মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, সাধারণ মানুষ হিসেবেই সিবিআই দপ্তরে গিয়েছিলেন, আদালতকে জানালেন মমতা
ধরনায় বসতে বা কোনও জমায়েতের জন্য নয়, বিধানসভার সব চেয়ে বর্ষীয়ান বিধায়ক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে গত ১৭ মে তিনি নিজাম প্যালেসে সিবিআই (CBI) অফিসে গিয়েছিলেন বলে কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। নারদ (Narada Case) সংক্রান্ত মামলায় বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর তরফে হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে হলফনামা জমা দেন আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী। আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের তরফেও ওই আইনজীবী হলফনামা জমা দিয়েছেন। যদিও সিবিআইয়ের বিশেষ কৌঁসুলি, সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা একপক্ষের অর্থাৎ সিবিআইয়ের সওয়াল শেষ হয়ে যাওয়ার এতদিন পর হলফনামা জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি জানান। তাতে প্রাথমিক সায় দেন বেঞ্চের দুই বিচারপতি।
নারদ মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে চার নেতা-মন্ত্রীকে গত ১৭ মে গ্রেপ্তারের দিন নিজাম প্যালেসে সিবিআই অফিসে ও ব্যাঙ্কশাল কোর্টে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে প্রভাবশালীদের ভিড় ও ধরনা দেওয়া এবং সিবিআইয়ের কাজে বাধা ও হুমকি দেওয়া-সহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সেই ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মলয় ঘটক ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে পৃথক পৃথক ভাবে মামলায় যুক্ত করে সিবিআই। তৃণমূলের সাংসদ-আইনজীবী কল্যাণ আগেই তাঁর হলফনামায় জানিয়েছিলেন, তিনি সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী হিসেবে সে দিন সেখানে গিয়েছিলেন।
এ দিন মমতা তাঁর হলফনামায় জানিয়েছেন, সে দিন সিবিআই দপ্তরে ঢোকার আগে তিনি আধা সামরিক বাহিনীর তিনটি নিরাপত্তার ধাপ পেরোন। ধৃতদের, বিশেষ করে নানাবিধ রোগের কারণে অসুস্থ, ৭৬ বছর বয়সী সুব্রত মুখোপ্যাধায়ের সঙ্গে দেখা করতে ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্যই তিনি সে দিন সিবিআই দপ্তরে গিয়েছিলেন বলে ১৬ পাতার হলফনামায় জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধে এজেসি বোস রোড আটকে লোকজন নিয়ে ধরনায় বসার যে অভিযোগ সিবিআই করেছে, তা উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। মমতার বক্তব্য, সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি যখন সেখানে যান, তখন রাস্তায় কোনও লোকজন ছিল না। তিনি নিজাম প্যালেসে সিবিআই অফিসে বসেছিলেন। ফলে, কোথাও লোকজন নিয়ে ধরনা দেওয়ার যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে করা হয়েছে, তা মিথ্যা বলে মমতা জানিয়েছেন। তা ছাড়া, মমতার বক্তব্য, ওই দিন তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নন, সাধারণ মানুষ হিসেবে সিবিআই অফিসে গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর হলফনামায় এটাও জানিয়েছেন, কী ভাবে ওই দিন কলকাতা পুলিশ সিবিআই-কে নিরাপত্তা দিয়েছিল।
আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের বিরুদ্ধে গত ১৭ মে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে গিয়ে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ তুলেছিল সিবিআই। জবাবে আইনমন্ত্রী তাঁর হলফনামায় জানিয়েছেন, সে দিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিসে তিনি গিয়েছিলেন বৈঠক করতে। সেই বৈঠকে সরকারি প্যানেলভুক্ত কয়েক জন আইনজীবীর সঙ্গেও তাঁর দেখা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনও ভাবেই সিবিআই কোর্ট বা ওই চত্বরে তিনি যাননি। প্রসঙ্গত, সিবিআইয়ের বিশেষ কোর্ট ব্যাঙ্কশাল আদালত চত্বরেই, তবে ওই আদালত লাগোয়া বিচার ভবনে। ফলে, প্রভাব খাটানোর যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে করা হচ্ছে, তার সবটাই মিথ্যা বলে মলয় জানিয়েছেন।
যদিও এ দিন মুখ্যমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর হলফনামা গ্রহণ করা নিয়ে আদালতে একপ্রস্ত বাদানুবাদ হয়। সিবিআই যেমন এই হলফনামা জমা করা নিয়ে আপত্তি জানায়, তেমন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলও বলেন, ‘একপক্ষ তাদের বক্তব্য শেষ করেছে। এই অবস্থায় হলফনামা জমা করার অনুমতি দেওয়া যায় না।’ বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ও মমতা ও মলয়ের আইনজীবীকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে মামলার শুনানি চলছে। শুনানির প্রথমেই হলফনামা জমা দেওয়ার জন্য সময় চেয়ে নিতে পারতেন।’
পাল্টা যুক্তি দিয়ে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আইনের সূত্র ধরে বলেন, শুনানির চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদিও তাতে আপত্তি জানায় বেঞ্চ। তখন অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, সিবিআই একটি ই-মেল করে দিল, তাকেই মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হলো, এমনকি জামিনের নির্দেশ স্থগিতও হয়ে গেল!
গত ১৭ মে নিজাম প্যালেসের বাইরে ঘটা ঘটনা নিয়ে হাইকোর্ট এ দিন সিবিআইয়ের কাছে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ তলব করে। সিবিআই তা জমা দিতে রাজি হয়েছে।