রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মীদের টিকার দায় এড়াচ্ছে কেন্দ্র
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ১৮ ঊর্ধ্বের কর্মীদের করোনার টিকাকরণের (Vaccination) দায় এড়াচ্ছে বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে সংস্থার কর্মীদের টিকার জন্য রাজ্যের কাছেই মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে। রাজ্যের গাঁটের কড়ি খরচ করে সংগ্রহ করা ভ্যাকসিন পেতেই বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা লাইন দিচ্ছেন। ফলে চাপ বাড়ছে স্বাস্থ্যদপ্তরের উপর। প্রতিদিনই এনিয়ে নতুন অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। রাজ্য সরকার যেমন নিজের কর্মীদের টিকা দিতে উদ্যোগী হয়েছে, তেমনই কেন্দ্র নিজের কর্মীদের টিকা দেওয়ার দায়িত্ব কেন নিচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এনিয়ে বিজেপি-তৃণমূল রাজনৈতিক তরজাও তুঙ্গে উঠেছে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনী কুমার মাঝি বলেন, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রাজ্যের কেনা করোনা টিকা পেতে তৎপর। বিভিন্ন সময়ে এসে তাঁরা তালিকা জমা করতে চাইছেন।
দেশজুড়ে চলছে ভ্যাকসিনের আকাল। ইতিমধ্যেই কেন্দ্র ১৮ থেকে ৪৪ বয়সিদের ভ্যাকসিন দেওয়ার দায় চাপিয়ে দিয়েছে রাজ্যের উপর। টিকাকরণ করতে রাজ্যকেই ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকেও ভ্যাকসিন কিনে আনতে হবে। তবে এখন দেখা যাচ্ছে, শুধু রাজ্যবাসীর দায় যে কেন্দ্র ঝেড়ে ফেলেছে, তা নয়। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির কর্মীদেরও ভ্যাকসিন দেওয়ার দায় কার্যত এড়িয়ে যাচ্ছে মোদি সরকার। তাঁদের জন্য টিকা পৌঁছনো নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই। যারফলে চাপ বাড়ছে রাজ্য সরকারের উপর। বিভিন্ন জেলাতেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মীরা একত্রিতভাবে টিকা পেতে তালিকা জমা করছে। অনেকক্ষেত্রে তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও টিকাকরণের জন্য বলা হচ্ছে। এতে বিড়ম্বনায় পড়ছে স্বাস্থ্যদপ্তর।
এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি পশ্চিম বর্ধমান জেলায়। এখানে রেল, সেল, ইসিএল থেকে শুরু করে আইওসিএল, সিএমপিডিআই সহ বহু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ও কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারাও টিকা নিতে তৎপর। বিভিন্ন সময়ে জেলাশাসক, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে সংস্থার কর্মীরা দরবার করছেন। যা নিয়ে অনেক সময়েই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে।
বর্তমানে টিকার সঙ্কটে করোনা টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়ম করেছে রাজ্য সরকার। প্রয়োজনের ভিত্তিতে গ্রুপ তৈরি করে টিকা দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা বেশি সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তাঁদের চিহ্নিত করেই এই কাজ হচ্ছে। এই অবস্থায় সবাই চাইছে নির্দিষ্ট গ্রুপে ঢুকে পড়তে। কেন্দ্রীয় সংস্থায় কর্মরতদের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার উদ্যোগী হলে সমস্যা হতো না বলে ওয়াকিবহাল মহলের মত। এনিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করেছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন দাসু বলেন, বিজেপির বাংলা দখলের স্বপ্ন পূরণ হয়নি বলে রাজ্যকে সব রকমের অসহযোগিতা করছে। তারা চায় টিকাকরণ সহ যেকোনও বিষয়ে বিশৃঙ্খলা হোক। তারা নিজের কর্মীদেরও টিকা দিতে উদ্যোগী না হয়ে রাজ্যের উপর চাপ বাড়াচ্ছে।
বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, মুখ্যমন্ত্রীই তো বলেছিলেন রাজ্যের সব মানুষকে বিনামূল্যে করোনা টিকা দেবেন। এখন অন্য কথা উঠছে কেন। সিএলডব্লুর আইএনটিইউসির সভাপতি সঞ্জীব কুমার সাহি বলেন, কেন্দ্র নিজের কর্মীদের টিকা দিতে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। টিকা পেতে আমরা এখন রাজ্য সরকারের উপরই নির্ভরশীল। জেলাশাসক বিভূ গোয়েল বলেন, রাজ্য সরকার নির্ধারিত গ্রুপ অনুযায়ী টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে।