সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে রামনগরের লবণ শিল্প
‘যশ’-এর (Yaas) প্রভাবে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের জেরে কাঁথি (Contai) মহকুমার রামনগরের প্রসিদ্ধ এবং অর্থকরী লবণ শিল্প একপ্রকার ধ্বংস হয়ে গেল। এই বিপুল বিপর্যয়ে ফ্যাক্টরিতে ১৫ হাজার মেট্রিক টন মজুত করা নুনের (Salt) বেশিরভাগটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বর্ষার আগে এই সময়টা নুন উৎপাদনের আদর্শ সময় ছিল। সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় লবণ ঘেরিগুলিতে লবণ উৎপাদন যেমন হচ্ছিল, তেমনি ফ্যাক্টরিতে মজুত ছিল বস্তা বস্তা লবণ। ঘেরির পর ঘেরি ডুবে গিয়ে এই শিল্পের প্রায় দফারফা হয়ে গিয়েছে। জলস্ফীতি এতটাই ছিল যে, লবণ ঘেরির ছ’ফুট উপর দিয়ে জল বয়ে গিয়েছে। এতে লবণ যেমন সাফ হয়ে গিয়েছে, আর লবণ ফ্যাক্টরিগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান, লবণ শিল্পে ক্ষতির পরিমাণ ছ’কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। আচমকা এই বিপুল বিপর্যয়ে লবণ ঘেরির মালিকদের মাথায় হাত। পাশাপাশি কর্মহীন হলেন বহু মানুষ। কীভাবে এই বিপুল ক্ষতির বহর সামাল দিয়ে তাঁরা ঘুরে দাঁড়াবেন তা কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। লবণ আইন অমান্য আন্দোলনের অন্যতম পীঠস্থান কাঁথির পিছাবনি। আর সেই পিছাবনি সংলগ্ন রামনগর বিধানসভার বাইসা থেকে চৌদ্দমাইল পর্যন্ত লবণ শিল্পের খাসতালুক।
প্রসঙ্গত, রামনগর এলাকায় মৎস্য ও পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিকাশ ও কর্মসংস্থানের বড় উপায় এই লবণ শিল্প। সমুদ্রতীরবর্তী বাইসা থেকে চোদ্দমাইল পর্যন্ত আড়াই হাজার একর জায়গা জুড়ে লবণ চাষ হয়। রামনগরের কালিন্দী, সটিলাপুর ও তালগাছাড়ি-২-এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিঘার পর বিঘা এলাকা জুড়ে লবণ চাষ হয়। সব মিলিয়ে মোট ৩৯টি লবণ ফ্যাক্টরি আছে। কেউ সরকারি জায়গা লিজে নিয়ে লবণ চাষ করেন, কেউ ব্যক্তিগত জায়গায় লবণ চাষ করেন। শুধুই লবণ ঘেরির মালিক নন, এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত বহু মানুষ। গাড়ি লোড করা, ঝুড়িতে লবণ বওয়া সহ নানা আনুষঙ্গিক কাজে প্রচুর শ্রমিক লাগে। সব মিলিয়ে লবণ শিল্পের উপর দু’ থেকে আড়াই হাজার মানুষের রুটি-রুজি নির্ভরশীল।
এই নুন জেলাব সর্বত্র সরবরাহ করা হয়। খাবারের নুন পশ্চিম মেদিনীপুরের জাহালদা, খাকুড়দা, মোহনপুর এলাকায় মুড়ি শিল্পের জন্যও সরবরাহ করা হয়। এছাড়া জেলার বিভিন্ন জায়গায় চিংড়ি চাষে ও বরফ কারখানায় ‘কর্কশ’ নুন কাজে লাগে। কালিন্দী-ডেরা সল্ট ম্যানুফ্যাকচারার সোসাইটি ১৪০ একর জায়গা সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে লবণ চাষ করেছিল। সবটাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সোসাইটির সম্পাদক মৃগেন্দুশেখর গায়েন বলেন, এখানে ১৩০জন শ্রমিক কাজ করতেন। নুন তো নষ্ট হলই, তাঁরাও কর্মহীন হয়ে পড়লেন।
কন্টাই সল্ট ম্যানুফাকচার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুবিমল দিন্দা ও সহ-সভাপতি পার্থসখা দে বলেন, এই ধরনের বিপর্যয় স্মরণকালের মধ্যে প্রথম। যা পরিস্থিতি, এই বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে বিপুল অঙ্কের সরকারি আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন। ইতিমধ্যে সমস্ত বিষয় সংশ্লিষ্ট মহলে জানানো হয়েছে। বিডিও বিপ্রতীম বসাক বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে দাবিপত্র পেশ করা হয়েছে। সমস্ত তথ্য উর্ধ্বতন মহলের কাছে পাঠানো হবে।