নোনাজলে বিরাট ক্ষতি কৃষি ও মাছচাষে
সমুদ্র উপচে ও নদী বাঁধ ভেঙে নোনাজল ঢুকে যাওয়ায় রাজ্যের তিন জেলায় কৃষিজমির ও মাছচাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ‘যশে’র তাণ্ডবে বুধবারই পূর্ব মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনার কয়েক হাজার বিঘা চাষের জমিতে নোনাজল ঢুকে যায়। প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় একের পর এক পুকুর ও ভেড়ি। ফলে ভেসে গিয়েছে মাছ। পাশাপাশি নোনাজলের কারণে মিষ্টি জলের প্রচুর মাছ মরে ভেসে উঠেছে। নষ্ট হয়েছে বহু কোটি টাকার সবজি, বরজ সহ অন্যান্য ফসল। সবচেয়ে বড় বিপদ হল, চাষের জমিতে নোনাজল ঢুকে যাওয়ায় আগামী চার-পাঁচ বছর ওই জমিতে ফসল অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবারও পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকায় নোনাজলের স্রোত থামেনি। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা। বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি। তিনি বলেন, রাজ্যের বিপুল ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। জলস্রোত ও নোনাজলের প্রবাহ গ্রামীণ অর্থনীতির কোমর ভেঙে দিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেও মাছচাষের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তৈরি করা হচ্ছে।
প্রশাসনের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তর ২৪ পরগনার মূলত বসিরহাট মহকুমা ও দেগঙ্গা ব্লকে নোনাজলের স্রোতে কৃষি ও মাছচাষের ক্ষতি হয়েছে। ভেড়ি ও পুকুর মিলিয়ে প্রায় সাত হাজার হেক্টর জলাজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩০ হাজার মৎস্যজীবী বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন। চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর। ১ লক্ষ ১০ হাজার চাষি ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
পূর্ব মেদিনীপুরে উপকূলবর্তী রামনগর ১ ও ২ ব্লক, কাঁথি-১, খেজুরি-২ ও দেশপ্রাণ ব্লকের কৃষিজমির ও মৎস্যচাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও নোনাজল ঢুকে যাওয়ায় কাঁথি-২, ভগবানপুর-২, নন্দীগ্রাম-১ ও ২, হলদিয়া ও সুতাহাটা ব্লকের চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের মতে, প্রায় ৬০ হাজার মৎস্যজীবী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জলস্রোত ও নোনাজলে নষ্ট হয়েছে কমপক্ষে ৪ হাজার হেক্টর জলাজমি। ৫০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি ও তার উপরে নির্ভরশীল প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার কৃষক বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও একইভাবে কৃষিজমি ও মাছচাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ১৩৫১ হেক্টর জলাজমির মাছচাষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। ২৭৬২হেক্টর কৃষিজমির ফসল ও জমি নষ্ট হওয়ার জেরে ১৪ হাজারের বেশি চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনায় ৪৫কিমি নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তত ৩০০টি জায়গায় নদীবাঁধ উপচে জল ঢুকে পড়ে। ৫০টি জায়গায় নদীবাঁধ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যথাক্রমে ৭২ কিমি ও ৩৬ কিমি নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরে সরাসরি সমুদ্রের নোনা জল ঢুকে এসেছিল। মেদিনীপুরের একাংশ ও উত্তর ২৪পরগনায় সমুদ্র সংযোগকারী নদীর জল তীব্র জলোচ্ছ্বাসের কারণে ছড়িয়ে পড়ে। আর তাতেই মিষ্টি জলের সঙ্গে মিশে যায় নোনাজল। তার জেরে মাছ ভেসে গিয়েছে। মরেছেও প্রচুর মাছ। সমস্যা আরও ভয়াবহ হয়েছে কৃষিক্ষেত্রে। মাঠে থাকা মরশুমি সব্জি, পান, তিল, ভুট্টা, ধান, মুগ চাষ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, আগামী প্রায় পাঁচ বছরের জন্য ওই জমিগুলি বন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি এই ক্ষতির জেরে চাষিদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।