দেশ বিভাগে ফিরে যান

টিকার প্রথম ডোজেই ১০০ শতাংশ ইমিউনিটি করোনাজয়ীদের, বলছে গবেষণা

June 9, 2021 | 2 min read

করোনা অস্ত্রেই করোনা বধ। নেচার পত্রিকা এবং কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের সাম্প্রতিক দুই সমীক্ষা প্রকাশ্যে আসার পর এটাই আপাতত কোভিডজয়ীদের ক্যাচলাইন। একবার সংক্রামিত হলে মানব শরীরে করোনা ভাইরাসের (Covid 19) বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা চলে আসবে, এটা স্বাভাবিক। অর্থাৎ, আক্রান্ত হওয়া মানে প্রকৃতপক্ষে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়া। তারপর টিকার প্রথম ডোজ আসলে তাঁদের কাছে দ্বিতীয় বা বুস্টার ডোজ। আর তাতেই সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছয় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, যা থাকবে প্রায় আজীবন। মানে এতদিন যে রোগকে ‘শাপ’ বলে অভিহিত করা হচ্ছিল, আদতে সেটাই ‘বর’ হয়ে দেখা দিচ্ছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ অজয় চক্রবর্তীও জানিয়েছেন, ‘করোনা হলে মুষড়ে পড়ার কারণ নেই। উল্টে করোনাজয়ীরা টিকা নিলে শারীরিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকবেন।’

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সংক্রমণ শুরু হলে শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয়। এরা অনুপ্রবেশকারী ভাইরাসকে পর্যুদস্ত করে রোগমুক্তি ঘটায় সেই অ্যান্টিবডি। কিন্তু লড়াই শেষ হলেই তা বিলুপ্ত হতে থাকে। তখন শরীরের অপর অংশে কাজ শুরু করে একদল অতন্দ্র প্রহরী, যার পোশাকি নাম ‘বোন ম্যারো প্লাজমা সেল’ (বিএমপিসি)। এদের বিশেষ গুণ, স্মৃতিশক্তি। সাধারণত ৯০ দিন পর্যন্ত অস্থিমজ্জায় থেকে যায় বিএমপিসি। তারপর ক্রমশ কমতে থাকে। কিন্তু গত মে মাসে বিশ্বখ্যাত ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র করোনার ক্ষেত্রে এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-সেল ইমিউনোলজিস্ট গবেষক আলি এলেবেডি ও তাঁর দল একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। তাতে দেখা যাচ্ছে, আক্রান্ত হওয়ার ১১ মাস পরেও করোনাজয়ীদের শরীরে অ্যান্টিবডি রীতিমতো সক্রিয়। শুধু তাই নয়, সেগুলি করোনার স্পাইক প্রোটিন বা বাইরের কাঁটা অংশের মূলবস্তুকেও শনাক্ত করতে পারছে।

মাঝারি মাপের সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা ৭৭ জনের উপর এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। গবেষকদের দাবি, ১৮ জনের মধ্যে ১৫ জনের ক্ষেত্রে সংক্রমণের সাত মাস পরেও ‘সার্স কোভ-২’ শনাক্ত করছে বিএমপিসি। সাত-আট মাসে এই কোষগুলির সংখ্যা কিছুটা কমেছে, এটা ঠিক। কিন্তু আরও কয়েকমাস পরে অন্তত পাঁচজনের মধ্যে সেই সংখ্যা আট মাসের পুরনো অবস্থানেই থাকতে দেখা যাচ্ছে। রাজ্যের ইমিউনোহেপাটোলজি বিভাগের ফ্যাকাল্টি ডাঃ বিপ্লবেন্দু তালুকদার জানাচ্ছেন, ‘এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ। কিন্তু নিশ্চিত তথ্যের জন্য আরও সময় ধরে পর্যবেক্ষণ দরকার।’ পিজির ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডাঃ মনোতোষ সূত্রধরের আবার বক্তব্য, ‘এধরনের ঘটনা পক্স ভাইরাসের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে। যেখানে প্রথমবার আক্রান্ত হলে দ্বিতীয় সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ কম। কিন্তু জরুরি বিষয় হচ্ছে বিপিএমএসের পরিমাণ নির্দিষ্ট রাখা। আর তার জন্য প্রয়োজন টিকার বুস্টার ডোজ।’

সোমবারই সামনে আসা কোভিশিল্ড নিয়ে কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের এক গবেষণা মনোতোষবাবুর বক্তব্যকেই মান্যতা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থার অধীনস্থ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজির অন্যতম বিজ্ঞানী ডাঃ দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ‘সাধারণভাবে টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার ১৪ দিন পর যে কোনও মানুষই ৩০-৩৫ শতাংশ প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী হন। কিন্তু তিনি যদি করোনাজয়ী হন, টিকার প্রথম ডোজই আসলে তাঁর কাছে বুস্টার ডোজ। প্রথম ডোজ নেওয়ার ১৪ দিন পর তাঁদের অধিকাংশেরই করোনা-প্রতিরোধী ক্ষমতা ১০০ শতাংশে পৌঁছচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করোনার আরবিপি এবং এসিই২ রিসেপ্টরকে সম্পূর্ণভাবে আটকে দিচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ইমিউনোলজি পরিভাষায় একে নিউট্রিলাইজেশন পরীক্ষা বলা হয়।’ যে কোনও ভ্যাকসিনের (Vaccine) ক্ষেত্রেই এই ফল বজায় থাকবে বলেই তাঁর দাবি। তাহলে কি করোনাজয়ীরা দ্বিতীয় ডোজের প্রয়োজন নেই? দীপ্যমানবাবু সাফ উত্তর, ‘করোনাজয়ীরা টিকা নিন কোভিড জয়ের নিদেনপক্ষে তিন মাস পরে। কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক নির্দেশ আমার যুক্তিগ্রাহ্যই মনে হচ্ছে।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#corona vaccine, #corona warriors

আরো দেখুন