায়। মানুষ গাছে উঠে আশ্রয় নেন।

হলদিয়ার বালুঘাটা, রায়রাঞ্যারচক, টাউনশিপ, ইন্ড্রাস্টিয়াল এলাকা, পাতিখালি ও ঝিকরখালি এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া, কালীচরণপুর এবং কেন্দামারি-জালপাই পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় চলে গিয়েছে। সমুদ্র উপকূল বরাবর খেজুরি-২ ব্লকের নীচকসবা, জনকা ও খেজুরি, দেশপ্রাণ ব্লকের আমতলিয়া, ডোবাবেড়িয়া, আঁউরাই, দ্বারিয়াপুর, বামুনিয়া, কাঁথি-১ ব্লকের মাজিলাপুর, নয়াপুট, মহিষাগোট, রামনগর-২ ব্লকের বোধড়া, কালিন্দী, তালগাছাড়ি-১ ও ২ এবং রামনগর-১ ব্লকের পদিমা-১ ও ২ পঞ্চায়েতের উপকূল এলাকায় এখন শুধুই ধ্বংসাবশেষের ছবি। প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পেটুয়া মৎস্যবন্দর। রসুলপুর নদী লাগোয়া বিভিন্ন জনপদ সম্পূর্ণভাবে জলের তলায় চলে গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মৎস্যজীবীদের উপর নজিরবিহীন আঘাত হেনেছে যশ।

এদিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ জোয়ারের জল নামতেই দীঘার স্থলভাগ ফের জাগতে শুরু করে। যদিও উপকূল এলাকা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এদিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে নৌকায় জুনপুট, বগুড়ান-জালপাই সহ বিভিন্ন জায়গায় মাল্টি পারপাস সাইক্লোন শেল্টারের দুর্গতদের খাবার দেওয়া হয়।

দীঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, বহু বছর এখানে হোটেল-ব্যবসা করছি। কিন্তু, এরকম জলোচ্ছ্বাস আগে কখনও দেখিনি। কূল ছাপিয়ে এই প্রথম গোটা দীঘা জলের তলায় চলে গেল। দীঘা ফিশ অ্যান্ড ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ৭২বছর বয়সি প্রণব কর বলেন, এর আগে কখনও দীঘা এরকম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়নি। মৎস্যজীবীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #cyclone yaas

আরো দেখুন