শিথিল হতে পারে বিধিনিষেধ, তুঙ্গে সৈকত শহরের বুকিং
করোনার (Covid19) কারণে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত বিধিনিষেধের বেড়াজালে বন্দি গোটা রাজ্য। কার্যত লকডাউনে (Lock Down) বহু মানুষ গৃহবন্দি। একঘেয়ে জীবনে ক্লান্ত হয়ে অনেকেই হাওয়াবদলের ইচ্ছাপ্রকাশ করছেন। প্রশাসনিক কড়াকড়ি উঠলে কাছেপিঠে কোথাও বেড়াতে যেতে চান তাঁরা। সেক্ষেত্রে তাঁদের প্রথম পছন্দ দীঘা ও মন্দারমণি। সেখানকার হোটেল ব্যবসায়ীরাই বলছেন, যেভাবে মানুষ সমুদ্রের তীরে ঘুরতে আসার জন্য খোঁজখবর শুরু করেছেন, তাতে আশা করা যাচ্ছে, নিয়ম শিথিল হলেই তাঁরা বাড়ির বাইরে পা বাড়াবেন।
ঘূর্ণিঝড় যশ এবং কোটালের জলোচ্ছ্বাসে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে মন্দারমণির। সমুদ্র লাগোয়া হোটেলগুলির বেশিরভাগই ভেঙে তছনছ। দীঘার অবস্থা ততটা খারাপ না হলেও, সেখানে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই। বাঙালির প্রিয় বেড়ানোর জায়গা শঙ্করপুর-দীঘা-মন্দারমণি-তাজপুরে পর্যটকদের পা পড়েনি অনেকদিন। করোনার প্রথম ঢেউ কাটিয়ে যাঁরা সাহস করে বেরিয়ে পড়েছিলেন, তাঁদের দৌলতে কিছুটা ব্যবসা করতে পেরেছিল এখানকার হোটেল বা সৈকতাবাসগুলি। কিন্তু, দ্বিতীয় ঢেউ এসে লোপাট করে দিয়েছে আয়ের পথ। গত কয়েক মাস শুনশান সমুদ্র সৈকত। পর্যটক না আসায় কাজ জোটেনি হাজার হাজার হোটেল কর্মীর। সেখানে মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো থাবা বসিয়েছে যশ। কিন্তু সেই বিপর্যয় কাটিয়ে এবার নতুন করে লক্ষ্মীলাভের আশায় বুক বাঁধছেন হোটেল মালিকরা।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর সার্ভিস প্রোভাইডার্স অব বেঙ্গলের ভাইস প্রেসিডেন্ট সমর ঘোষ বলেন, ‘সমুদ্র লাগোয়া যে সব হোটেল মালিকদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে, তাঁদের প্রত্যেকেই জানাচ্ছেন, বহু মানুষ খোঁজ নিচ্ছেন বেড়াতে আসার ব্যাপারে। মন্দারমণিতে আমার হোটেলেও ঘূর্ণিঝড় ও কোটালে বিরাট ক্ষতি হয়েছে। সেসব সারাইয়ের কাজে হাত লাগিয়েছি সবে। কিন্তু তার মধ্যে অন্তত এক হাজার ফোন পেয়েছি পর্যটকদের থেকে। তাঁরা ১৫ তারিখের পরেই আসতে চান এখানে।’ সমরবাবুর মতোই অভিজ্ঞতা দীঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তীর। তিনি বলেন, যে রকম সাড়া পাচ্ছি পর্যটকদের থেকে, তাতে আগামী ১৬-১৭ তারিখেই দীঘায় পর্যটক উপচে পড়ার কথা।
কেন এত মানুষ সমুদ্রে আসতে চাইছেন? বিপ্রদাসবাবুর মতে, বাঙালির এই প্রিয় জায়গায় কীভাবে ধ্বংসলীলা চলেছে, কীভাবে নোনা জলে ভেসে গিয়েছে পরিচিত জায়গাগুলি—টিভিতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বা খবরের কাগজে তা দেখেছেন সাধারণ মানুষ। তাঁরা একবার সেই জায়গাগুলি চাক্ষুষ করতে চান। দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকার পর মানুষ তাই এবার পৌঁছতে চান তাঁদের প্রিয় সমুদ্র সৈকতে। তিনি জানিয়েছেন, প্রশাসন দারুণ তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছে। ফের কোটাল আসার আগে সবাইকে সচেতন করা থেকে শুরু করে যেটুকু প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ দরকার, সবই করা হচ্ছে।
কিন্তু পর্যটকরা চাইলেই কি তাঁদের ঠাঁই দেওয়ার মতো অবস্থা দীঘা বা মন্দারমণির আছে? হোটেল মালিকরা বলছেন, পুরো এলাকা নষ্ট হয়নি। তাই পর্যটকরা এখানে এসে বিপাকে পড়বেন না। তাঁদের আতিথেয়তার জন্য মোটামুটি প্রস্তুতি রেখেছেন তাঁরা। রাজ্য সরকার যদি হোটেল খোলার বিষয়ে নিয়ম শিথিল করে এবং পর্যটকদের আসার অনুমতি দেয়, তাহলে ফের শীঘ্রই সরগরম হবে বেলাভূমি।