২ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া, ২.২১ লক্ষ হেক্টর কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত, নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী
দুর্যোগ কাটলেও ‘যশ’- (Yaas) এর ক্ষত এখনও টাটকা। উপকূলকের দুই জেলায় বহু মানুষ এখনও ঘরছাড়া। লন্ডভন্ড বাঙালির পছন্দের পর্যটনস্থান দিঘা। কীভাবে নতুন করে সাজানো হবে দিঘা? সোমবার নবান্নে সেই বিষয়েই আলোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata banerjee)। তুলে ধরলেন ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতির সর্বশেষ খতিয়ান।
এদিন নবান্ন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি নিজে পূর্ব মেদিনীপুরে গিয়ে দেখেছি, নন্দীগ্রাম-খেজুরির কার্যত পুরোটাই জলের নিচে। দিঘা মোহনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মোহনার যেখানে পাথরে পর্যটকরা বসে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতেন সেখানে থাকা পাথর উড়ে গিয়েছে। দিঘায় দীর্ঘদিন ধরে একটা ব্রিজের কাজ চলছে। ওটা দ্রুত শেষ করতে হবে।’
মুখ্যমন্ত্রী জানান, ক্ষতিগ্রস্ত দিঘা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি দেখেছেন, পুরোন কংক্রিটে নতুন করে পাথর পাতা হয়েছিল, অর্থাৎ আগে কাজের পদ্ধতি ভুল ছিল, এমনটাই বলেন তিনি। পাশাপাশি, কীভাবে অল্প খরচে পরিকল্পনামাফিক কাজ করে দিঘার সৌন্দর্য ফিরিয়ে দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন। এদিনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে মৎস্যজীবীদের পাশে থাকার কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘এই ঝড়ে সব থেকে ক্ষতি হয়েছে মৎস্যজীবীদের। ওদের দেখে নিতে হবে। অনেকের বোট হারিয়েছে। দেখতে হবে।’
স্বর্ণ মৎস্য প্রকল্পের কথা বলেন। মাছ চাষে রাজ্য অনেকটাই এগিয়ে, জানান তিনি। দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে নীতি আয়োগের কাছে ত্রাণ শিবিরের জন্য টাকার আবেদন করবেন বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন,‘‘অনেক ইট ভাটা জলে ডুবে গিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি ঠিক করার কাজে এই কর্মীদের কাজে লাগানো যেতে পারে’’, পঞ্চায়েত দফতরকে নির্দেশ দিন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি ভাঙলে তা সামর্থ মতো সারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে সরকার। তবে আমরা গরিবের সরকার। কেন্দ্রের কাছ থেকে সেরকম টাকা পাই না। তাই ক্ষমতা অনুযায়ী সাহায্য করা হবে।’’
দুয়ারে ত্রাণ প্রকল্প কিন্তু দুয়ারে সরকারের মতো সব ব্লকে হবে না বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সব ব্লকে তো সমস্যা হয়নি। যে যে জায়গায় ইয়াসের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যে সব জায়গায় টর্নোডোর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যে সব ব্লকে জল ঢুকে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই সব ব্লকেই কিন্তু দুয়ারে ত্রাণ-এর শিবির হবে।’’
উল্লেখ্য, এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জেলাশাসকদের থেকে শেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যশের তাণ্ডবে ২০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। ২ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া। তাঁরা ক্যাম্পে রয়েছে। ১২০০ ক্যাম্প চলছে। পাশাপাশি মেরামতির কাজও শুরু হয়েছে। ২.২১ লক্ষ হেক্টর কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩২৯ টি বাঁধ মেরামতির কাজ চলছে।
আবেদন পত্র নিয়ে সতর্ক হতে বলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এক সঙ্গে অনেক আবেদন করে যা খুশি তাই লিখে দেওয়া যাবে না। নিজে আবেদন করবেন। ড্রপ বক্সে আবেদন পত্র জমা দেবেন। শহরাঞ্চলে এসডিও অফিস এবং গ্রামাঞ্চলগুলিতে বিডিও অফিসে ত্রাণের আবেদন জমা দিতে হবে।’’