ঝাউবন ও বালিয়াড়ি থাকলে রক্ষা পেত দীঘা, মত বিশষজ্ঞদের
ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’-এর ধাক্কায় কাঁথি উপকূলের দীঘা থেকে খেজুরি পর্যন্ত ৩২২ হেক্টর এলাকাজুড়ে বনাঞ্চলের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। যেখানে যেখানে ঝাউবন আর ম্যানগ্রোভ অরণ্য রয়েছে, সেখানে উপকূলভাগের জনপদ কিংবা সমুদ্রবাঁধ অনেকটাই বিপর্যয় আর ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আর দীঘা সহ যে সমস্ত জায়গায় ঝাউবনের একপ্রকার অস্তিত্বই নেই, সেখানে বিপর্যয় চূড়ান্ত আকার নিয়েছে। এখন উপকূল এলাকার বাসিন্দা থেকে শুরু করে পরিবেশবিদ সকলে একটাই কথা বলছেন, যদি উপকূলজুড়ে যথেষ্ট পরিমাণ ঝাউগাছ আর ম্যানগ্রোভ অরণ্য থাকত, তাহলে হয়তো এই ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের হাত থেকে উপকূলভাগ অনেকটাই রক্ষা পেয়ে যেত। জেলা বন আধিকারিক অনুপম খান বলেন, এই বিপর্যয়ের পর আমরা উপকূল এলাকায় প্রচুর ঝাউ সহ অন্যান্য গাছ লাগানো এবং ম্যানগ্রোভ অরণ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়েছি।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী, ‘যশ’-এর দাপটে উপকূলে ১১ হাজার ৫০০টি ঝাউ সহ অন্যান্য গাছ উপড়ে গিয়েছে কিংবা ভেঙে পড়েছে। ১৩০ হেক্টরের কাছাকাছি ম্যানগ্রোভ অরণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নোনাজল ঢুকে পাঁচ থেকে ছ’ লক্ষ নার্সারির চারাগাছ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন বিট অফিসে স্টাফ কোয়ার্টার এবং অফিসঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডিপোগুলিতে যে বড় বড় কাঠের গুঁড়ি মজুত থাকে, সেগুলি বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। অনেক কাঠের গুঁড়িরই হদিশ পাওয়া যায়নি। এছাড়া আরও অন্যান্য ক্ষতি তো হয়েছেই।
পরিবেশবিদ দেবাশিস শ্যামল বলেন, দীঘা থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপকূল এলাকায় সিআরজেড আইনের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করেই দিনের পর দিন নির্বিচারে ঝাউবন নিধন করে হোটেল, লজ, বাড়ি, রাস্তাঘাট তৈরি হয়েছে। দীঘার উন্নয়ন করতে গিয়ে বিরাট এলাকা জুড়ে ঝাউবন ধ্বংস করা হয়েছে। আর তার পরিণাম স্বরূপই দীঘায় এই ভয়ঙ্কর বিপর্যয় হল। শুধু তাই নয়, উপকূল এলাকায় একের পর এক বালিয়াড়ি ধ্বংস করা হয়েছে।জেলা বন আধিকারিক বলেন, ঝাউগাছ মূলত ‘কোস্টাল শেল্টার বেল্ট’ হিসেবে কাজ করে। ঝোড়ো হাওয়া প্রতিরোধ করে। বালিকে ধরে রাখে। উপকূলের মাটিকে আঁকড়ে রাখে এবং ভাঙন রোধ করে। আর ম্যানগ্রোভ অরণ্য উপকূলের মাটিকে ধরে রাখে। জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধ করে, সমুদ্রবাঁধের ক্ষতি আটকায়। এসব কারণেই সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ঝাউগাছ লাগানো এবং ম্যানগ্রোভ অরণ্য সৃষ্টির উপর এত জোর দেওয়া হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, কাঁথির কানাইচট্টা, জুনপুট, রামনগরের শঙ্করপুর প্রভৃতি যে সমস্ত এলাকায় ঝাউবন এবং ম্যানগ্রোভ অরণ্য রয়েছে, সেখানে কিন্তু তুলনায় কম ক্ষতি হয়েছে। আবার নিউ দীঘার যাত্রানালা, ওসিয়ানা উপকূল এলাকায় যেখানে ঝাউবন রয়েছে, সেখানে খুব একটা ক্ষতি হয়নি।