কৃষকদের বিমার টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু রাজ্যে
রাজ্যের কৃষকদের বিনা খরচে শস্যবিমার আওতায় নিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিমার ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণের কাজ করছে সংশ্লিষ্ট কৃষিবিমা সংস্থা। সবকিছু ঠিকঠাক চললে এক মাস পর থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হতে পারে। উপগ্রহ চিত্রের সাহায্যে এখন দ্রুত ও নিখুঁতভাবে ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়। গত বছরের খরিফ মরশুমে রাজ্যে বড় ধরনের কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়নি। তা সত্ত্বেও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্যান্য কারণে হওয়া ফসলের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১১৩ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে বিমা সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে। এর মধ্যে ৮০ কোটি টাকা ইতিমধ্যে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে গিয়েছে। প্রসঙ্গত কোনও বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে সরকারি তরফে যে বিশেষ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, বিমা থেকে পাওয়া টাকার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। একজন কৃষক দু’টি জায়গা থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে পারেন। বাংলা শস্যবিমা প্রকল্পে কৃষককে প্রিমিয়ামের কোনও টাকা দিতে হয় না। পুরো টাকা রাজ্য সরকার দিয়ে থাকে। খরিফ এবং বোরো-রবি মরশুমে যত বেশি সম্ভব কৃষককে শস্যবিমার আওতায় আনতে বিশেষ উদ্যেগে নিয়েছিল রাজ্য। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নথিভুক্ত সব কৃষককে সরাসরি শস্যবিমার আওতায় আনা হয়েছিল গত বছর। তাঁদের আলদা করে আবেদন করতে হয়নি। ফলে গত খরিফ মরশুমে ৬৫ লক্ষের বেশি কৃষক শস্যবিমার আওতায় ছিলেন। এবারে বোরো এবং রবি চাষে প্রায় ৫৫ লক্ষ কৃষক শস্যবিমা প্রকল্পের আওতায় আছেন বলে জানা গিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় যশের (Cyclone Yaas) জন্য রাজ্যের অনেকগুলি জেলায় চাষবাসের ক্ষতি হয়েছে। রাজ্য কৃষিদপ্তরের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষিবিমা সংস্থাকে জানানো হয়েছে, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম প্রভৃতি জেলায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। মালদহ সহ কয়েকটি জেলায় অতিবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বাংলা শস্যবিমা প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কৃষিবিমা সংস্থার আধিকারিক সৌরভ গুপ্তা জানিয়েছেন, বিমার আওতায় থাকা ফসলের মধ্যে তিল, বাদাম, মুগ প্রভৃতির বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে। মালদহ জেলাতে ভুট্টার ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য ফসলের কোনও ক্ষতি হয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের কাজ দু’ভাবে হয়। বিমা সংস্থার প্রতিনিধিরা মাঠে গিয়ে ফসলের ক্ষতির ছবি তুলছেন। পাশাপাশি উপগ্রহের সাহায্যে মহাকাশ থেকে জমির ছবি তোলা হচ্ছে। এসব ছবি পর্যালোচনা করে ক্ষতির মাত্রা নির্ধারিত হবে। তার ভিত্তিতেই ক্ষতিপুরণ ঠিক করা হবে। রবি ফসলের ক্ষেত্রে ব্লক ভিত্তিতে ক্ষতির মাত্রা ঠিক করা হয়। খরিফ ফসল বিশেষ করে ধানের ক্ষেত্রে যা হয়, গ্রাম পঞ্চায়েত ভিত্তিতে। কতটা ক্ষতি হয়েছে, তার উপর নির্ভর করে মোট বিমা রাশির কত শতাংশ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
রবি-বোরো মরশুমে যে সব ফসলের উপর বাংলা শস্যবিমা প্রকল্পটি কার্যকর ছিল, তার মধ্যে বোরো ধান, গম, আলু, ভুট্টা, ছোলা, মুগ, মসুর বাদাম, তিল, সরষে, আখ ছিল। বিমা সংস্থা প্রাথমিকভাবে মনে করছে, ঘূর্ণিঝড় আসার আগে বোরো ধানের বেশির ভাগটাই তুলে ফেলা হয়েছিল। তা হলেও কোনও ব্লকে বোরোধানের ব্যাপক ক্ষতি হলেও ক্ষতিপূরণ মিলবে।