‘লণ্ডভণ্ড দীঘা’ দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষ
সাইক্লোন (Cyclone Yaas) কেড়ে নিয়েছে শ্রী। তবুও সেই শ্রীহীন দীঘাই টানছে পর্যটক। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দীঘার ধ্বংসস্তূপ দেখার জন্য বাইক ও ছোট গাড়ি চেপে হাজির হন পর্যটকরা। জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতবিক্ষত দীঘাকে সাক্ষী রেখে সেলফিও তোলেন অনেকে। সি-বিচ বরাবর ছড়িয়ে রয়েছে বড় বড় পাথর। বিদ্যুতের তার, উপড়ে যাওয়া গাছ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১২০০ স্টল। সাজানো গোছানো মেরিন ড্রাইভ, বিশ্ববাংলা উদ্যোগ সমস্ত কিছু ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছে। সকাল থেকেই শুরু হয় ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ। নেহরু মার্কেট এলাকা অনেকটাই পরিষ্কার হলেও পুরো ধ্বংসস্তূপ সরাতে সময় লাগবে বেশ খানিকটা। তাই শ্রীহীন দীঘা ফের কবে ‘সৈকত সুন্দরী’র রূপ ফিরে পাবে, সেই প্রশ্ন নিয়েই বাড়ি ফিরছেন পর্যটকরা।
বিশ্ববাংলা ঘাট থেকে একেবারে উদয়পুর পর্যন্ত সৌন্দর্যায়নের চাদরে মোড়া ছিল দীঘা। পাথরে মোড়া সি-বিচ, সুদৃশ্য আলো দীঘার আকর্ষণকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। জলোচ্ছ্বাসে সেসব লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে। এখন পাথর উপড়ে যাওয়া সি-বিচের উপর জলের তোড়ে ছুটে আসা সারি সারি বোল্ডার, আর সৌন্দর্যায়নের জন্য নির্মিত পরিকাঠামোর ধ্বংসাবশেষ। এ যেন ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত কোনও এলাকা।
এই দীঘা পর্যটকদের কাছে অচেনা। সেই অচেনা দীঘার টানেই এদিন ভারী বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অনেকে সমুদ্রের পাড়ে ভিড় করেছিলেন। হলিডে হোম ঘাটে এসেছিলেন কাঁথি মডেল প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা ইলোরা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, দীঘাকে এভাবে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে। আশা করব, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শীঘ্রই দীঘা আগের অবস্থায় ফিরবে।
এদিন দুপুর থেকে দীঘায় ফের বৃষ্টি শুরু হয়। তারমধ্যেই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দীঘায় হলিডে হোম ঘাটে হাজির হন এগরার ব্যবসায়ী স্বপন গিরি। স্বপনবাবুর স্ত্রী সোমা গিরি বলেন, আমরা প্রায়ই দীঘায় আসি। বুধবার টিভির পর্দায় দীঘার সমুদ্রের ভয়ঙ্কর জলোচ্ছ্বাসে চেহারা দেখেছি। তাই কী অবস্থা হয়েছে দেখার জন্য এসেছি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে শুধু দীঘা নয়, এখানকার ব্যবসায়ী, ছোট দোকানদার থেকে হোটেল ব্যবসায়ী, প্রত্যেকেই ক্ষয়ক্ষতির শিকার। দীঘার এমন ভাঙাচোরা চেহারা দেখে মন খারাপ হয়ে গেল।
নন্দকুমার থানার আলাশুলি গোরাচাঁদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরূপকুমার ভৌমিক এদিন দুপুরে ওল্ড দীঘার বিশ্ববাংলা উদ্যানে হাজির হয়েছিলেন। তিনি বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবার হাত ধরে দীঘায় প্রথম আসা। তারপর অসংখ্যবার এসেছি। রাজ্য সরকারের হাত ধরে দশ বছর ধরে দীঘা একটু একটু করে নতুন রূপে সেজে উঠেছিল। কিন্তু, একটা প্রাকৃতিক বিপর্যয় সেই রূপ কেড়ে নিল।
শুক্রবার ওল্ড দীঘায় বিশ্ববাংলা উদ্যানের অদূরে দাঁড়িয়েছিলেন বিদ্যুৎ দপ্তরের অফিসার শ্যামল হাজরা। তিনি বলেন, ‘ভয়ঙ্কর জলোচ্ছ্বাসে চারদিকে শুধুই ধ্বংসের ছবি। সৈকত সুন্দরী দীঘা আবার আগের রূপে ফিরে আসুক। এটাই আমাদের কামনা।’
এদিন পর্যটকদের পাশাপাশি বহু স্থানীয় মানুষকেও দীঘার বিশ্ববাংলা ঘাট, জগন্নাথ ঘাট, মেরিনাঘাট, ক্ষণিকাঘাট, যাত্রানালা, ঢেউসাগর, উদয়পুর ঘাটে দেখা গিয়েছে। প্রকৃতির ধ্বংসলীলা চাক্ষুষ করেছেন। কিছুক্ষণ থাকার পরই তাঁরা বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু পর্যটন কেন্দ্র ঘোরার সেই উচ্ছ্বাস, সেই আনন্দ কারও চোখেমুখে ছিল না। শ্রীহীন দীঘার হতশ্রী রূপ দেখে সবাই ফিরেছেন ভগ্নহৃদয়ে।