কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

সিবিআইয়ের ‘রাজনৈতিক’ পদক্ষেপের বিরুদ্ধেই মুখ্যমন্ত্রীর ১৭ মের প্রতিক্রিয়া, সওয়াল

June 8, 2021 | 2 min read

নারদ মামলায় হওয়া রাজনৈতিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্যরা ১৭ মে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। সেই প্রতিক্রিয়া মোটেই আদালতের বিরুদ্ধে নয়, ছিল সিবিআই-এর প্রতি। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে নারদ মামলায় (Narada Case) অভিযুক্তদের তরফে এমনই দাবি করে এও বলা হল যে, আদালতে রাজ্যের আইনমন্ত্রীর উপস্থিতি একইসঙ্গে আদালতের প্রতি আস্থা ও সহকর্মীদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছে।

বিশেষ সিবিআই (CBI) আদালতে বিচারাধীন নারদ মামলা অন্য আদালতে স্থানান্তরের জন্য সিবিআই-এর আবেদন শুনছে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। অভিযুক্ত ও ধৃত সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে এই বেঞ্চই সম্প্রতি অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেছে। সিবিআই সওয়ালের জবাবে অভিযুক্তদের তরফে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি’র এদিন দাবি করেন, যদি জনতার উপলব্ধির তত্ত্ব গৃহীত হয়, তাহলে আদালতের যেকোনও রায়কেই একইভাবে খারিজ করার দাবি আসবে। ঘোড়াকে লাগাম পরানো যাবে না। তিনি মনে করেন, জামিন দেওয়ার সময় তিনটি বিষয় দেখা হয়, তথ্যপ্রমাণ লোপাট, পালিয়ে যাওয়া ও তদন্তে অসহযোগিতার সম্ভাবনা। এমন সম্ভাবনা না থাকলে আদালত জামিন মঞ্জুর করতে পারে। সেটাই স্বাভাবিক। তিনি জানান, ধৃতদের মধ্যে একজন ২০১১ সাল থেকে মন্ত্রী। আরেক জন ৫০ বছর ধরে বিধায়ক। এমন মানুষ পালিয়ে যেতে পারেন? এঁরাই এক বছর আগে সিবিআই-এর দাবি মতো কন্ঠস্বরের নমুনা দিয়েছেন। আর তাঁদেরই ভোট মিটতেই গ্রেপ্তার করা যায়? বিশেষত যেখানে মামলার তদন্তকারী অফিসার লিখিতভাবে জানিয়েছেন যে, এই অভিযুক্তদের ব্যাপারে তদন্ত করা হয়েছে।

বেঞ্চ জানায়, মেরিটের ভিত্তিতে নয়, বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হওয়া পরিবেশ ও পরিস্থিতির জন্য সেদিনের শুনানি বাতিলযোগ্য বলে দাবি করেছে সিবিআই। জবাবে ওই আইনজীবী দাবি করেন, সিবিআই-এর যাবতীয় যুক্তি অসার। বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের জিজ্ঞাসা, যদি বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হয়, তাকে ‘মোবোক্রেসি’ বলা যায় না। উত্তেজিত জনতা যখন চূড়ান্ত বেআইনি পদক্ষেপ করে, তখনই ওই শব্দটি ব্যবহার করা যায়। তাই মূল প্রশ্ন হল, সেদিন কি সত্যই মোবোক্রেসি দেখা গিয়েছিল? সিংভি’র মতে, বাকি সব বিষয় ছেড়ে সবকিছুই মোবোক্রেসির তলায় সিবিআই চাপা দিতে চাইছে। কিন্তু, এই তথাকথিত মোবোক্রেসি সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই। সহকর্মীদের প্রতি সেদিন অন্য বিধায়করা সহমর্মিতা দেখিয়েছিলেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, আইনমন্ত্রী কি নিয়মিত আদালতে যান? সেদিন কেন গিয়েছিলেন? তাঁর জিজ্ঞাসা, সেই বিক্ষোভ সাধারণ মানুষের নয়, ছিল সাংবিধানিক পদাধিকারীদের। সেটা কিন্তু মনে রাখতে হবে। কিন্তু, সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়া বা চিহ্ন সিবিআই আদালতের রায়ে নেই।

সিংভি’র এমন সওয়ালের জেরে বেঞ্চ জানতে চায়, এমন কোনও রায় কি দেখা যায়, যেখানে বিচারক এমন কথা নথিভুক্ত করেছেন? সিংভি দাবি করেন, এমন বহু রায় আছে। তিনি এমনও দাবি করেন, যখন ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা স্পষ্টতই দূষণ সৃষ্টি করছে, সেখানে বিক্ষোভকারীরা মন্ত্রী না মুখ্যমন্ত্রী, তা অবান্তর। দেখতে হবে, সেদিন আদালত চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছিল কি না। বেঞ্চের পাল্টা বক্তব্য, সিবিআই সওয়াল অনুযায়ী বিক্ষোভের সরাসরি প্রভাব নয়, সাধারণ মানুষের ধারণা, এর ফলে বিচারব্যবস্থা প্রভাবিত হয়েছে। সিংভি’র প্রশ্ন, এই ধারণার মূল্যায়ন কি আদালত করতে পারে? মঙ্গলবার মামলার পরবর্তী শুনানি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#calcutta high court, #CBI, #narada case

আরো দেখুন