রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

যশের ক্ষয়ক্ষতির জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার ত্রাণ প্যাকেজের দাবি মুখ্যমন্ত্রীর

May 29, 2021 | 3 min read

আম্পানের পর একসঙ্গেই আকাশপথে ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এক বছর পর ঘূর্ণিঝড় যশের (Cyclone Yaas) সময় সেই ছবি দেখা গেল না। শুক্রবার আলাদা আলাদাভাবেই আকাশপথে পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন তাঁরা। তবে রাজ্যের ত্রাণ-প্যাকেজের দাবি এবং কেন্দ্রের ঘোষিত প্রাথমিক আর্থিক সাহায্যের ফারাকটা এবারও এক রয়ে গেল। শুক্রবার কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনা বৈঠকে রাজ্যের ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরে ২০ হাজার কোটি টাকার ত্রাণ প্যাকেজের দাবি জানান মুখ্যমন্ত্রী। পর্যালোচনা বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডের আপত্কালীন ত্রাণকার্যের জন্য সর্বসাকুল্যে ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেন। তবে একই খাতে ওড়িশা পাচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা।

প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ে মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা অর্থ সাহায্যের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় অর্থ কমিশনের কাছে বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের সুপারিশ করা হবে। এসবের মধ্যেই এদিন নরেন্দ্র মোদির পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর আসা নিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হল। দীর্ঘক্ষণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এয়ারবেসে বসিয়ে রাখারও অভিযোগ ওঠে। কলাইকুন্ডায় থেকে তাঁর দীঘায় প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তাই শেষপর্যন্ত সামান্য সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে রাজ্যের ক্ষয়ক্ষতির হিসেব তুলে দেন মমতা।

এদিন সকালে ওড়িশার ভদ্রক এবং বালেশ্বর, পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকাগুলি আকাশপথে পরিদর্শন করেন নরেন্দ্র মোদি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য। মাঝপথে ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠক সারেন মোদি। দুপুরে তিনি এসে নামেন খড়্গপুরের কাছে কলাইকুন্ডা বায়ুসেনা ঘাঁটিতে। সেখানেই রাজ্যের পর্যালোচনা বৈঠকটি হয়। তবে নির্ধারিত সূচি মেনে সকালেই উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পর প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন সূত্রে খবর, সাগরের বৈঠক শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানো হয়, আপনার হেলিকপ্টার নির্দিষ্ট সময়ের ২০ মিনিট পরে উড়বে। এমনকী, কলাইকুন্ডায় নামার আগেও তাঁর হেলিকপ্টারকে ১৫ মিনিট আকাশে চক্কর কাটতে হয়।

অবতরণের পর রিভিউ মিটিং চলছে জানিয়ে এয়ারবেসে বসিয়ে রাখা হয় তাঁকে। ততক্ষণে আবহাওয়াও খারাপ হতে শুরু করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপেক্ষা করতে আপত্তি জানালে উপস্থিত পিএমও আধিকারিকরা বলেন, এখন প্রধানমন্ত্রী রিভিউ মিটিং করছেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হবে। তারও খানিক পর মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে বৈঠকে প্রবেশ করেন মমতা। সেখানে সৌজন্য বিনিময়ের পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর হাতে ১৪ পাতার একটি রিপোর্ট তুলে দেন। ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরেন। রিপোর্টে সুন্দরবন এবং দীঘার মাস্টারপ্ল্যানের কথাও তুলে ধরা হয়েছে তাতে। দু’টি ক্ষেত্রেই ১০ হাজার কোটি টাকা করে ব্যয় হবে। এরপর দীঘার বৈঠকের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে ফিরে আসেন মমতা।

এদিনের তিনটি প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোর দিয়েছেন ত্রাণকার্যে। সাফ জানিয়েছেন, ত্রাণ শিবিরে হোক বা অন্যত্র, ত্রাণের ক্ষেত্রে বঞ্চনা বা গাফিলতি করা চলবে না। কোনও অভিযোগ যেন না আসে। বেবিফুড, গর্ভবতী মায়ের পুষ্টির দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। দ্রুত নোনাজল সরিয়ে কৃষি জমিকে চাষযোগ্য করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। প্রথমে হিঙ্গলগঞ্জে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়, জেলায় এক লক্ষ বাড়ি, ৪০ হাজার হেক্টর চাষের জমি, ১৬০০ কিমি রাস্তা, ৭ হাজার হেক্টর মাছ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতির মুখে পড়েছেন এক লক্ষ কৃষক। ৫৫টি জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে। জেলার সন্দেশখালিতে একটি জায়গায় ত্রাণ বিলি নিয়ে অভিযোগ কানে আসার কথা জানান মমতা। সেই কারণে জেলার চার মহকুমায় চারজন নোডাল অফিসারকে ত্রাণবিলির দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

সাগরের বৈঠকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক মুখ্যমন্ত্রীর সামনে বাঁধ, কাঁচা বাড়ি, চাষযোগ্য জমিতে লবণাক্ত জল ঢুকে পড়ার কথা জানান। উত্তরে মমতা বলেন, যতদিন না জল নামছে, ততদিন মানুষ যেন ত্রাণে খাবার, জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা পায়। কেউ অতিরিক্ত ত্রিপল চাইলে, তা যেন দেওয়া হয়। চাষের জমির অবস্থা যত দ্রুত সম্ভব ঠিক করার নির্দেশও দেন  তিন। একই সঙ্গে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন মমতা। খোঁজ নেন ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানোর বিষয়টি নিয়েও। করোনা আক্রান্ত হওয়ায় এদিন দীঘার বৈঠকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি। তিনি জানান, ৭২ কিমি সেচ বাঁধ, ৬০ হাজার হেক্টর কৃষি জমি, ১৮০ কিমি রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলিকে পথশ্রী প্রকল্পের আওতায় আনার কথা বলেছেন মমতা। এদিন তিনি দীঘা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান করেছেন মুখ্যসচিবকে। তাঁর কাধেই দীঘা মাস্টারপ্ল্যান তৈরির দায়িত্বও দিয়েছেন। আজ, শনিবারও আকাশপথে পূর্ব মেদিনীপুরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#yaas cyclone, #Mamata Banerjee

আরো দেখুন