পানীয় জল, শুকনো খাবারের সঙ্কট দক্ষিণ ২৪ পরগনায়
‘যশ’ (Yaas) ম্লান হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনার (South 24 Parganas) সুন্দরবন ও বিস্তীর্ণ উপকূলবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে তার দানবীয় ধ্বংসলীলা। ঝড়ের সঙ্গে কোটালের জন্য বুধবার সকাল থেকে সমুদ্র ও নদীগুলিতে যে অস্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাস হয়েছে, তার জেরে প্লাবিত হয়েছে বহু এলাকা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কোথাও কোথাও জল নামতে শুরু করলেও এখনও জলমগ্ন বেশিরভাগ এলাকাই। যেসব জায়গায় জল নেমে গিয়েছে, সেখানে মানুষ যে স্বস্তি ফিরে পেয়েছে, তেমনটা নয়। সেসব এলাকায় এখন থেকে শুরু হয়েছে পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট। ঘরদোর ভেসে গিয়েছে। সংসারের সামান্য কিছু সম্বল নিয়ে মানুষের ঠাঁই হয়েছে এখনও অক্ষত থাকা বাঁধের উপর বা সরকারি ত্রাণ শিবিরে। কিন্তু এত মানুষের খাবারের অভাব এবার প্রকট হতে শুরু করেছে। রান্না করার তেমন সুযোগ নেই। নেই সরঞ্জামও। এমন পরিস্থিতিতে মানুষকে বাঁচাবে মুড়ি, চিঁড়ে, বিস্কুটের মতো শুকনো খাবার। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে শিবিরগুলিতে পানীয় জলের পাউচ, শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ত্রাণ নিয়ে কোনওভাবে পৌঁছনো যাচ্ছে না, এরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এলাকার সংখ্যাও কম নয়। সেসব জায়গার মানুষও অবশ্য জীবনমরণ সংগ্রাম করে চলেছে প্রকৃতির রোষের মুখে দাঁড়িয়ে। যেখানে যেখানে জল নেমেছে, সেসব জায়গায় বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। বুধবার রাতে ভরা কোটালের জোয়ারে নতুন করে কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও জল সরে গেলেও বাঁধের উল্টোদিকে নদী এখনও ফুঁসে চলেছে। ফলে সেসব জায়গায় বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করা যায়নি। সব মিলিয়ে চারপাশে চলছে সব হারানো মানুষের হাহাকার। মানুষের চোখের নোনা জল গিয়ে মিশছে বাঁধ উপচে আসা সাগরের নোনা জলে!
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জলস্রোতে কার্যত ভেসে গিয়েছে ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার বাড়ি। হাজার হাজার পুকুর ও ভেড়িতে নোনাজল ঢুকে বহু মানুষকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। নোনা জল পেয়ে মিষ্টিজলের মাছ মরে ভেসে উঠেছে। সেসব পচে গিয়ে দুর্গন্ধে ভরে গিয়েছে এলাকা। নামখানা ব্লকের মৌসুনি দ্বীপ বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে। একাধিক জায়গায় জল নামেনি সারাদিনেও। নোনা জলে সম্পূর্ণ ডুবে যাওয়ায় পানীয় জলের নলকূপগুলি সবই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বিডিও অফিস থেকে জলের ট্যাঙ্ক পাঠানো হচ্ছে। যে এলাকাতে সেই গাড়ি ঢুকছে, সেখানে গ্রামবাসীরা কার্যত হামলে পড়ছেন জল নেওয়ার জন্য। এর ফলে এই করোনাকালে সামাজিক দূরত্ব যেমন শিকেয় উঠছে, তেনিই এই দুর্দিনে মাস্ক পরাও ভুলেছেন গ্রামবাসীরা। ফ্রেজারগঞ্জ এলাকার বেশিরভাগ অংশে এখনও জল নামেনি। কোনওরকমে টিকে থাকা নদীবাঁধগুলিও ক্রমশ দুর্বল হয়ে বিপদের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে। সরকারি ফ্লাড শেল্টারগুলিতে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন এখন বাড়ি ফিরতে চাইলেও বাড়িটাই খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গোসাবা ব্লকে। এই ব্লকের পাঠানখালি, লাহিড়ীপুর সহ একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা জলের নীচে রয়েছে এখনও। পাথরপ্রতিমাতেও পরিস্থিতি একইরকম বেশিরভাগ জায়গায়। মূল শহরে জল কিছুটা কমলেও এই ব্লকের জি প্লট, এল প্লট এখনও জলমগ্ন। বিদ্যুৎ সংযোগ কিছু কিছু এলাকায় ফিরলেও বেশিরভাগ জায়গাতে জল না নামায় সংযোগ চালু করা যায়নি। সাগর ব্লকেও জল সম্পূর্ণভাবে নামেনি বেশিরভাগ জায়গাতেই। কপিলমুনির আশ্রমের সামনে জল নামলেও নদীবাঁধ সংলগ্ন এলাকাগুলি এখনও প্লাবিত। প্রশাসনের তৎপরতায় পানীয় জল ও শুকনো খাবার সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার সব ধরনের চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু নতুন করে বসতভিটে গড়ে তোলার কাজ, ফসল ফলানোর কাজ কবে শুরু করা যাবে, তা এখন ভাবতেও পারছে না দুর্গত জনগণ।